র‍্যাব-৪ কর্তৃক মানিকগঞ্জের চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা ও তার মেয়ে জোতি হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী সাভার থাক গ্রেফতার

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। র‌্যাব-৪ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য আসামী গ্রেফতার করে যার মধ্যে সাভারের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন হত্যার রহস্য উদঘাটনপূর্বক আসামীদের গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার, সাভারের ক্লুলেস ফাতিমা হত্যা এবং আশুলিয়ার আলী নুর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ অসংখ্য ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করা এবং আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়াও র‌্যাব-৪ ২০-৩০ বছর পলাতক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কয়েকজন দুর্র্ধষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গত কয়েকদিন পূর্বে ৩৯ বছর ধরে পলাতক হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী কাওছার (৬৩)’কে ঢাকার বারিধারা থেকে, অন্তঃসত্তা স্ত্রী হত্যা মামলায় ১৯ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুল’কে নারায়ণগঞ্জ থেকে, চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলায় ৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নজরুল’কে সাভার হেমায়েতপুর জয়নাবাড়ি এলাকা থকে গ্রেফতার করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার ৪ অগাস্ট, রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরের চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা আক্তার (২২) ও তার ৩ বছরের মেয়ে জোতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকির হোসেন (৪৭)কে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন শাহিবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গত ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ গ্রেফতারকৃত আসামী জাকির হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার জিয়নপুরের একই গ্রামের জনৈক মোঃ আবু হানিফ এর মেয়ে ভিকটিম নিপা আক্তারের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়।

বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশকিছু নগদ অর্থ, গহণা এবং আসবাবপত্র বরপক্ষকে প্রদান করা হয়। তারপরও বিয়ের পর হতে উগ্র এবং বদমেজাজী আসামী জাকির হোসেন ভিকটিমকে আরো যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। ইতোমধ্যে জাকির ও নিপা দম্পতির ঘরে জোতি (৩) নামে ১ টি কন্যা সন্তান জম্মগ্রহণ করে। একপর্যায়ে জাকিরের পূনরায় গর্ভবতী স্ত্রী নিপা আক্তার জানতে পারে যে, জাকির এর বড় ভাই মোঃ জাহাঙ্গীর এর স্ত্রী তাহমিনার সাথে জাকির হোসেন এর পরকিয়া প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দাম্পত্য কলহ আরো বেড়ে যায়।
গত ২৫-০২-২০০৫ তারিখ রাতে জাকিরের ভাই জাহাঙ্গীর বাড়িতে না থাকার সুযোগে আসামী জাকির হোসেন তার ভাবী তাহমিনার ঘরে প্রবেশ করে।
জাকিরের স্ত্রী নিপা আক্তার জাকির ও তাহমিনাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে এবং তার স্বামীকে জানায় বিষয়টি তার ভাসুর জাহাঙ্গীর’কে বলে দিবে।
সেই কারণে এই বিষয় নিয়ে আসামী জাকির ও তার স্ত্রী ভিকটিম নিপা আক্তারের মধ্যে পুনরায় মনোমালিন্য এবং তুমুল ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হওয়ায় জাকির ভিকটিমকে তালাক দিবে মর্মে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। তখন ভিকটিম নিপা আক্তার ০৫-০৬ মাসের অন্তঃসত্তা ছিলো।
ভিকটিম নিপা আক্তার জাকির ও তাহমিনার পরকীয়া প্রেমের এই ঘটনা আসামী জাকিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীরকে বলার পর আসামি জাকির, তার ভাই জাহাঙ্গীর, ভাবী তাহমিনা এবং শশুর-শাশুরী সহ প্রায় পরিবারের সকলেই বিষয়টি বিশ^াস না করে ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিম নিপা আক্তারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
পরিবারের সদস্য, আত্বীয়-স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবের উস্কানিতে আসামী জাকির স্ত্রী নিপা আক্তারের প্রতি আরো উগ্র এবং প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে পড়ে এবং গোপনে ভিকটিম নিপা আক্তার’কে হত্যার পরিকল্পনা করে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সালে দিবাগত রাতে আসামী জাকির পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিম নিপা আক্তার’কে গলায় গামছা দিয়ে হত্যা করে এসময় ভিকটিম নিপা আক্তার মৃত্যু যন্ত্রনায় হাত-পা আছড়া আছড়ি করার সময় তাদের মেয়ে জোতি (৩)’ জেগে কান্না-কাটি করতে থাকে। তখন ঘটনার স¦াক্ষী না রাখতে নরঘাতক পাষান্ড বাবা একই প্রক্রিয়ায় ৩ বছরের শিশু কন্যা জোতি’কে হত্যা করে ঘরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সালে থানা পুলিশ কর্তৃক ভিকটিম নিপা আক্তার এবং তার কন্যা জোতির মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
একই দিনে উক্ত চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক ঘটনায় ভিকটিমের বাবা মোঃ আবু হানিফ বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় আসামী জাকির হোসেন সহ তার বাবা-নইম উদ্দিন শেখ, মা-মালেকা বানু এবং ভাবি-তাহমিনাসহ সর্বমোট ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-০৪(০২)২০০৫, তারিখঃ ২৭/০২/২০০৫, ধারা-৩০২/৩৪ (দঃ বিঃ)। দৌলতপুর থানা পুলিশ উক্ত মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি জাকির হোসেন, বাবা- নইম উদ্দিন শেখ, মা- মালেকা বানু ও ভাবি- তাহমিনাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে কিন্তু এজাহারভুক্ত আসামী নইম উদ্দিন শেখ, মালেকা বানু, তাহমিনা আসামীরা ১ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পায়। এজাহারভুক্ত ১ নং আসামী জাকির হোসেন ০৫ বছর কারাভোগ করে ২০১০ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার তদন্তকালীন সময়ে স্বাক্ষী-প্রমানে জানতে পারে এই হত্যাকান্ডে এজাহারনামীয় আসামীদের বাইরেও বেশকয়েকজন জড়িত আছে। জড়িতদের গ্রেফতারে র‍্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *