হামলার চেষ্টায় নব্য জেএমবি সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর গুলিস্তান, মালিবাগ, খামারবাড়ি, পল্টন এবং সর্বশেষ সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস তথা হাতে তৈরি বোমা-গ্রেনেড (আইইডি) পেতে রেখেছিল দুর্বৃত্তরা।
গত পাঁচ মাসে ভিন্ন পাঁচ স্থানে চারটি বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। বিস্ফোরণের এসব ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত সাত জন আহত হয়েছেন। এছাড়া অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে একাধিক আইইডি। তবে এখন পর্যন্ত এসব ঘটনায় কেউ ধরা না পড়ায় মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই বললেই চলে। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, এই হামলাগুলোর মূল টার্গেট পুলিশ।
গত ৩১ আগস্ট সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে আইইডি বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য প্রতিটি ঘটনার পর হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
তবে পুলিশ বলছে, আইএস নয় ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে নব্য জেএমবি। এসব হামলা তারাই করছে।
পুলিশের ওপর এমন হামলার মামলাগুলোর তদন্ত, বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করছেন অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার নির্দেশনায় মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সর্বশেষ সায়েন্সল্যাবে বিস্ফোরণস্থলের পাশে দুটি সিসি ক্যামেরা ছিল। একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বোমাটি আগেই সেখানে রেখে যাওয়া হয়। বিস্ফোরকটি রিমোট কন্ট্রোলড অথবা টাইমবোমা ছিল। তবে বিস্ফোরণের মুহূর্তে সায়েন্সল্যাব মোড়ে সিগন্যাল থাকায় সেখানে শুধু পুলিশই ছিল।
তদন্তকারী সূত্র আরও বলছে, এসব ঘটনার সঙ্গে নব্য জেএমবির একটি নতুন গ্রুপ জড়িত। হলি আর্টিজানের পর দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিরা কোণঠাসা হলেও নব্য জেএমবি ফের সক্রিয় হয়েছে। এরই মধ্যে তারা আইইডি তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে।
একই কথা বলছেন জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নেতৃত্বহীন এই জঙ্গি নেটওয়ার্কটি শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এদের শনাক্ত করে, আইনের আওতায় আনতে পারলে, এই ঝুঁকি আর থাকবে না।
এদিকে নব্য জেএমবির টার্গেট পুলিশ কেন? জানতে চাইলে সিটিটিসি’র প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিকভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার যখন শুরু হয় তখন তারা যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, সেটার প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা দেখেছে পুলিশকে। অর্থাৎ তারা যেন বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে সেটি প্রতিহত করেছে পুলিশ। এটি তাদের বিপক্ষে গিয়েছে, ফলে সেই দিক থেকে পুলিশের প্রতি তাদের একটি ক্ষোভ রয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া গত কয়েক মাসের ৪/৫টি ঘটনার বাইরে আগের সকল সন্ত্রাসী ঘটনার রহস্য উদঘাটিত ও মামলাগুলোর অধিকাংশই চার্জশিট হয়েছে। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতারা অধিকাংশই হয় গ্রেফতার হয়েছে, না হলে পুলিশি অভিযানকালে নিহত হয়েছে অথবা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হয়েছে। এই সকল ক্ষোভের কারণেই পুলিশেকে তারা টার্গেট করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পুলিশ সদরদফতর থেকে নানা দিক-নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার আগে থেকেই সারা দেশে পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা ছিল। এ ঘটনার পর বিভিন্ন রেঞ্জ ডিআইজি, কমিশনার ও ফিল্ড কমান্ডারদের নিরাপত্তা নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের বিষয়টি আবারও বলা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *