নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সাথে সরকারি সম্পত্তির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘ভূমি তথ্য ব্যাংক’-এর জন্য সংস্কার ক্যাটাগরিতে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ভূমি মন্ত্রণালয়কে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ২০২২’-এর জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় মনোনীত হওয়ায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ‘ভূমি তথ্য ব্যাংক’ উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ‘ভূমি তথ্য ব্যাংক’ স্থাপন করা হয়েছে, যা সরকারি ভূ-সম্পদের সুষ্ঠু এবং কার্যকর ব্যবহারে সহায়তা করবে। এই উদ্যোগের সুফল এখন স্পষ্টতই দৃশ্যমান।
ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, দক্ষ ভূমি সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন দক্ষ ভূমি প্রশাসন। ভূমি প্রশাসন দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য গৃহীত নানা উদ্যোগের একটি ভূমি তথ্য ব্যাংক। এর মাধ্যমে ভূমি প্রশাসনে এখন অতিদ্রুত উপাত্ত পরিচালিত নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের (২০২১) ৮ই সেপ্টেম্বর ভূমি তথ্য ব্যাংক (ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক) উদ্বোধন করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ-কে পত্রের মাধ্যমে উপর্যুক্ত পদকের জন্য মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জলমহাল, বালু মহাল, লবণ মহাল, চা বাগান, চিংড়ি মহাল, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, হাট বাজার, অধিগ্রহণ, খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তিসহ সকল সরকারি ভূসম্পত্তির তথ্য হালনাগাদ করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে ভূমি তথ্য ব্যাংকে। ইতোমধ্যে ভূমি তথ্য ব্যাংকে ৩৮হাজার ৭শ ৪৩টি জলমহাল, ৫১৮টি বালুমহাল, ১৫১টি চা বাগান, ১৫০টি লবণ মহাল, ১ হাজার ৫শত ৮১টি চিংড়ী মহাল, ৯হাজার ৬শ ২৮টি হাটবাজার এবং ৩৭হাজার ৩০একর অধিগ্রহণ সম্পর্কিত তথ্য আপডেট করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ভূমি সচিব জানান প্রায় ৮৫ শতাংশ ডাটা হালনাগাদ করা হয়েছে।
এই তথ্য সারা দেশের এসি ল্যান্ড, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার সহ গুরুত্বপূৰ্ণ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্যবহার করতে পারছেন। ২৪ ঘণ্টার আপডেট, পুরো সপ্তাহের তথ্য, এমনকি মাসভিত্তিক হিসেব করে উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ের বিস্তারিত ভূমির তথ্য এক ক্লিকে জানা যাচ্ছে। একই সাথে এসব সরকারি ভূ-সম্পদ ইজারা দেওয়ার সিস্টেমও তৈরি করা হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রকৃত পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে স্বচ্ছ ও দক্ষতার সাথে সরকারি সম্পদ ইজারা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ইতোমধ্যে জলমহাল আবেদন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এছাড়া, অবৈধ দখল থেকে সরকারি সম্পদ উদ্ধারের হার বৃদ্ধি এবং ভূমি সংক্রান্ত দালাল ও জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্য হ্রাস পাওয়া সহ এ উদ্যোগের ফলে দেশে বিভিন্ন উৎস থেকে রাজস্ব আদায়ের হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘ভূমি তথ্য ব্যাংক’ স্থাপনের ফলে একদিকে যেমন ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, সরকারি ও খাসজমি রক্ষা, অর্পিত সম্পত্তির সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং দক্ষতার সাথে সরকারি সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার মাধ্যমে সরকারি স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ভূমিসেবার নিশ্চয়তা দান করে সরকারের জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ভূমি মন্ত্রণালয় কাজের স্বীকৃতি সরূপ ইতঃপূর্বে ই-নামজারি ব্যবস্থার জন্য মর্যাদাপূর্ণ ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ এবং অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থার জন্য জাতিসংঘের অধীনস্থ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের সম্মানজনক উইসিস প্রাইজ অর্জন করেছে।