!!ফলোআপ !! দুদকের অভিযানের পর বদলে গেলো শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিরন্তন সেই চিত্র

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঝটিকা অভিযানের পর বদলে গেছে বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেহারা। চেনাই যেন দায়! গত দুই-তিন দিনের চিত্র দেখে অন্তত এমনটাই বলছেন সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনরা। অভিযোগের বদলে এখন সবার মুখে প্রশংসাই শোনা যাচ্ছে।

আগে যেখানে খুব জরুরি অবস্থায়ও খুব একটা দেখা মিলত না শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের, সেখানে এখন না চাইতেও সবাইকে পাওয়া যাচ্ছে। চিত্র এতটাই আশাব্যঞ্জক যে, সকাল ৮টার মধ্যে আউটডোর এবং ইনডোরে আসছেন চিকিৎসকরা। রোগী দেখার সময়ও তারা বাড়িয়েছেন কয়েকগুণ। একটা অভিযান কীভাবে বদলে দিল একটা সরকারি হাসপাতালের চিত্র, তার যেন অকাট্য প্রমাণ শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যদিও দুদকের ওই অভিযানের বিরুদ্ধে কৌশলে আন্দোলন করছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলেছেন তারা। এক কর্মকর্তার অপসারণও চেয়েছেন।

বুধবার চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার বরাবর এ সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপিও দিয়েছে। তবে এলাকাবাসী ও চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী এবং তার স্বজনরা চাইছেন, এমন অভিযান নিয়মিত চলুক দেশের সব সরকারি হাসপাতালে।

গত মঙ্গলবার অভিযানে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা প্রমাণ পান, সরকারি ডিউটি রেখে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে সময় দেন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এর ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়েন চরম ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায়।

দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট মঙ্গলবার কমিশনে আসা চারটি অভিযোগের বিষয়ে অভিযান চালায়। এর মধ্যে তিনটি অভিযানের প্রাপ্ত সুপারিশ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠির মাধ্যমে পাঠানো হয়। দুদকের পক্ষ থেকে পাঠানো তথ্য থেকে এসব বিষয় জানা যায়।

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ও অন্যদের বিরুদ্ধে নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকা এবং রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দিয়ে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে চেম্বার করার বিষয়ে দুদক হটলাইন-১০৬-এ অভিযোগ আসে। এর ভিত্তিতে দুদকের বরিশাল সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার নেতৃত্বে একটি টিম মঙ্গলবার ওই অভিযান চালায়।
এদিন অভিযান পরিচালনা কালে দুদক টিম সকাল ৯টার সময় অভিযোগে উল্লেখিত মেডিসিন ও নিউরোলজি বিভাগের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে তার কক্ষ, ক্লাসরুম বা ওয়ার্ডে কোথাও পায়নি। ওই সময় তার কক্ষটি তালাবদ্ধ ছিল।

এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য হাসপাতালের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীনের দপ্তরে গেলে তাকেও পাওয়া যায়নি। টিম বায়োমেট্রিক হাজিরা বুথ পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পায়, অধিকাংশ (ন্যূনতম ১৫ জন) চিকিৎসক প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে বায়োমেট্রিক হাজিরা দেন এনফোর্সমেন্ট টিম অধ্যক্ষকে মোবাইল ফোনে অভিযানের বিষয়টি জানালে তিনি দপ্তরে এসে হাজির হন। কিন্তু চিকিৎসকদের উপস্থিতি সংক্রান্ত বায়োমেট্রিক হাজিরার তথ্য দিতে তিনি গড়িমসি করেন। এমনকি টিমকে এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে তিনি অস্বীকৃতিও জানান।

অন্যদিকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে সকাল ১০টায় ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তার অনুপস্থিতির বিষয়ে অধ্যক্ষও কোনো জবাব দিতে পারেননি। অভিযান পরিচালনা করার সময় ওই হাসপাতালের মেডিসিন ও অর্থোপেডিক্স বিভাগে গিয়ে দুই-একজন ইন্টার্নি চিকিৎসক ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

অভিযান পরিচালনা কালে সেবাপ্রত্যাশী রোগী, ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা দুদক টিমের কাছে হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেন। তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে এর প্রতিকার চান। প্রতিকার পেলেনও। তবে হাসপাতালটির বর্তমানের এই ভালো চিত্র কদিন থাকে, সেটাই দেখার।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *