গণপূর্তের প্রকৌশলীদের ঘুষ দিতেন জিকে শামীম

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয়

বিশেষ প্রতিবেদক : জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর আসল চেহারা বেরিয়ে আসছে গণপূর্তের কিছু প্রকৌশলীর। এরই মধ্যে বিপুল টাকার বিনিময়ে শামীমকে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন অতিরিক্ত প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে। শুধু উৎপল নয় শামীমের কাছ থেকে শত কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। আর এ টাকার ভাগ পেতেন নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যায়ের ১৫ থেকে ২০ জন। তাদের সবার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছেন গোয়েন্দারা।
উৎপল কুমার দে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সদ্য বরখাস্ত হওয়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। ওএসডি হওয়ার আগে, ঢাকা মেট্রো ও ঢাকা জোনের মতো গুরুত্বপূর্ন দুটি বিভাগের প্রধান ছিলেন। অভিযোগ আছে এই দুই বিভাগের বেশির ভাগ বড় কাজই তিনি জিকে শামীমকে পাইয়ে দিয়েছেন বড় অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে।
নি¤œমানের রড-সিমেন্ট দেয়ায় নির্মাণের সময়ই ভেঙে পড়ে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রাচীর। এসময় নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব ছিলেন এই উৎপল দে। পরে এ ঘটনার তদন্ত করে গণপূর্ত মন্ত্রানালয়। তাতে দোষী সাব্যস্ত হন উৎপল। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করছেন উৎপল। তার দাবি, শাক দিয়ে মাছ ঢাকতেই তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদর দফতরের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের টেন্ডারে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’কে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি-রিজার্ভ) করা হয়েছে। যদিও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার দুই মাস পর উৎপল কুমার নতুন দায়িত্ব নেন। কোনো ‘দোষ না থাকলেও’ প্রধান প্রকৌশলীকে ‘বাঁচাতেই’ তড়িঘড়ি করে তাকে ওএসডি করা হয়েছে বলে অভিযোগ গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান এই প্রকৌশলীর। উৎপল কুমার দে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে ওএসডি করা হয়েছে। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করলে এর সত্যতা মিলবে। কারণ টেন্ডারের অনেক পরে আমি এখানে যোগ দিয়েছি। আশা করি গণপূর্তমন্ত্রী বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করবেন। মন্ত্রীর ওপর আমার পূর্ণাঙ্গ আস্থা আছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাক— এটিই আমার চাওয়া, বলেন গণপূর্তের ওএসডি হওয়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, র‌্যাব সদর দফতরের কাজের টেন্ডার আহ্বানের সময় দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুল ইমলাম। তিনি অধিদফতরটির প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত। তাকে কৌশলে গণপূর্ত ঢাকা সার্কেল-১-এ দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মো. সাহাদাত হোসেন এ ষড়যন্ত্র করছেন।
অধিদফতরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মো. সাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তার সখ্য রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাহাদাত হোসেনের তদবির পালন করার জন্য ঢাকা সার্কেল-১-এর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
শুধু উৎপল নয় জিকে শামীমের টাকার ভাগ নেয়ার অভিযোগ আছে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামসহ ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে।
এরই মধ্যে রফিক-উৎপলসহ অভিযুক্ত প্রকৌশলীদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। নজরদারীতে আছেন গোয়েন্দাদের।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *