নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ গত বৃহস্পতিবার ২৪ আগস্ট, আনুমানিক দুপুর ১২ টার সময় ভিকটিম ফেনীর ট্রাংক রোডে অফিসের কাজ শেষে মদিনা বাস স্ট্যান্ড থেকে চৌদ্দগ্রাম এর উদ্দেশ্যে দুপর ১২টা ৪৫ মিনিটের সময় রওয়ানা দেন। ভুক্তভোগী ভিকটিম বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে সাধারণ পদে কুমিল্লা শাখায় কর্মরত।
বাস ছাড়ার আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বিসিক রাস্তার মোড়ে দুই জন স্টুডেন্টসহ তিনজন ব্যক্তি উক্ত বাসকে সিগন্যাল দিয়ে থামিয়ে ভিকটিমকে গাড়ী থেকে নামতে বলেন। ভিকটিম গাড়ী থেকে নামার পর তারা তাকে একটি চায়ের দোকানের ভিতরে নিয়ে যায় এবং তার সাথে থাকা ২,২০০ টাকা এবং মোবাইল ফোন জোরপূর্বক কেড়ে নেয়।
পরবর্তীতে তারা ভিকটিমকে সিএনজির মাধ্যমে ফেনী মডেল থানাধীন একটি জিম সেন্টার এর নিচ তলার রুমে নিয়ে আটকে রাখে এবং অপহরণকারীরা তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও চর-থাপ্পর দেয় এবং তার কাছে ১,০০০০০ টাকা দাবী করে এবং উক্ত টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
পরবর্তীতে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল হতে অপহরণকারীরা তার স্ত্রীর কাছে ফোন করে ১,০০,০০০ টাকা দাবী করে এবং উক্ত টাকা না দিলে তার স্বামীকে মেরে ফেলা হবে বলে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। তখন ভিকটিমের স্ত্রী কোন উপায় না পেয়ে ভয়ে তাৎক্ষনিভাবে বিকাশের মাধ্যমে ৩,০০০ টাকা প্রেরণ করে।
মাত্র ৩,০০০ টাকা পেয়ে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমের সাথে একটি মেয়ের আপত্তিকর ভিডিওচিত্র মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে ধারন করে এবং ভিকটিমকে এসএস পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত করে এবং তার স্ত্রীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে ‘‘যেখান থেকে পারেন টাকা এনে দেন, টাকা দিলে আপনার স্বামীকে ফেরৎ পাবেন’’ এবং টাকার সাথে আপনার স্বামীর এনআইডি কার্ড এবং ডিবিবিএল এটিএম কার্ড সাথে নিয়ে আসবেন। এই কথা শুনে ভিকটিমের স্ত্রী কোন উপায় না পেয়ে গত ২৫ আগস্ট রাত ১ টার সময় নগদ ২৫,০০০ টাকা এবং এনআইডি কার্ড, এটিএম কার্ড নিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে।
তখন অপহরণকারী মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল উক্ত টাকা এবং এনআইডি কার্ড, এটিএম কার্ড বুঝে নিয়ে পরবর্তীতে আরো ৫০,০০০ (পঁঞ্চাশ হাজার) টাকা দাবী করে সাদা কাগজে ভিকটিমের স্বাক্ষর নেয় এবং ৫০,০০০ টাকা না দিলে এবং কোন প্রকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে ধারনকৃত সাজানো ভিডিও চিত্রগুলো সোস্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিবে বলে হুমকী প্রদান করে ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়।
ভিকটিম ছাড়া পাওয়ার পর উপরোক্ত ঘটনাসমূহ গত ২৫ আগস্ট আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪ টায় র্যাব-৭, চট্টগ্রামকে অবহিত করে।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতঃ উক্ত অপহরনের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল গত শুক্রবার ২৬ আগস্ট আনুমানিক সাড়ে ১০ ফেনী মডেল থানাধীন মহিপাল এলাকা হতে অপহরণের সাথে জড়িত আসামী মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল (৩৪), পিতা- মৃত শাহাবুদ্দিন, সাং- দেবীপুর, থানা ও জেলা- ফেনী, আনোয়ার হোসেন (২৫), পিতা- আবুল হোসেন, সাং- শর্শদী, থানা ও জেলা- ফেনী, আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৬), পিতা- আব্দুল হালিম, সাং- দেবীপুর, থানা ও জেলা- ফেনী, জাহিদ হোসেন (১৫), পিতা-মৃত হারুন বাবুর্চি, সাং- দেবীপুর, থানা ও জেলা- ফেনী এবং রফিকুল ইসলাম আরিফ (২১), পিতা- মোঃ কবির, মাতা- শাহানা বেগম, সাং- ছিলোনিয়া, থানা-দাগনভূইয়া, জেলা- ফেনীকে আটক করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ মুক্তিপনের জন্য মানুষকে অপহরণ করে পরবর্তীতে তাদের জিম্মি করে পরিবার পরিজনের নিকট হতে মুক্তিপন আদায় করে আসছে। গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
