এইচএসসি পরীক্ষা: শঙ্কায় অভিভাবকরা
পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবারও বন্ধ হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভেতরে পরীক্ষা দিচ্ছেন প্রিয় সন্তান। বাইরে ফুটপাতে বসে অপেক্ষা করছেন বাবা-মা। কেউ তাসবিহ জপছেন, আবার কেউ ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করছেন। একটা অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মনে। করোনা মহামারির মধ্যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট আর নতুন সিলেবাসসহ নানা কারণে তাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন অভিব্যক্তির কথা জানা গেছে।
সারাদেশে বৃহস্পতিবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর কেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। তবে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব চোখে পড়েনি।
করোনা মহামারির মধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা। এবার মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৬৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৮ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫২ জন। দেশের ২ হাজার ৬২১টি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া বিদেশের আটটি কেন্দ্রে এবার ৪০৬ জন পরীক্ষার আসরে বসছেন।
সন্তানরা এখনও করোনার টিকা নেয়নি, তাই অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। তাছাড়া এরই মধ্যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দেখা দিয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কী ধরনের পরীক্ষা হবে তা নিয়েও চিন্তিত তারা।
সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে দেখা গেছে, ফুটপাতজুড়ে বহু অভিভাবক বসে আছেন, তাদের হাতে তজবিহ, কোরআন শরিফসহ নানা ধর্মীয় গ্রন্থ। সবাই বসে সন্তানের জন্য দোয়া করছেন।
এ সময় ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সবকটি গেটের সামনে দীর্ঘ লাইনে অভিভাবকদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে সেখানে পরীক্ষা কেন্দ্র হয়নি। তাদের সবার চোখে মুখে ছিল চিন্তার ছাপ।
ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তারের মা সামছুন্নাহার বলেন, ‘মেয়ের জীবনে প্রথম কোনও বড় পরীক্ষা শুরু হয়েছে। অনেক শঙ্কা আর আতঙ্কে আছি। করোনা তো আছেই। অন্যদিকে নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া নতুন সিলেবাস। কী থেকে কী হয় বুঝতে পারছি না। মেয়ে কি এসবের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট হতে পারবে।’
একই শঙ্কা নাহিদা নূরের মায়ের। হাতে তসবিহ নিয়ে স্কুলের গেটে বসে জিকির করছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সন্তানের জন্য দোয়া করছি। সে পরীক্ষা দিচ্ছে। আল্লাহ যেন তাকে মহামারি থেকে রক্ষা করেন। আর পরীক্ষাটা যেন সহজ করে দেন।’
পরীক্ষার্থী নাসরিন আক্তারের বাবা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘মেয়েকে এখনও টিকা দিতে পারিনি। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে বাড়ছে, তাতে শঙ্কিত আছি। সব মিলিয়ে তারা যেন ভালোভাবে পরীক্ষাটা শেষ করতে পারে সেই কামনা করছি।’
পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবারও বন্ধ হবে : ওমিক্রনের কারণে পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবারও বন্ধ হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বৃহস্পতিবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম দিন রাজধানীর শহীদ সোওরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনের পর এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জানিয়েছেন করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। পরীক্ষার প্রথম দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রীও একই কথা জানান।
পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের পর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রার্থনা করি আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয় এমন পরিস্থিতি যেন না হয়। কিন্তু যদি তেমন পরিস্থিতি হয়, যদি পরিস্থিতির কারণে প্রয়োজন হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যেকোনও সিদ্ধান্ত আমরা নেবো।’