নিজস্ব প্রতিবেদক : বিমান বিদেশে বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরে জানিয়ে এর সেবা ও রক্ষণাবেক্ষণে আন্তরিক হতে কর্মীদের প্রতি অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বাংলার জনগণ আরও ভালো থাকুক- এটাই তার একমাত্র কামনা।
বৃহস্পতিবার সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে ফিতা কেটে সদ্যযুক্ত উড়োজাহাজ ‘গাঙচিল’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেখানে দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
আগস্টে পিতা-মাতা, ভাইদের হারানোর বেদনাবিধুর স্মৃতি তুলে ধরে এর মধ্যেও বোয়িং উদ্বোধন করতে আসার কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বলেন, ‘শোকের মাসে আজকে বিমান বোয়িং সেভেন এইট সেভেন… যেটার নাম দিয়েছি আমি গাংচিল… সেটার উদ্বোধন করবার জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছি এই কারণে যে, আমার মনে হয় একটু ভালো কাজ, যে কাজে আমার দেশের মানুষের কল্যাণ হবে, মানুষের মঙ্গল হবে, মানুষ স্বস্তি পাবে, সে কাজটুকু করলে আমার বাবার মায়ের আত্মা শান্তি পারে এবং নিশ্চয় তিনি খুশি হবেন।
উড়োজাহাজটির যত্ন নিতে বিমানের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অনুরোধ করব, আমার গাংচিল যেন ডানা মেলে উড়তে পারে, সবাই যতœ নেবেন। আর আমার দেশবাসী যেন আরো ভালো থাকে।
বিমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন যায়, মানুষ দেখে। বিমানের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশকে চিনবে, জানবে, সম্মান করবে। বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে আমি প্রত্যেককে বলব, আপনাদেরও সেই আন্তরিকতা নিয়ে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনারা পরিচালনা করবেন।
বিমানের সুনামটা অক্ষুণ্ন রাখা, সুনামটা বৃদ্ধি করা, যাত্রী সেবার মান উন্নত করা এবং যে জিনিসগুলো আমরা এনে দিচ্ছি, এই প্লেনগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা… এটার সাথে যারা সম্পৃক্ত আছেন, এই কাজে নিয়োজিত আছেন, এটা আপনাদের সকলের দায়িত্ব। এটা নিজের দেশ, নিজস্ব সম্পদ। এ কথাটা মনে রেখে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে। বোয়িং সেভেন এইট সেভেন-এইট উড়োজাহাজটি এটা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে যুক্ত তৃতীয় ড্রিমলাইনার। উড়োজাহাজের ২৭১টি আসনের মধ্যে বিজনেস ক্লাসের ২৪টি, বাকিগুলো ইকোনমি ক্লাসের। ড্রিমলাইনারটি উদ্বোধনের দিনই বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আবুধাবির উদ্দেশে যাত্রা শুরুর দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০৮ সালে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ১০টি নতুন বিমান কেনার চুক্তি করে। ২৫ জুলাই সিয়াটল থেকে সরাসরি দেশে আসে গাঙচিল। এর ফলে মোট ৯টি নিজস্ব উড়োজাহাজাজ বহরে পেল বিমান। আরও একটি বিমান আসবে দ্রুত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দে বিমানের ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজের নাম রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- পালকি, অরুণ আলো, আকাশ প্রদীপ, রাঙা প্রভাত, মেঘদূত, ময়ূরপঙ্খী, আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিমানকে আরও এগিয়ে নিতে তার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। বলেন, এখন ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট না থাকলেও শিগগির এই সমস্যার সমাধান হবে।
সহসাই ঢাকা থেকে জেএফকে যাওয়ার মতো সক্ষমতা রাখি। আমরা এখন চেষ্টা করছি। লন্ডনে আমাদের স্লট আরও বাড়বে। আরও দুটি ফ্লাইট আমরা পাব। তাছাড়া আরও কয়েকটি দেশে আমরা চেষ্টা করছি আমাদের যাত্রীসেবা বাড়ানোর জন্য এবং বিমান যাত্রী যেন পায় সে ব্যবস্থা করার জন্য।
পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে আমরা আরো বিমান ক্রয় করব। তবে এর মাঝে আমি চাচ্ছি আরও দুটি কার্গো বিমান নেওয়ার জন্য, যাদে আমাদের এক্সপোর্ট, ইমপোর্টটা বৃদ্ধি পায়। দেখতে হবে কোথাও থেকে ভালো পাওয়া যায়, ভালো দামে পাওয়া যায়।
এখন থেকে বিদেশি ঋণের বদলে দেশীয় উৎস থেকে ঋণ নিয়ে উড়োজাহাজ কেনা হবে বলেও ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। বলেন, আগে আমরা বিদেশ থেকে টাকা ধার করতাম। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে নিজেরা বিমান ক্রয় করব, যাতে অন্য জায়গা থেকে আমাদের ধার না নিতে হয়। অর্থাৎ আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিমানের উন্নয়নে নিজের চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে। বলেন, আমি প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী হই, সিলেট এবং চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করে দেই। আজকের যে বিমানবন্দর, ৯৬ সালের আগের ছবিগুলো একট দেখবেন, তখন বিমানবন্দরটা কেমন ছিল। তখন কোনো আধুনিক ব্যবস্থাই ছিল না যেটা আমি সরকারে এসে করে দিয়েছিলাম।
আমরা আরও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন তৈরি করছি, কক্সবাজার। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার রুটে ওটা পড়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইনস ওখানে আসতে পারবে, রিফুয়েলিং করতে পারবে। তা ছাড়া কক্সবাজার আমাদের টুরিস্ট জায়গা।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আওয়ামী বিরোধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ২৯টা বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা উন্নয়নটা দেখে নাই, করতেও চায় নাই। কারণ, এই সময় যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করত না। এটাই হচ্ছে বড় কথা। কাজেই আমরা জাতির পিতার সেই আদর্শ নিয়ে পথ চলছি এবং তার সুফল বাংলার জনগণ পাচ্ছে।
জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করাটা আমার একমাত্র লক্ষ্য। তিনি এই দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিলেন। এ দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলেন। এই দেশের মানুষের কল্যাণে তিনি কাজ করতে চেয়েছিলেন। সে পথও তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন।’