বিশেষ প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঈদ এবারো কাটছে হাসপাতালে। গত রোমজানের ঈদেও তিনি হাসপাতালে ছিলেন। ফলে এবার নিয়ে কারাবন্দি অবস্থায় ছয়টি ঈদ কাটলো খালেদা জিয়ার।
এছাড়া বিভিন্ন মামলায় দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েক বছরের ন্যায় এবারো লন্ডনে ঈদ করবেন। আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবার তার নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ করবেন। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দেশের বাইরে ঈদ করবেন এবং ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন।
দলের অন্য সিনিয়র নেতারা এবার ঢাকা ও নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। অর্থ্যাৎ সকালে নিজ এলাকায় ঈদ করে বিকেলেই দলটির সিনিয়র নেতারা ঢাকায় চলে আসবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এনিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মতো কারাগারে ঈদ হবে খালেদা জিয়ার। এর আগে ১/১১ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দু’টি ঈদ কারাগারে কাটাতে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপাসনকে। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঘোষিত সাবজেলে ওই দুই ঈদে খালেদা জিয়ার পাশের আরেকটি সাবজেলে ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাবজেলে থাকার সময় ২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর প্রথম উদযাপিত হয় রোজার ঈদ। এরপর ২০০৭ সালের ২১ ডিসেম্বর কোরবানির ঈদও ওই সাবজেলেই উদযাপন করেন তিনি।
খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। তবে তখন তাকে বেশি দিন বন্দি থাকতে হয়নি।
এদিকে ঈদুল আযহার আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এবিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল যে, ঈদুল আযহার আগেই খালেদা জিয়া কারামুক্ত হবেন। কিন্তু মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেশবাসী এবং বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে পবিত্র ঈদুল আযহার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
গত ১ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আনা হয়। সেই থেকে বেগম জিয়া হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে বিএনপি এবং সরকার ও হাসপাতালপক্ষ পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে। বিএনপির দাবি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনও গুরুতর অসুস্থ। বারবার ইনস্যুলিন পরিবর্তন এবং ইনস্যুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরেও কোনো অবস্থাতেই তার সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো সময় এটি ২৩ মিলিমোল পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়ায় শরীরের ওজন অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করছে।
খালেদা জিয়ার অবস্থার বিষয়ে বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক বলেন, আমি বলব, উনি ভালো আছেন। আপনারা দেখেছেন উনাকে। উনাকে দেখে মনে হয়েছে কি উনি খুব বেশি অসুস্থ? উনি ভালো আছেন। আগে যেভাবে এসেছিলেন, তার চেয়ে বেটার, ডেফিনেটলি বেটার আছেন, বলেন তিনি।
অপরদিকে ঈদের দিন দলের সিনিয়র নেতারা প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।
শায়রুল কবির খান বলেন, ঈদের দিন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে (বিএসএমএমইউ) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে পারেন। এছাড়া আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও মেয়েরা লন্ডনে থাকায় খালেদা জিয়ার ভাই, বোন ও তাদের ছেলে-মেয়েরা কারাগারে দেখা করতে যাবেন।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত খালেদা জিয়া। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে অন্তরীণ।