ডুবে যাওয়া ফেরিতে ছিলো ১৯ গাড়ি
সার্ভে সনদ হালনাগাদ ছিল না ফেরিটির
নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৭টি ট্রাক নিয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে শাহআমানত নামে একটি ফেরি এক পাশে কাঁত হয়ে ডুবে গেছে বলে জানা গেছে। বুধবার সকাল ৯টা ৩৪ মিনিটে ফেরিটি ডুবে যায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম জানান, তাদের দুটি টিম উদ্ধার কাজ করছে। ঢাকা থেকে আরও দুটি টিম ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যেই উদ্ধারকাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ইউনিট। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজাও পাটুরিয়ায় পৌঁছেছে।
বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা জানান, দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে ফেরিটি পাটুরিয়া পৌঁছানোর পরপরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ১৭টি ট্রাকসহ বেশ কিছু যাত্রী ছিলেন। দুই/তিনটি ট্রাক ফেরি থেকে নামার পরপরই ফেরিটি কাঁত হয়ে ডুবে যাওয়া শুরু করে। তিনি বলেন, আমরা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছি। আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধার করায় আমাদের প্রথম লক্ষ্য।
ফেরিতে থাকা একজন মোটরসাইকেল আরোহী দাবি করেন, ভেতরে বেশকিছু লোক রয়েছে। একজন হলেও মারা গেছেন। উনি নিজেও কোনোরকমে বেঁচে গেছেন। তবে এ পর্যন্ত হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ডুবে যাওয়া ফেরিতে ছিলো ১৯ গাড়ি : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ৫ নম্বর ফেরিঘাটে ডুবে যাওয়া রো রো আমানত শাহ ফেরিতে ছিলো ১৭ ট্রাকসহ ১৯ গাড়ি। বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পদ্মা নদীতে ফেরিটি ডুবে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন আরিচা শাখার উপমহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যানবাহন লোড করে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে নোঙর করে বড় আকারের রো রো ফেরি আমানত শাহ। ফেরি থেকে কয়েকটি গাড়ি নামার পরপরই এক পাশ কাত হয়ে ডুবে যায় ফেরিটি।
এরপর ১৯টি গাড়ি পদ্মায় পড়ে যায় বলে তথ্য পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। পদ্মায় পড়ে যাওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ট্রাক ছিলো। ছিল কয়েকটি ছোট গাড়িও। তবে কোনো বাস ছিলো না।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কেউ নিখোঁজ আছেন কি না তাৎক্ষণিকভাবে তাও জানা যায়নি। ফেরিটি ডোবার সময় অধিকাংশ যানের যাত্রী লাফিয়ে পড়েন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলছে। ঘটনাস্থলে কাজ করছে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা।
সার্ভে সনদ হালনাগাদ ছিল না শাহ আমানতের : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন নিয়ে ডুবে যাওয়া ফেরি শাহ আমানতের সার্ভে সনদ হালনাগাদ ছিল না। বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা ফেরি সেক্টরের এজিএম (মেরিন) আব্দুস সাত্তার এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে ফেরির মাস্টার শরিফুল ইসলাম লিটন জানান, চার মাস আগে ফেরিটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মেরামত শেষে পাটুরিয়ায় আসে। তবে সম্প্রতি তলদেশে একটি ফুটো তৈরি হয়।
তিনি আরও জানান, ফেরিটি বুধবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৭টি পণ্যবাহী ট্রাক ও ১৬টি মোটরসাইকেল নিয়ে পাটুরিয়া অভিমুখে রওনা দেয়। এর কিছু সময় পর তলদেশের ফুটো দিয়ে পানি উঠতে শুরু করে। কিন্তু তিনি যখন বিষয়টি টের পান তখন আর কিছু করার ছিল না।
বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে ফেরিটি ডুবে যাওয়ার পর এখনও কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ইউনিট উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। ফেরি উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামজা’ তৎপরতা শুরু করেছে। তবে ফেরি শাহ আমানতের যে ওজন তাতে কোনও কূল কিনারা পাবে না উদ্ধারকারী জাহাজটি। ডুবে যাওয়া ফেরির মোট ওজন ৪০০ টন। কিন্তু হামজার উদ্ধার সক্ষমতা মাত্র ৬০ টন।
প্রত্যক্ষদর্শী গাড়িচালকরা বলেন, সকাল পৌনে ১০টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটের ৫ নম্বর পন্টুনে ফেরিটি ডুবতে শুরু করে। ফেরিতে থাকা ১৭টি পণ্যবাহী ট্রাকের মধ্যে মাত্র তিনটি নামতে পারে। বাকি ১৪টি পণ্যবাহী ট্রাক ও মোটরসাইকেলসহ ফেরিটি পদ্মায় ডুবে যায়। যানবাহনের চালক ও সহকারীসহ অন্যরা সাঁতরে তীরে ওঠেন।