*পুলিশ জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা : ডিএমপি কমিশনারের হুঁশিয়ারী
*জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
*আতঙ্কে আরও তিন ক্যাসিনো বন্ধ
*টাকার ভাগ কে কে পেতেন নাম বলছেন খালেদ
*‘আন্ডারওয়ার্ল্ডে’র সঙ্গে সম্পর্ক খালেদের
*খালেদ পালাতে চেয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে
*যুবলীগ নেতা খালেদকে থানায় হস্তান্তর
*ক্যাসিনো : কি আছে আইনে?
মহসীন আহমেদ স্বপন : থানার পাশে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল মতিঝিলের ইয়াংমেনস ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। অভিযোগ রয়েছে, এসব কাজে সহযোগিতা করতো খোদ পুলিশ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, পুলিশের গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, ক্যাসিনোর প্রভাব সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে বিরূপভাবে পড়বে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এর দায় এড়াতে পারে না।
মতিঝিলের ইয়াংমেনস ক্লাব। যেখান থেকে মতিঝিল থানার দূরত্ব মাত্র ৩০০-৪০০ গজ। বুধবার এ ইয়াংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক দ্রব্য ও টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এ ক্লাবটি গত ৪ থেকে ৫ বছর প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। অলৌকিক কারণে এর আগে কখনো অভিযান চালায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) শফিকুল ইসলাম হুঁশিয়ার করেছেন, পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ যদি ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ক্যাসিনো মালিক ও এর সঙ্গে জড়িতরা যত প্রভাবশালী-ই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে জুয়ার আসর বসতে দেয়া হবে না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীতে অবৈধ জুয়ার আড্ডা, ক্যাসিনো চলতে দেয়া হবে না। এসব জুয়ার বোর্ড, ক্যাসিনোর সঙ্গে যত প্রভাবশালীই জড়িত থাকুক না কেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে। পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ যদি ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ক্যাসিনোতে র্যাব অভিযান শুরু করেছে, পুলিশও করবে। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জুয়ার বোর্ড ও ক্যাসিনোর তালিকা করা শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বুধবার ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকায় গুলশানের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। অবৈধ অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া লাইসেন্সের শর্তভঙ্গের অভিযোগে বাসা থেকে দুটি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় থানা পুলিশ টাকার বিনিময়ে ক্লাবের কর্মকর্তাদের ক্লাব পরিচালনায় সহযোগিতা করে আসছে। এমনকি অভিযান হতে পারে এমন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে কয়েক ঘণ্টা ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধও রেখেছিলেন তারা। একজন বলেন, থানার পাশেই এত বড় ক্যাসিনো, পুলিশের তো জানারই কথা। প্রশাসনের নাকের ডগায় ক্লাব এবং সামাজিক সংগঠনের আড়ালে কীভাবে আইনবর্হিভূত এসব কাজ চলছিল? এমন প্রশ্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।
ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এখানে জড়িত থাকে বা গাফিলতি থাকে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
মতিঝিল ক্লাবপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার যে তিনটি (ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল, ওয়ান্ডারার্স ও দিলকুশা) ক্যাসিনোতে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, সেগুলোর আশপাশে উৎসকু জনতার ভিড়। তাদের বেশিরভাগই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাসিনো দেখতে চলে এসেছেন।
বুধবারের অভিযানে এ তিনটি ক্লাব বন্ধ হলেও অভিযানের ভয়ে এমনিতেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে মোহামেডান, আরামবাগ ও ভিক্টোরিয়া ক্লাব। মতিঝিলের তিনটি ক্লাবের একটিতে (দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব) বুথবার রাতেই সিলগালা করা হয়। বাকি দুটোতে সিলগালা লাগানোর প্রস্তুতি চলতে দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তারা এখনও বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, ক্ষমতাসীন দলের দোর্দ- প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মালিকানায় পরিচালিত ক্যাসিনোতে এমন অভিযান চলতে পারে। তারা বলেন, হাউজি, ক্যাসিনো ও মাদকের কবলে পড়ে এ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার যুবকরা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই অজানা আশঙ্কায় সন্তানদের দেশের বাইরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। তবে ক্লাবপাড়ার এ ক্যাসিনোতে কয়দিন সিলগালা থাকবে, তা নিয়ে তারা সন্দিহান বলে জানান।
মতিঝিল ছাড়াও গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ ক্লাবটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ক্লাবটিতে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা মারা। ক্লাবটিতে ১৫ জন আনসার সদস্য ডিউটি করেন। তাদের থাকার জন্য জায়গাটুকু ব্যতীত ক্লাবের ক্যাসিনো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে মতিঝিলের ক্লাবপাড়ার মতো মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় চোখে পড়েনি।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না বলে মত অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। অপরাধ বিশ্লেষক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অনেক কিছুই খুব কঠিন। বলাটা সহজ হলেও করাটা কঠিন। তবে যা শুরু হয়েছে তার জন্য সাধুবাদ জানাই।
টাকার ভাগ কে কে পেতেন নাম বলছেন খালেদ : কোটি কোটি টাকার ক্যাসিনো সেটাপ, নারী-পুরুষ এনে সেগুলো পরিচালনা করাসহ নানা অবৈধ কাজ চলতো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ইয়ংমেন্স ক্লাবে। এত বড় আয়োজনের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জানতো না? জানলেও তারা চুপ ছিল কেন?
আটকের পর র্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে খালেদ মাহমুদকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। ক্যাসিনো থেকে উপার্জনের টাকা কার কার কাছে যেত, সে নিয়েও প্রশ্ন করা হয় তাকে।
এর আগে বুধবার রাতে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র্যাব। আটকের পর তাকে র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে মতিঝিলের ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি মতিঝিল থানা পুলিশ, মতিঝিল জোন, পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপি সদর দফতরের কর্মকর্তারা জানতেন বলে দাবি করেন খালেদ। তবে পুলিশের সঙ্গে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি তিনি।
সূত্র জানায়, খালেদের ক্যাসিনোর বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থা এবং রাজনীতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জানতেন। তাদের ‘ম্যানেজ করে’ ক্যাসিনো চালাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, তাকে আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র্যাব।
গ্রেফতারের সময় খালেদের বাসা থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা, লকার থেকে ১০০০, ৫০০ ও ৫০ টাকার বেশ কয়েকটি বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। সেগুলো গণনার পর ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া ডলারেরও বান্ডিল পাওয়া যায়। টাকায় তা ৫-৬ লাখ টাকা হবে বলে র্যাব জানায়। এছাড়া তার কাছ থেকে মোট তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়, যার একটি লাইসেন্সবিহীন, অপর দুটি লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ করে রাখা হয়েছিল।
এদিকে খালেদকে রাতে আটক ও ঢাকায় একের পর এক ক্যাসিনোর সন্ধানের সংবাদ দেখে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন জেনেও কেন এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে এটা তাদের চরম ব্যর্থতা।
খালেদ পালাতে চেয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে : ফকিরাপুলে অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) হাতে আটক হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তবে একাধিক পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডে’ দাপট তৈরি করে চলা খালেদ দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সিঙ্গাপুরে গিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আটক হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি বিমানবন্দর থেকে ফিরে এসেছিলেন।
বুধবার সন্ধ্যায় র্যাবের হাতে আটক হন খালেদ। এর আগে তার পরিচালিত ফকিরাপুলের ইয়ং মেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১৪২ জনকে আটক করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ মদসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য, জুয়া খেলায় ব্যবহৃত প্রায় ২৫ লাখ টাকা। গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, এদিন সকালেই সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা ছিল তার।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ ৫ জন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সকালের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। ভোরে তারা সে উদ্দেশ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও যান। তবে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে তাদের সন্দেহ হয়, তারা বিমানবন্দরেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে পারেন। এ আতঙ্ক থেকে তারা বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসেন।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও জানান, বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে সম্রাট-খালেদসহ ৫ জন একসঙ্গেই ছিলেন। পরে দুপুরের দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গিয়ে যে যার মতো আলাদা হয়ে যান। সেখান থেকে খালেদ বিকেল ৩টা ৩১ মিনিটে ফিরে যান তার বাসায়। সেখান থেকে দ্রুতই তার বের হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু র্যাব তার বাসায় ঢুকে পড়ায় তিনি আর বাসা থেকে বের হতে পারেননি।
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, খালেদ এরই মধ্যে র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন। তার সঙ্গে আরও যারা ছিলেন, তাদের ধরতেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে র্যাব।
