নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেছেন, আমাদের চার হাজার বছরের ইতিহাস। আমরা পূর্ণাঙ্গ জাতিসত্তা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারিনি বিধায় বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজেদেরকেও আবির্ভূত করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ সময়ে বাঙালি জাতিকে জাতি হিসেবে গঠন করে তার সত্তার স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেছেন, সেটা বিস্ময়কর। তিনি বলেন, যারা অবয়বে বাঙালি জাতিসত্তার অংশ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নয়, তারা ভিতর থেকে ঘুণে পোকার মতো আমাদের খেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ যেমন আগেও ছিল এখনও আছে। এই চ্যালেঞ্জের কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি আমাদের যে মুক্তির কান্ডারী তাদেরকেও হারিয়েছি। আমাদের সবাইকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এই জাতিকেই সোচ্চার হতে হবে, সতর্ক হতে হবে। আমাদের প্রহরীর মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে এটাই হোক আমাদের প্রতীতি ও প্রতিজ্ঞা। সোমবার ৮ আগস্ট, বিকালে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এ আলোচনা সভা ও কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার)। অনুষ্ঠানে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, ৫১টি ইউনিট ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল। মুখ্য আলোচক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের বটবৃক্ষ, তাঁর ছায়ায়, প্রচ্ছায়ায় আমাদের অস্তিত্ব নির্মাণ করেছি, অস্তিত্ব ধারণ করব যতদিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে ততদিন। বঙ্গবন্ধু আমাদের বটবৃক্ষ আর বটবৃক্ষের ছায়াবৃক্ষ ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হত্যা করার দৃষ্টান্ত রহিত নয়, কিন্তু সপরিবারে স্বজন পরিজনসহ একই দিনে আড়াই ঘন্টার মধ্যে ১৯ জনকে হত্যা করার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আর নেই। এমনকি ১০ বছরের শিশু পুত্র রাসেলও বাদ যায়নি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৫৫ বছর ৪ মাস ২৯ দিনের জীবনী, তার মধ্যে তিনি শুধু বাঙালিকে দেয়ার চেষ্টাই করেছেন, কোন কিছু নেয়ার চেষ্টা করেননি, আমরা কিছুই তাকে দিতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, বঙ্গমাতা যখন সিঁড়িতে শেখ মুজিবের নিথর দেহ দেখলেন, তিনি তখন হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। খুনিরা তাকে সরাতে চেষ্টা করল, আপনি এখান থেকে সরে দাঁড়ান। বঙ্গমাতার উত্তর ছিল তোমরা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছ আমাকেও হত্যা করো। খুনীরা ব্রাশফায়ার করে বঙ্গমাতাকে হত্যা করেছিল। সেদিন ৩২ নম্বর সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গমাতার রক্ত মিশে গিয়েছিল। এটা স্বামী-স্ত্রীর আত্মিক পরিচয় বহন করে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যা আমাদের ইতিহাসের কৃষ্ণতম অধ্যায়। রাজনৈতিক মত ভিন্নতা থাকতে পারে, মতান্তর থাকতে পারে, কিন্তু হত্যা তার কোন উত্তর নয়। এখান থেকেই বোঝা যায় খুনিদের পেছনে অনেক কিছু কাজ করেছে। একটি দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের তিনি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। যদিও দুইজন আসামী এখনও পলাতক রয়েছে। ১৫ আগস্ট আমাদের কাছে এখনও ধোঁয়াশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট সম্পর্কিত একটি কমিশন চাই যার মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ হবে। ইতোমধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট একটা কমিশন করার কথা বলেছে। আমি আশাবাদী ১৫ আগস্ট সম্পর্কিত একটি কমিশন হোক। তিনি বলেন, দেশের প্রতি বঙ্গমাতার ভালবাসা কেমন ছিল বঙ্গবন্ধুর কাছে তার লেখা একটি চিঠি তার প্রমাণ। তিনি তার চিঠিতে বঙ্গবন্ধুকে বলেন, আমার স্বামী হওয়ার জন্য আপনার জন্ম হয় নাই। আপনার জন্ম হয়েছে দেশের সেবা করার জন্য। আপনি দেশের সেবা করেন, আল্লাহ আমাকে দেখবে। সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, তাদের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানের দিকে পরিচালিত করার যে প্রচেষ্টা ছিল সেটা থেকে আমরা অবশ্যই আমাদের দেশকে মুক্ত করতে পারব। পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন দখল করে এই শত্রুদের দেখিয়ে দিতে চাই আমরা তোমাদের মত বিশ্বাসঘাতক নই, আমরা প্রকৃতপক্ষে বাঙালি। তিনি আরো বলেন, বাঙালির মুক্তিদাতা জাতির পিতাকে আমরা বুকে ধারণ করি, আদর্শে ধারণ করি। তাঁর দেখানো আদর্শ নিয়ে এ দেশকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কিশোরদের কুইজ প্রতিযোগিতা ও বড়দের রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। গত ২৫ জুলাই বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এছাড়া, ২৯ জুলাই পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণে এই কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকীতে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং ‘দিশারী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।