সদরঘাটে চাঁদাবাজি

অপরাধ অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন

রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ

বিশেষ প্রতিবেদক
অনুমোদন আছে শুধু ঘাট শ্রমিক সরবরাহের। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো সদরঘাট। শুধু তাই নয়, ভুয়া ইজারার কথা বলে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে সদরঘাটের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে। নিউ ভিশন ইকো সিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসেছে এমন ভয়ংকর তথ্য। যার নেতৃত্ব আছেন স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিরা। অভিযোগ সত্য হলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে বিআইডব্লিউটিএ।
শতশত লঞ্চের পাশাপাশি যেখানে বাবুবাজার থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত রয়েছে প্রায় ২০টি খেয়া ঘাট। যেখানে প্রায় দুই হাজার ডিঙি নৌকার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় অর্ধ লক্ষ যাত্রী নদী পারাপার করে।
খেয়াঘাটগুলো সরাসরি বিআইডব্লিউটিএর নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা যায়, গায়ের জোরে নিউ ভিশন ইকো সিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা কোন রশিদ ছাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তুলছে।
একজন বলেন, আমরা নিউ ভিশনের হয়ে টাকা সংগ্রহ করছি। এক যাত্রী বলেন, ঘাটে পৌঁছার জন্য ২০ টাকা দেয়া লাগছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএ থেকে শুধু মালামাল ওঠানো নামানোর জন্য শ্রমিক সরবরাহের কাজ নিয়ে পুরো সদরঘাট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে নিউ ভিশন। প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম আর চাঁদাবাজির আসল তথ্য বেরিয়ে আসে নৌকার মাঝিদের সঙ্গে কথা বলার পর। তারা জানান, খাজনার নামে স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতিদিন নৌকা প্রতি ৮৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।
এক নৌকার মাঝি বলেন, দৈনিক ১০০ টাকা ঘাটে খাজনা দিতে হয় আমাদের।
আরেক মাঝি বলেন, টাকা নেয়ার পর কোন রশিদ, বা কাগজ দেয় না।
হিসেব করে দেখা যায়, খেয়া ঘাট বা অন্যান্য সব বাদে শুধু নৌকা থেকেই বছরে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। তবে এসব বিষয় কথা বলতে গেলে প্রথমে সদরঘাট এলাকা তাদের ইজারা নেয়া দাবি করলেও চাঁদার কথা জানতে চাইলে সব অস্বীকার করেন অভিযুক্তরা।
কেরানীগঞ্জ শুভাড্যা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, এটা ইজারা দেয়া হয়েছে, তবে এই ঘাট কোন ইজারা দেয়া হয়নি। এটা বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে শ্রমিকরা নিয়ন্ত্রণ করে।
কেরানীগঞ্জ যুবলীগ নেতা শিপু আহমেদ বলেন, এ রকম অভিযোগ আমরা প্রথম শুনলাম। আমি জানি, ওখানে দেখভালের জন্য একটি সমিতি আছে।
এতো কিছু ঘটলেও বিআইডব্লিউটিএর বন্দর বিভাগ জনবল সংকটের কথা বলে দায় সারতে চাইলেন।
বিআইডব্লিউটিএ বন্দর পরিচালক মো. শফিকুল হক বলেন, যেহেতু সরকারি লোকের অভাব। তারপরেও ৫০ জনের মতো এই এলাকায় এ সমস্ত কাজে নিয়োজিত করেছি।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, বিআইডব্লিউটিএ নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অবৈধ ভাবে টাকা পয়সা আদায় করে, সেটাকে আমরা চাঁদাবাজিই বলবো। সেই ক্ষেত্রে ইজারাদারকে ও বহিষ্কার করবো। নৌ পুলিশের তথ্য মতে, এলোমেলোভাবে চলা এসব ডিঙি নৌকা ডুবে শুধু গত নয় মাসেই সদরঘাটে মারা গেছে ১৭ জন যাত্রী।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *