২১ বিদ্রোহী এমপিকে বরখাস্ত করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক এইমাত্র বিবিধ

আজকের দেশ ডেস্ক : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ২১ বিদ্রোহ এমপিকে বরখাস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বরখাস্ত হওয়াদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের প্রপৌত্র স্যার নিকোলাস সোয়ামস-ও রয়েছেন।
ওই ২১ জন এমপি নিজ দলের প্রধানমন্ত্রী জনসনের বরখাস্ত করার হুমকি উপেক্ষা করে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেন এবং মঙ্গলবার নিজ সরকারের আনীত প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন।
অবশ্য মঙ্গলবার রাতেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র জানান: যারা সন্ধ্যায় সরকারের প্রস্তাবে ভোট দেননি, চিফ হুইপ সেই টরি এমপিদের সাথে কথা বলছেন। এসব বিদ্রোহী এমপিদের বরখাস্ত করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।
কনজারভেটিভ দলের ওই বহিষ্কৃত এমপিদের মধ্যে নয়জন সাবেক মন্ত্রীও রয়েছেন, যারা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের হুমকি অগ্রাহ্র করে বিরোধী লেবার দলের এমপিদের সঙ্গে মিলে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- বিটিনের সাবেক চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড, কেন ক্লার্ক, ডেভিড গউকে এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ররি স্টুর্য়ার্ট।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট ইস্যুতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে পরাজিত হন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বিরোধী দলের পাশাপাশি নিজ দলের বিদ্রোহী এমপিরাও তার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেন। সবমিলিয়ে তার নিজ দলের ২১ জন এমপি বিরোধীদের সাথে মিলে তার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেন। ফলে হাউজ অফ কমন্সে ৩২৮-৩০১ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান প্রধানমন্ত্রী জনসন।
ভোটাভুটিতে বিজয়ী হওয়ার পর বুধবার পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নিলো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের বিরোধিতাকারী এমপিরা। এর মাধ্যমে তারা চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট ঠেকাতে একটি বিল আনার সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ভোটাভুটির পর প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ডাউনিং স্ট্রীট কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, যেসব টোরি এমপি বিদ্রোহ করেছে তাদের পার্লামেন্টারি পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে। একই সঙ্গে আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব আনারও ঘোষণা দিয়েছেন বরিস জনসন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওই ঘোষণা অনুযায়ী ২১ বিদ্রোহী এমপিকে বহিষ্কার করা হলো।
প্রধানমন্ত্রী আশা করছেন, তার এই শাস্তির মুখে এইসব বহিষ্কৃত বিদ্রোহী এমপিরা তাদের অবস্থান বদলাবেন। ফলে তার ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করার সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হবে।
ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ নতুন নির্বাচনের কথা-ও বলেছেন বরিস জনসন। যদিও বিষয়টি তার জন্য এত সহজ নয়। কেননা ব্রিটেনে ২০১১ সালে করা এক আইনে পার্লামেন্টের মেয়াদ পাঁচ বছর করা হয়েছে। এখন সেই আইন বদলাতে গেলে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে, যা জোগাড় করা বরিস জনসনের পক্ষে অসম্ভব। কেননা এক্ষেত্রে তাকে বিরোধী দল লেবার পার্টির সমর্থন দরকার হবে, যা তিনি কিছুতেই পারবেন না বলেই মনে হয়।
এদিকে ভোটে বিজয়ী এমপিরা হাউস অফ কমন্স নিয়ন্ত্রণ করবেন। এর ফলে তারা আগাামী ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রেক্সিট বিলম্বিত করার প্রস্তাব আনতে প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করতে একটি বিল আনার সুযোগ পাবেন। তবে এমপিরা যদি ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিটের জন্য একটি নতুন চুক্তি অনুমোদন বা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট না দেন, তবেই তেমনটি ঘটবে।
কিন্তু এর আগেই জনসন সরকার যদি ১৫ই অক্টোবর একটি সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে তাদের সে প্রচেষ্টা মাঠে মারা যাবে। কেননা আগামী এর দুদিন পরেই ব্রাসেলসে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর আগেই সিদ্ধান্তে ব্রেক্সিট ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে যুক্তরাজ্যকে।
তবে এখনও ব্রিটিনের সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিরা চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট আটকাতে বদ্ধ পরিকর রয়েছেন। তারা চাইছেন আগে ব্রেক্সিট নিয়ে ফয়সালা, তারপর যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি। কিন্তু তাদের এ প্রস্তাবে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বরিস জনসন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *