ধেয়ে আসছে হিক্কা

অন্যান্য আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : আরব সাগরের কাছে শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। ঘূর্ণিঝড়টি ওমানের উপকূলের কাছে অবস্থিত বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। নিম্নাঞ্চল থেকে লোকজনকে দ্রুত সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওমান ছাড়াও বুধবার ভারতেও আঘাত হানতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়।
আরব সাগরের দিকে অগ্রসর হতে থাকা এই ঘূর্ণিঝড়টি যে কোনো সময় আঁছড়ে পড়তে পারে ওমানে। সেখান থেকে গতিপথ বদলে ভারতের গুজরাট উপকূলে আঘাত হানার খুব সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের আবহাওয়া দফতর বুধবার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি এখন ওমানের হাইমা শহরের কাছে আছে। এটি এখন পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে আগামী ছয় ঘণ্টার ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি হারাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৬০ থেকে ১০০ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই ভারতের উত্তর পাঞ্জাব থেকে মধ্যরাজস্থান হয়ে মধ্য গুজরাট পর্যন্ত পূবালি মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া দফতর গুজরাটের জেলেদের সাগরে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
গুজরাটের ভেরাভাল, পাকিস্তানের করাচির ৪৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ওমানের মাসিরাহের ৭৬০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ পূর্ব সীমান্তে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে।
ওমানে হিক্কার প্রভাবে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়াবিদদের দাবি, ওমানে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে এই ঝড়।
ঘূর্ণিঝড় হিক্কার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী কিছু জেলাতেও। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উড়িষ্যা পার হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
যে কারণে এসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোতে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পূর্বাভাস আরও বলছে, বৃষ্টিপাত হলেও সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকুওয়েদার বলছে, কেবল এই সপ্তাহ নয়, আগামী সপ্তাহের পুরোটা জুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতা থেকে মুম্বাই পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ নজরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খ-, বিহার এবং তামিল নাড়ু। এই বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টিও হতে পারে। ঝুঁকিতে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তর মহারাষ্ট্র, ছত্রিশগড়, তেলাঙ্গানা এবং গুজরাট।
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এমনকি করাচিতেও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে।
এর কারণ হলো প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। হিক্কার প্রভাবে আরব সাগরের আশে পাশের এলাকায় গত সপ্তাহেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরেও এই ঝড়ের সমান প্রভাব দেখা যাচ্ছে। যদিও ঝড়টি ওমানের দিকে চলে যাওয়ায় ভারতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভবনা নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অ্যাকুওয়েদারের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ জেসন নিকোলস বলেন, শুষ্ক বায়ুই ঘূর্ণিঝড় হিক্কাকে দুর্বল করে ফেলতে যথেষ্ট।
এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর আইএসটি সময় ৫টা ৩০ মিনিটে আরব সাগরে সৃষ্ট গভীর নি¤œচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। মালদ্বীপ এর নাম দেয় হিক্কা। ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে ঝড়টির ওমান উপকূলে পৌঁছানোর কথা। আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, ঝড়টি ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাবে। আবারও নি¤œচাপে পরণিত হওয়ায় এর প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হবে।


বিজ্ঞাপন
👁️ 26 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *