চিকিৎসকদের প্রতি ফের ক্ষেপলেন প্রধানমন্ত্রী

অন্যান্য এইমাত্র জাতীয় বানিজ্য রাজধানী রাজনীতি সারাদেশ

মহাসড়কের পাশে চালকদের বিশ্রামাগার তৈরিসহ ১২ প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক : জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে যেতে না চাওয়ায় চিকিৎসকদের প্রতি আবারও ক্ষোভ, বিরক্তি ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ অভিব্যক্তির কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
একনেক সভায় কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন, মানিকগঞ্জ’ প্রকল্পের প্রসঙ্গ এলে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, সেখানেও চিকিৎসকরা যেতে চান না।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ডাক্তার আমরা দিই, কিন্তু ডাক্তার যেতে চান না। এজন্য প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা তো আমাদের চেষ্টা করতে হবে মিটমাট করার জন্য। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেন, ডাক্তাররা যেখানে চাকরি করেন, সেখানে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করলে তবুও হয়তো কিছুটা ভালো হতো। যখন চাকরি করেন এক জায়গায়, প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেন আরেক জায়গায় বা পার্টটাইম পড়ান আরেক জায়গায়, তখন তারা হাসপাতালে থাকতে পারেন না। দুঃখের সঙ্গে, বিরক্তির সঙ্গে, ক্ষোভের সঙ্গে, অভিমানের সঙ্গে কথাগুলো বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এর আগেও কথাগুলো বলেছিলেন, আজ আবার পুনরাবৃত্তি করেছেন বলে মন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ড্রেন ওয়াটার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। নিজেরা করেন, বাড়ির আশপাশে খাল-বিল, পুকুর থাকে, সেগুলো পরিষ্কার করে তাতে পানি সংরক্ষণ করেন। কাজে লাগবে। বিশেষ করে আগুন লাগলে দমকল বাহিনী পানি পায় না। এটা খুব বেশি দরকার।
মহাসড়কের পাশে চালকদের বিশ্রামাগার তৈরিসহ ১২ প্রকল্প অনুমোদন : চার মহাসড়কে চালক-হেলপারদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণসহ ১২ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭৮ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়ে বলেছেন এখন থেকে যত রাস্তা হবে সব রাস্তার পাশে ড্রাইভার ও হেলপারদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করতে হবে। রাস্তার পাশে গাছ লাগাতে হবে। বিশেষ করে খুলনা চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়কে বাঁশ জাতীয় গাছ লাগানোর পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
তিনি আরও জানান, এছাড়া রাস্তায় ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে দৃষ্টি রাখা, সড়কের শৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে জলাধারা তৈরি করার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে, উত্তরা ঘনবসতি এলাকা প্রকল্পে বাস্তবায়নে যাতে স্থানীয় লোকদের ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এলাকা ঘনবসতি নয় দাবি করলে প্রধানমন্ত্রী আবারও বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস।
বৈঠকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা। আলীকদম-জালানিপাড়া-করুকপাতা-পোয়ামহুরী সড়ক প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫০৯ কোটি টাকা। টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার জন্য ৪টি জাতীয় মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য পার্কিং সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২২৬ কোটি টাকা।
বড়তাকিয়া থেকে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৮৩ কোটি টাকা। খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহরাংশ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা।
উত্তরা এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ইসিবি চত্ত্বর হতে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি টাকা।
সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি টাকা। পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচে ব্যবহার প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি টাকা। কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন, মানিকগঞ্জ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।
বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইস্টিটিউট, কাজিপুর সিরাজগঞ্জ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা অঙ্গ-দ্বিতীয় পর্যায় (আইএফএমসি-২) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি টাকা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *