প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপআলাপ: ফখরুল

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আইনশৃঙ্গলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য সত্যের অপআলাপ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা তো আমার কাছে পরিস্কার যে, এখানে প্রধানমন্ত্রী সত্য কথা বলেননি। আমাদের পত্রপত্রিকাগুলোতে, মানবাধিকারের যে গ্রুপগুলো রয়েছে, তাদের যে রিপোর্ট আমরা পেয়েছি, এমনকি অ্যামনেস্টি ইন্টান্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে আমরা দেখেছি- প্রতিবছর এখানে জুডিশিয়াল কাস্টডিতে মৃত্যু হয়েছে ৪শ’ থেকে ৭ শ’।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্গলা বাহিনীর হেফাজতে যে টর্চার-এটা তো কমন ব্যাপার। পত্রপত্রিকায় ছবিতে এসেছে- আপনারা দেখছেন এর আগেও সিলিং ফ্যানের সাথে ঝু্লিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদের পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে। এটা ছবিতে চলে এসেছে। এগুলো আপনারা সবাই জানেন, পত্রপত্রিকায় এসেছে। সুতরাং উনি (প্রধানমন্ত্রী) অবলীলায় অস্বীকার করলেন- এটা হয় না। আমার মনে হয় এটা সঠিক নয় তো বটেই, এটা সত্যের অপআলাপ ছাড়া আর কিছুই না।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃত যে চিত্র নির্যাতন, বাংলাদেশে নির্যাতন সরকারিভাবেই চলছে এবং সরকার বিরুদ্ধ মত ও যারা ভিন্নমত পোষণ করে তাদের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন আরো বেশি করে চালিয়েছে।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, আন্তর্জাতিকখ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রী শিল্পী শহিদুল আলম, তাকে গ্রেপ্তার করে অত্যাচার করা হয়েছে এবং কাস্টডিতে নেয়ার পরে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার সাথে নির্মম আচরণ করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বরাবরই লক্ষ্য করেছি যে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তো প্রকৃতপক্ষে জনগনের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই্। তারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি, জোর করে ক্ষমতায় এসেছে। সেজন্য তারা যা কিছু বলতে পারে যে, একটা দায়িত্বশীল সরকার হিসেবে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের যে দায়িত্ব পালন করার কথা সেটা তারা পালন করবেন না-এটাই তো স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, আজকে নতুন নয়। অবলীলায় ইতিপূর্বেও প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা যা সত্য তা অস্বীকার করেছেন। যার ফলে কী হয়েছে? দেশের মানুষ সাফার করেছে। আজকে ডেঙ্গুকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা, তাদের মেয়ররা প্রথম দিকে তো কোনো গুরুত্বই দেয়নি এবং আপনারা তা নাকচ করে দিয়েছেন গুজব বলে। এখন দেখা যাচ্ছে যে, এটা এতো বেশি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে-এটা শুধু ঢাকাতে নয়, ঢাকা থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো জেলা বাদ নেই। এটা (ডেঙ্গু) মহামারি আকারেই ছড়িয়ে পড়েছে।

ফখরুল বলেন, যতগুলো জাতীয় সমস্যা এসেছে, কোনো সমস্যাতে আওয়ামী লীগ অন্যান্য দলকে সম্পৃক্ত করেনি এবং তারা বিশ্বাসই করে না। তারা একলা চল নীতিতে বিশ্বাস করে। সে কারণে তাদের বড় ধরনের ভুল হতে থাকে, ক্রুটি হতে থাকে।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সংবাদমাধ্যমে ডেঙ্গু বিষয়ক খবর অনেক বেশি প্রকাশিত হচ্ছে এবং এর ফলে মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ছে, আর সেটাই সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উনারা সবসময়ই জিনিসগুলোকে এভয়েড করার চেষ্টা করেছেন। বাস্তব সত্য যেটা সেটাকে স্বীকার করতে ওরা সাহস পান না। এখানে মিডিয়া ছিলো বলে তো ডেঙ্গুটা সামনে এসেছে। না হলে ডেঙ্গুটা চেপে যেতো সবাই। বুঝতে পারতো না কীভাবে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু? আজকে প্রতিটি মানুষ এফেকটেড। যার ডেঙ্গু হয়েছে সেও ভয়ে আছেন, সেও দৌঁড়াচ্ছে। আর যার হয়নি সেও দৌঁড়াচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে দুইদিন ধরে আমার শরীরে ব্যথা ছিলো, আমি দুই বার টেস্ট করিয়েছি। এই্ বয়সে যদি ডেঙ্গু হয় তাহলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আর যে সমস্ত নাটক চলছে তা হলো ফটো সেশন। আমাদের ওবায়দুল কাদের সাহেব নিজেই ঝাড়ু-টাড়ু নিয়ে ঝাড়ু দিলেন। আবার উনি বলছেন যে, ফটোসেশন করা চলবে না। ইট ইজ ভেরি ইন্টারেস্টিং। আমরা সাধারণ মানুষ এগুলো দেখছি আরকি।

এবি সিদ্দিকীর দায়েরকৃত মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটাতে আমরা বিম্মিত হয়েছি-ইটস বোল্ড ফরম ব্লু। আসলে এই ধরনের ঘটনায় মামলা একটা আসবে আমরা চিন্তাই করতে পারিনি। মামলাটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা-বানোয়াট। আমার কাছে মামলার কপি আছে। এখানে সাম এবি ছিদ্দিকী, তাকে আমি কোনোদিন দেখিওনি। যদিও তিনি ইতোপূর্বে ৩/৪টা মামলা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও ৫টি মামলা করেছে। তিনি (এবি ছিদ্দিকী) কী জননেত্রী পরিষদের স্বঘোষিত সভাপতি এবং তার কাজই হচ্ছে এই মামলাগুলো করা এবং দ্যাট ইজ এ প্রফেশন।

ফখরুল বলেন, এই মামলাটা যেটা, দেখলাম যে ওয়ারেন্ট হয়ে গেছে। দ্যাট ওয়াজ সারপ্রাইজিং। এই প্রথম দেখলাম যে, মামলা হওয়ার সাথে সাথে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে গেলো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *