রেলের লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন নষ্ট ১০কর্মঘণ্টা

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : একটি ট্রেন কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে পার হতে হয় ১১টি লেভেল ক্রসিং। আর এসময় প্রতিটি ক্রসিং এ গড়ে অন্তত পাঁচ মিনিট করে থেমে থাকে রাজপথ। সে হিসেবে একই সময়ে না হলেও কেবলমাত্র লেভেল ক্রসিং এর কারণেই প্রতিদিন ১১টি পয়েন্টে নষ্ট হচ্ছে কমপক্ষে ১০ কর্মঘণ্টা। অথচ ওভারপাসের সফল উদাহরণ থাকলেও সেদিকটা আমলে নিচ্ছে না কেউ। আবার নেয়াও হয়নি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা। সেক্ষেত্রে স্থান ভেদে এখনই ভিন্ন পরিকল্পনার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
পথ যেমন আলাদা, ঠিক তেমনি গন্তব্যও। আপন গতিতে নিজ লক্ষ্যে ছুটে চললেও এখানে কারো পথের বাধা নন কেউই। বিজয়সরণি-তেজগাঁও লিংক রোডে নির্মিত শূন্য দশমিক ছয় সাত কিলোমিটারের ওভারপাস এভাবেই বদলে দিয়েছে অতীত দৃশ্যপট। প্রয়োজন ফুরিয়েছে রেলগেটের। নেই পূর্বের যানজট। অতীত বিড়ম্বনা।
রাজধানীর অন্যান্য রেলক্রসিংগুলোর চিত্রও হতে পারতো এমনই। তবে আদতে চোখে পড়ে থমকে যাওয়া সড়কের দৃশ্য। নির্বিঘœ রেলযাত্রা নিশ্চিতে প্রতিটি রেলক্রসিং এ প্রতিটি ট্রেনের জন্যই এভাবে সড়কে নেমে আসে এমন স্থবিরতা। ফলাফল দীর্ঘ যানজট। অসহনীয় ভোগান্তি।
রেল ক্রসিংয়ের গেইট ম্যান বলেন, ট্রেন আসার পাঁচ মিনিট আগেই আগে বার ফেলাই। আর বার ফেলালেই রাস্তার দুপাশে বিশাল একটা জ্যামের সৃষ্টি হয়।
রেল ক্রসিংয়ের জ্যামে আটকে থাকা এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, ট্রেনটা বেশকিছু সময় পরে আসে এবং তারও বেশকিছু সময় পর আমরা পার হতে পারি। এখানে ১০-১৫ মিনিটের গ্যাপ আছে। দাড়িয়ে থাকার কারণে তেল পুড়ছে সেইসঙ্গে বসের সময়ও নষ্ট হচ্ছে।
কমলাপুর থেকে যাত্রা শুরু করে প্রতিটি ট্রেনকে বিমানবন্দর রেলস্টেশন পর্যন্ত পেরুতে হয় ১১টি লেভেল ক্রসিং। আর প্রতিটি ক্রসিং-এ তিন মিনিট থেকে ৫ মিনিট করে বন্ধ থাকে সড়ক। একই সময়ে না হলেও দিনশেষে যানজটে নাকাল নগরবাসীর কাছে সরাদিন চলাচলরত ৬৮টি ট্রেনের যাওয়া-আসায় এই ৫ মিনিটই বোঝা হয়ে দাঁড়ায় দশ ঘণ্টার।
এ বিষয়ে বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক (এআরআই) কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, অহরহ ট্রেনগুলি যাচ্ছে আর সড়ক পথটাকে থামাতে হচ্ছে, ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রধানত সমস্যা হচ্ছে তিনটি। প্রথমত পরিবেশ দূষণ, দ্বিতীয়ত ম্যান আওয়ার নষ্ট হচ্ছে এবং মানুষের সার্বিক চিন্তাধারায় আঘাত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহু বছর ধরে তৈরি হওয়া এই সংকট সমাধানে সড়ক ও রেলপথের সাংঘর্ষিকতা বন্ধে অবকাঠামোগত উন্নয়নে দরকার নতুন পরিকল্পনা। পাশাপাশি শহরের প্রধান রেলস্টেশনের স্থানন্তরও হতে পারে যুগোপযোগী সমাধান।
ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, আন্ডারপাস করলে রোডক্রসিং সবচেয়ে ভালো হয়। রেল উপর দিয়ে চলে যাবে আর নিচ দিয়ে গাড়ি।
কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন অন্যকথা। তিনি বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনটাকে সরিয়ে যদি আমরা বিমানবন্দর স্টেশনটাকে মেইন স্টেশন করতে পারি, সেক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে যারা ট্রেনে যাচ্ছে তাদের জন্য লেভেল ক্রসিং তৈরি করতে হবে না।
তাছাড়া শুধু সড়ক নয়, রেলের গতি স্বাভাবিক রাখতেও প্রয়োজন লেভেল ক্রসিং’এর আধুনিকায়ন।
দৃষ্টান্ত হিসেবে, যাত্রাবাড়ির দয়াগঞ্জে উপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের রাস্তা করে দেয়ায় কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই নিচে সড়কে যানবাহন চলছে বিরামহীন। বিশেজ্ঞরা মনে করেন ঢাকার যানজট নিরসনে মেগা প্রোজেক্ট চলমান রাখার পাশাপাশি লেভেল ক্রসিংয়ের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *