নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ নির্বাচনের মাঠে কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে তাকে মোকাবিলায় বন্দুক নিয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ কৌতুক ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘আজকে যদি বিদায় হতে পারতাম, ভালো লাগত।’
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে সংলাপে সিইসির তলোয়ার–বন্দুক নিয়ে বক্তব্যের বিষয়টি তোলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এ সময় সিইসি হাবিবুল আউয়াল এসব কথা বলেন। হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘আজকে যে অবস্থা, আজকে যদি বিদায় হতে পারতাম, ভালো লাগত। পেপারে সব জিনিসগুলোকে…। পেপার এটা করবে। আমি মিডিয়ার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’
কী প্রসঙ্গে ওই বিষয়ে কথা বলেছিলেন, তা উল্লেখ করেন সিইসি। এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ প্রসঙ্গক্রমে অস্ত্রের কথা তুলেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন আমি বললাম, আপনিও এ রকম একটি নিয়ে দাঁড়াবেন। ওরা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে আপনি বন্দুক নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা কি কখনো মিন করা হয়?’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটুকু জ্ঞান নেই? এই কথাটি সত্য হলে, আমি তো আর্মস অ্যাক্টে লায়াবল। পুলিশ আমাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাবে। বুঝতে হবে, এটা অন্তর থেকে বলা হয়েছে, না কৌতুক করে বলা হয়েছে। দেশের পেপারগুলোতে প্রধান খবর। একটা মানুষকে নামিয়ে দেওয়া। এরপর তো আর কাজ করার মনোবলও থাকে না। ইচ্ছাও করে না।’
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা সমালোচনায় হতাশ হয়ে ইউটিউব দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান সিইসি। বলেন, ‘আজকে তো আমি ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছি। যখনই আমার ছবি দেখি, বুঝতে পারি বাপ-দাদাসহ গালিগালাজ শুরু হবে। এ জন্য দেখি না।’
একপর্যায়ে নিজের মাইকের সুইচ বন্ধ করে দেন সিইসি। কিছু সময় চুপ থেকে আবার মাইক চালু করেন। বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে এমনভাবে বলা হচ্ছে, মাজা ভেঙে গেছে। এটা ভেঙে গেছে। গণমাধ্যমকে আমরা কিন্তু খুব সাপোর্ট দিই। তাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমরা চাই সবকিছু গণমাধ্যমে যাক। খুব কিছু প্রাপ্তির আশায় নির্বাচন কমিশনে আসিনি। আমরা খুবই চেষ্টা করছি। আমাদের অনেকগুলো পরিশ্রম ভন্ডুল হয়ে যায়। আবার কিছু কাজে লাগে। কিছু লাগে না। কিন্তু পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
সংলাপে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক অভিযোগ করেন, ইসি সরকারি দলকে বেশি আপ্যায়ন করে। অন্য অনেক দল ইসিতে ঢুকতেই পারে না। জবাবে সিইসি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি দলবল নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু আমার রুমে ঢুকতে পারেননি। পাশের রুমে বসিয়ে পরে এখানে আনা হয়েছিল।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি ভুলে আগেই ওনাকে (ওবায়দুর কাদের) স্যার সম্বোধন করেছিলাম। এটা নিয়েও সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছি। যেহেতু আগেই পরিচিত, সব সময় স্যার বলেছি। তারপর শিখলাম যে না স্যার বলা যাবে না। উনি (কমিশনার মো. আলমগীরকে ইঙ্গিত করে) এ বিষয়ে আমাকে জ্ঞান দান করলেন।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘বারবার বলা হচ্ছে কুমিল্লার এমপিকে আমরা বের করতে পারলাম না। ওখান থেকে বারবার মেসেজ আসছে, বাহার সাহেব খুব ডিস্টার্ব করছেন। তখন তাড়াহুড়া করে যখন অর্ডার করা যে তাঁকে তাঁর এলাকা থেকে বিড়াড়িত করে দাও। তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত হলে অনেক সময় খুব হঠকারী বা ভুল সিদ্ধান্ত হয়।’
পরে সমালোচনা শুরু হলে তিনি আইনটি পড়ে দেখেন জানিয়ে সিইসি বলেন, কোনোভাবে কোনো সংসদ সদস্যকে তাঁর ঠিকানা থেকে বহিষ্কার করার অধিকার নির্বাচন কমিশনের নেই। হয়তো পুলিশ গ্রেপ্তার করে আনতে পারে। সেটা ভিন্ন বিষয়।