গুজব রটনাকারীদের ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী রাজনীতি স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : যারা গুজব ছড়ায় তাদের ধরিয়ে দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের বিশেষ জরুরি সভায় লন্ডন সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে দেশবাসীকে এ আহ্বান জানান। যারা দেশে গুজব ছড়াচ্ছে, মিথ্যা রটাচ্ছে তাদের ধরিয়ে দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে টেলিকনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। কেউ যদি অন্যায় করে তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজব ছড়িয়ে মানুষকে হত্যা করা বা পিটিয়ে মারা, এমনকি একটি মাকে মেরে ফেলা হলো, সেই শিশুটির কী অবস্থা হবে। তাই আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো আপনারা গুজবে কান দেবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যদি কোনো মানুষকে অপরাধী মনে হয় তাকে পিটিয়ে হত্যা করবেন না, তাকে পুলিশে সোপর্দ করুন, তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দয়া করে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। তিনি আরো বলেন, গুজব শুনে একটি নিরীহ মানুষকে হত্যা না করে যারা গুজব ছড়ায় তাদের অবশ্যই ধরিয়ে দিন। পত্রপত্রিকার কাছে অনুরোধ থাকবে, সত্য না জেনে আপনারা খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। দুধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হঠাৎ করে একটি মিডিয়া বলে দিলো দুধ ব্যবহারযোগ্য না, সেখান থেকে বলা হয় পাঁচ সপ্তাহ দুধ ব্যবহার করা যাবে না। আপনাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, গ্রামের মা-বোনদের খামার করতে উৎসাহী করেছি, গ্রামগুলোতে খামার করে দিয়েছি, খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি। মানুষকে খাদ্য পুষ্টি নিশ্চিত করেছি। দুধ পুষ্টিকর খাদ্য, দেশের ছেলেমেয়েরা এটি খেতে পারে এবং মানুষ যাতে দুধ ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। আমাদের খাদ্যদ্রব্য এবং রপ্তানিযোগ্য পণ্য যথাযথভাবে যাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় সেজন্য পরীক্ষাগার বিএসটিআই আছে। এটিকে আমরা উন্নতমানের করে দিয়েছি প্রত্যেকটি খাদ্যদ্রব্য পণ্য তা কী কী বিষয়ে পরীক্ষা করা হয়, তার আন্তর্জাতিক মানদ- আছে, সেই মানদ- অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয় এবং বাজারজাত করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশ থেকে যে গুঁড়া দুধ আমদানি করা হয়, জানি না যিনি দেশের দুধগুলো পরীক্ষা করেছেন, তিনি বিদেশি গরুর দুধগুলো পরীক্ষা করছেন কিনা। আমার মনে হয় তিনি করেননি। আমি তাকে সেগুলো কোথা থেকে আমদানি হচ্ছে, বাজারজাত হচ্ছে, কিভাবে প্যাকেট হচ্ছে, এগুলো একটু পরীক্ষা করার অনুরোধ জানাবো। আমরা আমদানি নির্ভর থাকতে চাই না, স্বনির্ভর হতে চাই, পরনির্ভরশীল থাকতে চাই না, সেজন্য মানুষকে উৎসাহিত করেছি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি আছে কিনা এটা দেখা উচিৎ। তারা কোনোভাবেই এটাকে উৎসাহিত করছে কিনা। আর যারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন তাদের এ বিষয়গুলো ভাবা উচিৎ। হঠাৎ করে কথা বলে গুজব ছড়িয়ে রপ্তানিখাতে সমস্যা সৃষ্টি করা দেশের মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করা, আতঙ্ক সৃষ্টি করা বা দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান সম্পর্কে কথা বললে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কাজেই সব বিষয়গুলোর তথ্য জেনেশুনে তারপর সে বিষয়ে কথা বলা উচিৎ। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে সক্রিয় হওয়ার এবং মশার বংশ বিস্তার রোধে বাড়ি, কর্মস্থল ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবাইকে আহ্বান করব, নিজের ঘরবাড়ি আশপাশের রাস্তাঘাট যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, সে ব্যপারে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সবাই যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে আমরা এখান থেকে রক্ষা পেতে পারব। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। জুলাইয়ের শেষে এসে তা রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা হয়ে উঠেছে সাধারণ নাগরিক থেকে সরকার- সবার উদ্বেগের কারণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় পৌনে ১৪ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে দেশের ৫০ জেলায় ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় আক্রান্তদের অনেকে ঢাকা থেকে রোগ নিয়ে গেছেন। তবে রাজধানীর বাইরেও এডিস মশার বিচরণ রয়েছে বলে স্থানীয় পর্যায়ে আক্রান্তের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ঢাকায় এডিস এজিপ্টাই মশাই প্রধানত ডেঙ্গুর বাহক; তবে ঢাকার বাইরে থাকা এডিস এলবোপিকটাস মশাও ডেঙ্গু রোগের বিস্তারের কারণ ঘটাতে পারে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বিশেষ জরুরি বৈঠকের শুরুতেই দলের সভাপতি শেখ হাসিনা টেলিকনফারেন্সে বলেন, ইদানিং একটি উপদ্রব দেখা দিয়েছে- ডেঙ্গু। ডেঙ্গু জ¦রটা যখন শুরু হয়, তখন আমরা দেখেছি, বিশেষ করে শহর এলাকায়, ঢাকা শহরের এর বিস্তার ছিল। তবে এটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদের সময় মানুষ বাড়িতে যাবে। যারা ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়েছে বা যাদের শরীরে এই বীজটা রয়ে গেছে, তারা আবার নিজ নিজ এলাকায় গেলে পড়ে সেখানে যদি মশা কামড় দেয়, তাহলে হয়ত অন্য কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সেজন্য সবাইকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার ‘অনুরোধ’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার নিজ নিজ ঘর বাড়ি, কাপড় চোপড়-যেগুলো অলনায় ঝোলানো থাকে,বাক্সে বা আলমারিতে থাকে; সেগুলো পরিষ্কার রাখা, ঘরের সকল কোণা, সবকিছু পরিষ্কার করে রাখা। এডিস মশা বংশবিস্তার করে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে। সে কারণে বৃষ্টির পানি যেন কোথাও জমে না থাকে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এডিস মশা বেশিরভাগ সময় পায়ের দিকে কামড়ায়। সে কারণে পা ঢেকে রাখতে হবে, ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতনাতা সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি আমাদের যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোহী সংগঠনকে আহ্বান জানাব, আমাদের কর্মীরাও যেন মাঠে নেমে পড়ে। ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী থেকে শুরু করে সব ধরনের সংগঠকে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এয়ার কন্ডিশনের পানি, ফ্রিজের পানি, ফুলে টব বা ফুলদানির পানিসহ টায়ার, ভাঙ্গা হাড়িতে পানি জমে থাকে। সবাইকে পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া দরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকার দুই মেয়রের সঙ্গে কথা বলে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সকলকে বলব, মশা যেন ডিম পাড়তে না পাড়ে, মশার লার্ভা যেন তৈরি না হয়, বংশ বিস্তার করতে না পারে। এটা প্রত্যেকটি মানুষকে নিজেকেই করতে হবে, এটাই বাস্তবতা। সাংবাদিকদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্ন জায়গায় ‘ঘুরতে হয়’, সেজন্য নিজেকে ‘সুরক্ষিত’ রাখতে হবে। পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে যে সকলে যেন সাবধান থাকে। কর্মস্থলে মশা যেন কামড়াতে না পারে, বংশ বিস্তার করতে না পারে। সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সব সদস্য, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সব থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত ঢাকা মহানগরের সব সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন
👁️ 4 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *