জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ৪ জন সহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গত ২৩ আগস্ট, কুমিল্লা সদর এলাকা হতে ৮ তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় নিখোঁজ সংক্রান্তে গত ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। উক্ত ঘটনা গণমাধ্যম সমূহে বহুলভাবে আলোচিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের তৈরি হয়। ফলশ্রæতিতে র‌্যাব উক্ত নিখোঁজের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা গৃহ ত্যাগ করেছে। ইতোমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর, ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে ৪ জন তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‌্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর অভিযানে মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা হতে হোসাইন আহম্মদ (৩৩), পিতা-মাওলানা আবু তাহের, জেলা-পটুয়াখালী,মোঃ নেছার উদ্দিন@ উমায়ের (৩৪), পিতা-মোঃ মতিয়ার রহমান, জেলা-পটুয়াখালী, বণি আমিন (২৭), পিতা-দেলোয়ার হোসেন, জেলা-পটুয়াখালী, ও ৪ জন নিরুদ্দেশ তরুণ ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯), পিতা-ফয়েজ আহমেদ, জেলা-কুমিল্লা, মোঃ হাসিবুল ইসলাম (২০), পিতা-মোঃ সাহাব উদ্দিন, জেলা-কুমিল্লা, রোমান শিকদার (২৪), পিতা-আনিছ শিকদার, জেলা-গোপালগঞ্জ, মোঃ সাবিত (১৯), পিতা-হাসান মীর, জেলা-পটুয়াখালীদের’কে গ্রেফতার করে র‌্যাব। নব্য জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরণের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, নব্য জঙ্গি সংগঠনের কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহায), উগ্রবাদী বই ‘‘নেদায়ে তাওহীদের’’ ৪ কপি, জিহাদী উগ্রবাদ ভিডিও সম্বলিত একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।

কুমিল্লা হতে নিখোঁজ ৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামক ব্যক্তি গত ১ সেপ্টেম্বর, রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। র‌্যাব ফিরে আসা নিলয়’কে তার পরিবারের হেফাজতে রেখে বাকী নিখোঁজ ৭ সদস্য ও জড়িত অন্যান্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। জানা যায় যে, গত ২৩ আগস্ট সকাল ১০ টায় নিলয় সহ নিখোঁজ ৫ তরুণ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় আসে। পরবর্তীতে সোহেলের নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেল ক্রসিং এর নিকট হাউজিং স্টেট এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। নিলয়, সামি ও নিহাল একত্রে গমণ করে কিন্তু ভুলবশত তারা চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যায়। তারা ভুল বুঝতে পেরে রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করলে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের সন্দেহজনক আচরণের কারণে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে দায়িত্বরত পুলিশ তাদেরকে পাশের একটি হোটেলে রেখে যায় এবং পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা রাতের বেলা হোটেল থেকে কৌশলে পলায়ন করে তাদের পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় গমন করলে সোহেল ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদেরকে লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। ঐ বাড়িতে পূর্ব থেকেই অবশিষ্ট তিনজন অবস্থান করছিল। পরবর্তীতে নিলয়, নিহাল, সামি ও শিথিল’কে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহ এর নিকট পৌঁছে দেয় সোহেল। নিয়ামত উল্লাহর তত্ত্বাবধানে ১ দিন থাকার পর সোহেল ০৪ জনকে নিয়ে ঢাকায় আসে এবং নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত ১ ব্যক্তির নিকট বুঝিয়ে দিয়ে নিলয়কে পটুয়াখালীর একটি লঞ্চের টিকিট কেটে পটুয়াখালীতে পাঠায়। পটুয়াখালীতে গ্রেফতারকৃত বনি আমিন নিলয়কে গ্রহণ করে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় নিয়ে যায় এবং গ্রেফতারকৃত হুসাইন ও নেছার@উমায়ের এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বণি আমিন নিলয়কে ৩ দিন তার বাসায় রাখে। তার বাসায় অতিথি আসায় পরবর্তীতে নিলয়কে হুসাইনের মাদ্রাসায় রেখে আসে। নিলয় মাদ্রাসা হতে পলায়ন করে গত ১ সেপ্টেম্বর, কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। নিলয়ের দেয়া তথ্যমতে বনি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা হতে গ্রেফতার করে র‌্যাব। বণি আমিনের তথ্য মতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা হতে নেছার উদ্দিন@ উমায়েরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হুসাইন আহমদ, রিফাত, হাসিব, রোমান শিকদার ও সাবিতকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত হাসিব ও রিফাত ০১ বছর পূর্বে কুমিল্লার কোবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর নিকট সংগঠনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা পায়। পরবর্তীতে হাবিবুল্লাহ তাদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফাহিম @ হাঞ্জালার নিকট নিয়ে যায়। ফাহিম তাদেরকে কুমিল্লার বিভিন্ন মসজিদে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্তি¡ক জ্ঞান প্রদান করত ও ভিডিও দেখাত। এইভাবে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলে। গ্রেফতারকৃত রোমান স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য গত ৪০ দিন পূর্বে নিরুদ্দেশ হয় এবং গ্রেফতারকৃত সাবিত ০২ মাস পূর্বে পটুয়াখালী থেকে নিখোঁজ হয়। জানা যায় যে, সোহেল নামক ব্যক্তির তত্ত¡াবধানে কুমিল্লা হতে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করা হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদেরকে বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার সিরাজ@রবি নামক ব্যক্তির তত্ত¡াবধানে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় সশস্ত্র হামলা, বোমা তৈরি, শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো।

গ্রেফতারকৃত হোসাইন আহম্মদ পটুয়াখালীর একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তার ভাষ্যমতে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন হতে কতিপয় সদস্যদের একীভ‚ত করে ২০১৭ সালে এই নব্য জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সংগঠনটি “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) হিসেবে নামকরণ করা হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *