বাইরে কমলেও বেড়েছে ঢাকায়

অন্যান্য এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা সারাদেশ স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুতে মারা গেল ৭ জন
এডিস মশা নির্মূলে চিরুনি অভিযান
ডেঙ্গু মোকাবিলায় পুলিশে নতুন নিয়োগ

 

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার তুলনায় বেড়েছে। তবে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমেছে। এছাড়া সার্বিকভাবে গতকাল রোববারের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫ জন। তাদের মধ্যে ৭৫৭ জন ঢাকায় ও ৮৫৮ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এর পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৩৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯৭২ জন। শতকরা হিসেবে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩ শতাংশ বেড়েছে এবং ঢাকার বাইরে ১২ শতাংশ কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালে মোট ৬ হাজার ৭৩৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪১৯ জন ঢাকায় এবং ৩ হাজার ৩১৪ জন ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৯৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।


বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গুতে মারা গেল ৭ জন : ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বনশ্রীতে এক শিশু চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর মারা যায়। রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন দুই তরুণী। তাছাড়া ফরিদপুর, খুলনা এবং ময়মনসিংহে আরো চারজন মারা গেছেন।
সোমবার সকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলোয়ার হোসেন নামে মসজিদের এক খাদেম। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রোববার রাতে তাকে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মৃত দেলোয়ার শহরের পূর্বখাবাসপুর এলাকার লঞ্চঘাট জামে মসজিদের খাদেম ছিলেন।
খুলনা মেডিকেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মিজানুর রহমান নামে আরো একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে খুলনায় চিকিৎসাধীন মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৫ আগস্ট জ্বর নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন রূপসা উপজেলার খাজাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান। এর আগে, ৪ আগস্ট একই উপজেলায় মঞ্জুর শেখ নামে এক স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি। রোববার দুপুরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে রাতেই মারা যান তিনি। মৃত আনোয়ারের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়।
গাজীপুরে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। গত দেড় মাসে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ৩শ’ ৮০ জন।
পিরোজপুরে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯ জন। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা।
এছাড়া, ঝিনাইদহ, শেরপুর ও নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আজও ভর্তি হয়ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। তাই আতঙ্ক কাটছে না কিছুতেই।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় পুলিশে নতুন নিয়োগ : ডেঙ্গু জ্বর থেকে পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতে সারা দেশে ইউনিটভিত্তিক অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পদের নাম ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট অফিসার বা ডিএমও।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, একজন উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তা ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) তাপতুন নাসরিন বলেন, মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচতে পুলিশ সদস্যদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয়, নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্বের জায়গা থেকে তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত মে মাস থেকে পুলিশ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে শুরু করেন। জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। একাধিক কর্মকর্তা ও তাদের স্বজনদের মৃত্যু হয়। এতে রাস্তায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই এ রোগ থেকে বাঁচতে সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয় সারা দেশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের।
তারা আরো জানান, গত ৭ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (স্বাস্থ্য ও শিক্ষা) তাপতুন নাসরিন স্বাক্ষরিত নির্দেশনা সারা দেশের রেঞ্জ ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার ও এসপিদের কাছে পাঠানো হয়। তবে ঈদের ছুটি থাকায় ওই নির্দেশনা পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। রোববার সেই চিঠি বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা হাতে পেয়েছেন। গতকাল নির্দেশনাটি ডিএমপির বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, চিঠি বিতরণে দায়িত্বশীলদের গাফিলতির কারণেই এটি আসতে দেরি হয়েছে। ততদিনে অনেক পুলিশ সদস্য ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

এডিস মশা নির্মূলে চিরুনি অভিযান : এডিস মশা নির্মূলের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ওয়ার্ডভিত্তিক এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসকরণ ও বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চিরুনি অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে।
অভিযানটি মঙ্গলবার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড (গুলশান ও বনানী এলাকা) থেকে শুরু হবে। এ ওয়ার্ডকে ১০টি ব্লকে ভাগ করে প্রতিটি ব্লককে ১০টি সাব-ব্লকে ভাগ করা হয়। প্রতিদিন একটি ব্লকের ১০টি সাব-ব্লকের প্রতিটি বাসা-বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, খোলা জায়গা ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার ও এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করা হবে। এভাবে ১০ দিনে এ ওয়ার্ড সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার এবং এডিস মশার লার্ভা নির্মূল করা হবে। ডিএনসিসির অন্যান্য ওয়ার্ডেও পর্যায়ক্রমে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন।
তিনি জানান, ওয়ার্ডভিত্তিক এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসকরণ ও বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান আগামীকাল সকাল ১০টায় গুলশানের ডা. ফজলে রাব্বী পার্ক (পুলিশ প্লাজার বিপরীত দিকে) থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম অভিযানে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেবেন।
প্রসঙ্গত, প্রাণঘাতী জ্বর ডেঙ্গুর জীবাণুবাহক এডিস মশা। সোমবার আরও তিন ডেঙ্গুরোগী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে চলতি মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল ৭১ জন। অবশ্য সরকারি হিসাবে ৪০ জন মারা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *