নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ জাতীয় সংসদে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ প্রতিপাদ্যে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় ভূমি বিষয়ক অংশ আলোচনা নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ উঠে আসে,
(ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থাপনার অটোমেশন) সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় ই-নামজারি, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, ডাক বিভাগের মাধ্যমে খতিয়ান এবং মৌজা ম্যাপ সরবরাহ ইত্যাদি কার্যক্রম স্বল্প সময়ে ও দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ৩টি পাবর্ত্য জেলা ব্যতিত সারাদেশে মোট ৪৮৭টি উপজেলা ও সার্কেল ভূমি অফিস এবং ৩,৬১৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি কার্যক্রম চালু হয়েছে। এর ফলে জনগণের সময়, খরচ, যাতায়াত, ভোগান্তি ও হয়রানি কমেছে। সেবা পোর্টাল (land.gov.bd) অথবা কল সেন্টার (১৬১২২) অথবা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (UDC) চালু করা হয়েছে। এগুলোর সহায়তায় পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কোনো সময় ভূমির মালিকগণ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে তাৎক্ষণিকভাবে কিউআর কোড সমৃদ্ধ দাখিলা পাচ্ছেন।
অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ World Summit on the Information Society (WSIS) পুরষ্কার লাভ করেছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে ই-পর্চা নাগরিকের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া, বিভিন্ন জনবহুল স্থানে কিয়স্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে জমির পর্চা প্রিন্ট করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি কলসেন্টার স্থাপন করা হয়েছে যার মাধ্যমে জনগণ ভূমি সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ জানাতে এবং ভূমি সংক্রান্ত যে কোনো সেবা গ্রহণ করতে পারছে।
ভূমিসেবা সহজীকরণ ও এর মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ই-রেজিস্ট্রেশন ও ই মিউটেশন ব্যবস্থার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে, সাব রেজিস্ট্রার জমি রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে ডিজিটাল রেকর্ডরুম সিস্টেম হতে জমির রেকর্ড অনলাইনে যাচাই করতে পারবেন। একইভাবে রেজিস্ট্রেশনের সংগে সংগে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজিস্ট্রেশন দলিল ও বিক্রীত জমির তথ্য ই-মিউটেশন সিস্টেমের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন, যার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামপত্তন কার্যক্রম শুরু করা যাবে। এভাবে দেশব্যাপী ই-রেজিস্ট্রেশনের সংগে ই মিউটেশনের সংযোগ স্থাপিত হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ হতে থাকবে। ফলে মামলা ও জাল-জালিয়াতির সুযোগও কমে আসবে।
ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে অধিগ্রহণকৃত সকল জমি এবং সায়রাত মহাল সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে আপলোড করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জলমহাল, বালুমহাল, খাসজমি, অর্পিত সম্পত্তি, হাটবাজার, চা-বাগান, চিংড়িমহাল এবং অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সকল তথ্য এ ‘ভূমি তথ্য ব্যাংক’ এ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে, বন্দোবস্ত প্রদানকৃত জমি, সায়রাত মহালের সকল তথ্য, সরকারি ভূ-সম্পত্তি সংক্রান্ত সকল তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া, জমি অধিগ্রহণ ও বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও ‘ভূমি তথ্য ব্যাংক’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
(ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ হ্রাসের উদ্যোগ) দেশের ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলার সিংহভাগের উৎপত্তি ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে। এ সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার ভূমি সংক্রান্ত আইন-কানুন সংস্কার এবং বিভিন্ন নতুন আইন ও বিধি-বিধান তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভূমি অপরাধ প্রতিকার ও প্রতিরোধ আইন এর খসড়া প্রণয়ন। এটি আইনে পরিণত হলে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচার সম্ভবপর হবে এবং ভূমি নিয়ে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলার সংখ্যা হ্রাস পাবে।
(কৃষিজমি সুরক্ষার উদ্যোগ) কৃষিজমি সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সারাদেশে মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় সারাদেশের জমির ব্যবহারের প্রকৃতি অনুযায়ী ডিজিটাল জোনিং করা হবে। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে দেশের কৃষিজমি সুরক্ষার ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে এবং জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
(ভূমি অধিগ্রহণ ব্যবস্থাপনা) গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণ, মেগা প্রকল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল সহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যবস্থাপনা সফলতার সাথে শেষ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি মন্ত্রণালয় এই ধারা অব্যাহত রাখবে।