রাজনৈতিক প্রতিবেদনক ঃ রওশনের সঙ্গে একমত জিএম কাদের, পার্টিকে শক্তিশালী করা না গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকা যাবে না। আমরা কী বিএনপির সমকক্ষ হতে পেরেছি? নিশ্চয় না’ জাতীয় পার্টির চিফ প্যাট্রন ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের এমন বক্তব্যে একমত পোষণ করেছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি মনে করেন, রওশন এরশাদ যা বলেছেন, তা ঠিক। তিনি আরও বলেন , বিগত সময়ে তিনি নিজেও বিষয়টি বারবার বলে আসছেন। রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি হিসেবে না দাঁড়াতে পারলে টিকে থাকা কঠিন।
গতকাল শনিবার (২ জুলাই) রাত পৌনে ৮ টার দিকে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে জাপা চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
এদিন দুপুরে দলের চিফ প্যাট্টন রওশন এরশাদ বলেন, ‘পার্টিকে শক্তিশালী করা না গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকা যাবে না। আমরা কি বিএনপির সমকক্ষ হতে পেরেছি, নিশ্চয় না। বিএনপি আছে, জামায়াত আছে, এটা মনে রাখতে হবে। দলকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমকক্ষ করতে না পারলে রাজনীতিতে টিকে থাকা যাবে না।’ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘এই কথাগুলো আমরা অনেকদিন ধরে বলে আসছি। তৃতীয় শক্তি হওয়া খুব মুশকিল। আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিকল্প হচ্ছে জাতীয় পার্টি। এই দুই দল দেশকে ইজারা নেওয়ার মতো পরিচালনা করেছে। দুটো দল গুম, খুন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি করেছে। এসব ক্ষেত্রে দুটো দলই সমান। দেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়।’ এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সামনে সুযোগ আছে উল্লেখ করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিকল্প হচ্ছে জাতীয় পার্টি। অন্য কোনও দল সামনে আসতে পারছে না। আমরা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি। দেশের মানুষের প্রত্যাশা এখন বিকল্প রাজনীতি। মানুষ এখন জাতীয় পার্টিতে আসছে, যোগ দিচ্ছে।’
জিএম কাদের আরও বলেন, ‘এরশাদ সরকারের সময় দেশে গুম খুন ছিল না। তার শাসনামলে আট-নয়জন মানুষ হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। কিন্তু এখন? এখন তো একদিনেই পুলিশের গুলিতে অনেক মানুষ মারা যায়। আমরা জনগণের কাছে পৌঁছাতে চাই। জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক সংগঠিত ও সফল।’
আগামী দিনের রাজনীতিতে তৃতীয় কোনও পক্ষ টিকবে না বলে মনে করেন জিএম কাদের। তার মন্তব্য, ‘আগামীতে সরকার ও বিরোধী পক্ষ থাকবে। বহুদলীয় গণতন্ত্র খুব মুশকিল। এখানে জোট করতে হয়। জোট করে সবাই নৌকা হয়ে গেছে। ফলে, জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অল্টারনেটিভ হিসেবে রাজনীতিতে সামনে থাকবে।’
রওশন এরশাদের ডাকে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত গতকাল শনিবারের সভায় জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত ও বিদিশার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা অংশগ্রহণ করেন। ওই সভার সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে জিএম কাদেরসহ সিনিয়র নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা যাননি।
যদিও জাপার চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র গণমাধ্যম কে জানিয়েছে, রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের সিনিয়র নেতা ও সংসদ সদস্যদের ওয়েস্টিনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেভাবে সবার প্রস্তুতিও ছিল।গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায়,গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত ছিল।
জাপার চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একটি সুত্রের দাবি, ‘রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম যাবো। দলের এমপিদেরকেও সেভাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিকালে জানানো হয় ওয়েস্টিনে রওশন এরশাদ সভা করছেন। সেই সভায় দলের বহিষ্কৃত ও বিদিশার সঙ্গে যুক্তরা অংশগ্রহণ করেছে। ফলে জিএম কাদের বা মহাসচিবসহ অন্যরা তো সেখানে যেতে পারেন না।’ জাপাসূত্র জানায়, ওয়েস্টিনের ঘটনার পর জাপা মহাসচিব চুন্নু ফোনে রওশন এরশাদকে জানিয়েছেন কেন তারা সেখানে যাননি। একইসঙ্গে মতবিনিময় সভা যে চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কেউ ডাকতে পারেন না, সেটাও তাকে অবহিত করা হয়। সভায় জাপার হাবিবুর রহমান, হাবিবুল্লাহ বেলালী অংশ নিলেও তারা পরে চেয়ারম্যানকে ‘ভুলে’ অংশগ্রহণ করা হয়েছে, বলে জানান। পাশাপাশি রওশন এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে দুয়েকজন বহিষ্কৃত নেতা এই সভার আয়োজন করেছে, এমন দাবি করেছেন এক নেতা।
জিএম কাদের গণমাধ্যমে বলেন, মুজিবুল হক চুন্নু দলের চিফ প্যাট্টনকে জানিয়েছেন রবিবার বা সোমবার আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে যাবো। তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডাম রওশন এরশাদ কখনও আমাদের বিরুদ্ধে বলেন না। যারা বলেছে, তারা চিহ্নিত, দল থেকে বহিষ্কৃত।’ তাদের কোন প্রকার বক্তব্য বা মতামতে কিছু এসে যায় না।