‘আন্ডারওয়ার্ল্ডে’র সঙ্গে সম্পর্ক খালেদের : একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতে পলাতক বিএনপিপন্থী পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার। সেই সম্পর্কে ভাঙন ধরার পর তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুবাইয়ে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে। তার সহযোগিতা নিয়ে টেন্ডারবাজিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন খালেদ। সেই টাকার ভাগ নিয়মিত পৌঁছে যেত জিসানের কাছে। ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডে’ খালেদের অবস্থান প্রমাণে সিঙ্গাপুরের অভিজাত হোটেল মেরিনা বে’র সুইমিংপুলে জিসান ও খালেদের সাঁতার কাটার ছবি দিয়ে ছাপানো পোস্টারে ছেয়ে যায় নগরী।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, একসময় টেন্ডারবাজির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে জিসানের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি হয় তার। এসময় সম্রাটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার শুরু খালেদের। জিসানের কাছ থেকেও তিনি দূরে সরে আসেন। একপর্যায়ে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জিসানের বেশকিছু ক্যাডার ধরিয়ে দেন তিনি, বেশ কয়েকজন ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়। এরপর মুখোমুখি হয়ে পড়েন জিসান ও খালেদ। তখন থেকেই ‘নিরাপত্তা’র খাতিরে অস্ত্র উঁচিয়ে চলতে থাকেন খালেদ ও তার ক্যাডাররা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে খালেদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে দু’জনের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। থাইল্যান্ডে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী উল্লাহ নবীর সঙ্গেও রয়েছে খালেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
আন্ডারওয়ার্ল্ড ও খালেদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, থাইল্যান্ডে পলাতক মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী উল্লাহ নবী খালেদের ব্যবসায়িক অংশীদার। ব্যাংককে একটি টু-স্টার মানের হোটেল ও পাতায়াতে ফ্ল্যাট ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে খালেদের। এসব দেখভাল করেন নবী। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অভিজাত সুপারমল প্যাভেলিয়নের উপরে ১১ কোটি টাকায় সম্পতি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন খালেদ। সেখানে গড়েছেন সেকেন্ড হোম। স্কটল্যান্ডেও কিনেছেন বাড়ি। সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য পরিবার নিয়ে ঘনঘন যাতায়াত করেন। সেখানে বিনিয়োগ ভিসায় স্থায়ীভাবে পরিবার নিয়ে থাকার প্রস্তুতিও চলছে তার।
যোগাযোগের চেষ্টা করেও এসব বিষয়ে খালেদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, চাঁদাবাজিসহ যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিচার হবে যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে। বিচার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি সম্রাটের দাবি, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেগুলার প্রশাসনিক তদন্ত হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আর খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র উঁচিয়ে চলার অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ প্রসঙ্গে সম্রাট বলেন, এগুলো কারা করে, তা তার জানা নেই।
যুবলীগ নেতা খালেদকে থানায় হস্তান্তর : ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো মালিক যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব-৩।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বুধবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলের ফকিরাপুল এলাকার ‘ইয়াং ম্যান্স ক্লাব’র ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় সেখান থেকে ১৪২ জনকে আটক করা হয় এবং প্রায় ২০ লাখ টাকা ও মাদক জব্দ করা হয়। পরে রাতে ক্যাসিনোর মালিক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে আটক করা হয়। এ সময় একটি অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
ক্যাসিনো : কি আছে আইনে?: সম্প্রতি ঢাকার ফকিরেরপুলে র্যাবের সমন্বিত অভিযানে চারটি ক্যাসিনো সিলগালা এবং বহু মানুষকে আটক করা হলে এ নিয়ে দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ক্যাসিনোগুলো হলো- ফকিরেরপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র এবং বনানীর গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ।
এর আগে বিভিন্ন ক্লাবে বা আড্ডায় গোপনে জুয়া খেলার অনেক আসর বসার কথা নানা সময়ে শোনা গেলেও একেবারে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সজ্জিত এ ক্যাসিনোগুলোর অস্তিত্ব থাকবার খবর বাংলাদেশের মানুষের কাছে একেবারেই নতুন।
জানা যায়, মদ বিক্রি বা পানের মতো ক্যাসিনোর অনুমোদন বা লাইসেন্স দেয়ার কোনো ব্যবস্থা বা সুযোগই বাংলাদেশের কোনো আইনে নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
জুয়ার বিষয়ে বাংলাদেশে যে আইনটি কার্যকর আছে সেটি হলো প্রকাশ্য জুয়া আইন ১৮৬৭, সেখানে অবশ্য ক্যাসিনো বিষয়ে কিছু বলা নেই।
তবে ওই আইনে-কেউ তার ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে বা স্বেচ্ছায় অন্য লোককে, উক্ত স্থানকে সাধারণ জুয়ার স্থান হিসাবে ব্যবহৃত করিতে দিলে অর্থদ- ও কারাদ-ের বিধান’ রাখা হয়েছে।
এমনকি ‘তাস, পাশা, কাউন্টার অর্থ বা অন্য যেকোনো সরঞ্জামসহ যেকোনো ব্যক্তিকে ক্রীড়ারত বা উপস্থিত দেখিতে পাওয়া গেলেও’ শাস্তি দেয়ার সুযোগ আছে এ আইনে।