শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজধানীজুড়ে যানজট

বিশেষ প্রতিবেদন

দশ দফা দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লাবাহী গাড়িচাপায় শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। শহরের ব্যস্ততম সব পয়েন্টে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের সব সড়কে তার প্রভাব পড়ছে। এর ফলে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে নটরডেম কলেজের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে চত্বরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থী ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দেন। এসময় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার দাবিতে রাজধানীর ফার্মগেট মোড় অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলন শুরু করেন ৬ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ এলাকায় কোনো গণপরিবহন চলাচল করতে দিচ্ছেন না তারা। তল্লাশি করা হচ্ছে গাড়ির কাগজপত্র। ফলে সড়কে অচল হয়ে পড়ে বাসগুলো।
বাস বন্ধ করে দেয়ায় মহাখালি থেকে যানজট বাংলামটর ছাড়িয়ে যায়। এসময় সড়কে তীব্র যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ফার্মগেট মোড়ে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, তেজগাঁও কমার্স কলেজ, আইডিয়াল কমার্স কলেজ, বি এ এফ শাহীন কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হলিক্রস কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। এ ছাড়া বাসভাড়ায় হাফ পাস ও নিরাপদ সড়কের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
শান্তিনগর মোড়ে বিক্ষোভ করছেন ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা। আর ফার্মগেটের সড়কে বিক্ষোভ করছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও হলিক্রসের শিক্ষার্থীরা।
ফার্মগেট এলাকায় শিক্ষার্থীরা বাসসহ কোনো গণপরিবহন চলাচল করছে দিচ্ছেন না। ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের লাইসেন্সসহ কাগজপত্র তল্লাশি করে দেখা হচ্ছে। কোনো অসংগতি পেলে গাড়ি আটকে রাখা হচ্ছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে তেলের দাম বাড়ানোর জেরে বাস ভাড়া বেশি আদায় নিয়ে কয়েকদিন ধরে যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলা চলছিল পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া দেয়া নিয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিস্তানের হল মার্কেটের সামনে সড়ক পারাপারের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী একটি ট্রাক নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় নাঈম হাসানকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গতকাল বুধবারও প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
দশ দফা দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম : দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে সড়ক ছেড়ে চলে গেছেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ফের সড়কে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টা নাগাদ তারা তাদের দাবি জানিয়ে গুলিস্তান ও মতিঝিলের সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা। গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা তাদের ১০টি দাবি ঘোষণা করেন।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে….
যথাযথ তদন্ত করে আমার ভাইয়ের (শিক্ষার্থী নাঈম) হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া, জেলা শহরের বিভিন্ন রুটে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু, স্কুল-কলেজের সামনে হর্ন ও ওভারস্পিডিংয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে জরিমানা ও প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের অধিকার দেওয়া, সব শিক্ষার্থীর হাফ পাস নিশ্চিত করা, প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে একাধিক স্পিড ব্রেকার নির্মাণ, শহরের প্রত্যকটি অচল ট্রাফিক লাইটের সংস্করণ এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, ট্রাফিক আইনের সঠিক প্রয়োগ, জেব্রা ক্রসিংয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করা, চলন্ত বাসে যাত্রী ওঠানামা করালে প্রত্যেক বাসকে আইনের আওতায় আনা এবং সর্বোপরি নিরাপদ সড়ক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা।
এদিকে দিনের শুরুতে তারা কলেজের সামনে জড়ো হন নটরডেম শিক্ষার্থী। এরপর সাড়ে ১১টা নাগাদ তারা শাপলা চত্বরের সড়কে অবস্থান নেন। পরে শিক্ষার্থীরা মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাজউক ভবনের দিকে যান। সেখান থেকে তারা গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন।
এসময় তারা, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমরা বিচার চাই’ ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানে রাস্তা পারাপারের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় শিক্ষার্থী নাঈম হাসান (১৮) হাসান নিহত হন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।