নিজস্ব প্রতিবেদক : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির (হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ) সৌদি আরব ফেরত শীর্ষ নেতা ও বোমা বিশেষজ্ঞ মো. আতিকুল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। জানা গেছে এক সময় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতেন গ্রেপ্তারকৃত আতিকুল্লাহ।
গতকাল বুধবার দুই সহযোগীসহ রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২ এর বড় মসজিদ সংলগ্ন মাঠ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি ইউনিট। এর আগে গত মার্চে দেশে ফেরেন আতিকুল্লাহ।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
গ্রেপ্তারকৃত তিনজন হলেন- মো. আতিকুল্লাহ ওরফে আসাদুল্লাহ ওরফে জুলফিকার (৪৯), মো. বোরহান উদ্দিন রাব্বানী (৪২) ও মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ওরফে শামীম (৪৩)।
আতিকুল্লাহকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান।
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, আতিকুল্লাহ হুজি নেতা মুফতি হান্নানের ১৯৯৬ সালে গঠিত কমিটির সাংগাঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে বায়তুল মাল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল নেতা ছিলেন। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথমদিকে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে সৌদি আরব পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেন এবং সাংগঠনিক কাজে একাধিকবার পাকিস্তানে যান। আতিকুল্লাহ আফগানিস্তানফেরত এবং বোমা বিশেষজ্ঞ।
দীর্ঘদিন বিদেশে পলাতক থেকে এ বছর মার্চে দেশে ফিরে সংগঠনের পুরনো সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেন। পাকিস্তান, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আতিকুল্লাহর যোগাযোগ রয়েছে। তিনি আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময়ে ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমর, আইমান আল জাওয়াহিরিসহ আল-কায়েদা-তালেবানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ গঠনের পর এ দলের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ১৯৯৬ সালে যে কমিটি করেছিলেন, তাতে আতিকুল্লাহ ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। পরে তাকে বায়তুল মাল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০০৬ সালের শুরুর দিকে দুবাই হয়ে সৌদি আরবে গিয়ে আত্মগোপন করেন আতিকুল্লাহ। সাংগঠনিক কাজে তিনি একাধিকবার পাকিস্তানে গেছেন বলেও তথ্য পেয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, আফগান ফেরত যোদ্ধা আতিকুল্লাহ একজন বোমা বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর এ বছর মার্চে তিনি দেশে ফিরে হুজির পুরনো সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের আবার সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় করেন। পাশাপাশি নতুন সদস্য সংগ্রহ করে সংগঠনের কার্যক্রম চাঙ্গা করার কাজ শুরু করেন।
সংগঠনকে গতিশীল করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আতিকুল্লাহর ‘সাংগঠনিক সফর’ এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের কথও তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, “পাকিস্তান, দুবাই ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আতিকুল্লাহর যোগাযোগ রয়েছে। আফগানিস্তানের যুদ্ধকালীন সময়ে ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমর, আয়মান আল জাওয়াহিরির মত আল-কায়েদা ও তালেবান নেতাদের সঙ্গেও তার একাধিক বৈঠক হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।”
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন শামীম হুজির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি এবং বোরহান উদ্দিন রাব্বানী ফেনী জেলার দায়িত্বে ছিলেন।
কাশ্মীরের উত্তেজনা ও রোহিঙ্গা সঙ্কটকে পুঁজি করে তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন বলে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ভাষ্য।