নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭ টায় জায়েদা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ৪ জন যাত্রী নিয়ে গাবতলী, ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে গাবতলী থেকে চন্দ্রা পযন্ত আরো ৪৭ জন যাত্রী উক্ত বাসে ওঠেন।
এরপর রাত আনুমানিক ১ টা ২০ মিনিটের সময় উক্ত গাড়ি সৌখিন হোটেল, বগুড়াতে হোটেল বিরতি দেয়। হোটেল বিরতি শেষে উক্ত বাস ৫১ জন যাত্রী নিয়ে পুনরায় পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। এরপর গোবিন্দগঞ্জ পার হওয়ার পরে যাত্রীবেশে ওঠা অজ্ঞাতনামা ৬ জন ডাকাত উক্ত বাসের ড্রাইভার সুমন মিয়া কে ছুরিকাঘাত করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এরপর যাত্রীদের দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছে থাকা নগদ ৭৯,৭০০ টাকা, ১২ টি মোবাইল, ২ টি হ্যান্ড ব্যাগ এবং পাচ আনা ওজনের স্বর্ণের কানের দুল লুট করে নিয়ে। ডাকাত রা বাস যাত্রী মোঃ সুমন মিয়া কেও ছুরিকাঘাত করে।
উক্ত ঘটনায় জাহেদা বাসের ম্যানেজার আপেল মাহমুদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ডাকাত দের আসামী করে পীরগঞ্জ থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৪, তারিখ-১০/১১/২২ ইং, ধারা-৩৯৫/৩৯৭ দঃ বিঃ।
পুলিশ সুপার, রংপুর এর সার্বিক দিকনির্দেশনায়, সহকারী পুলিশ সুপার, ডি-সার্কেলের সহোযোগিতায় ও অফিসার ইনচার্জ পীরগঞ্জ থানার নেতৃত্বে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ অতি দ্রুত উক্ত ডাকাতির ঘটনার ক্লু উদঘাটন করে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল বৃহস্পতিবার ১০ নভেম্বর সকাল ৫ টা ৪৫ মিনিটের সময় অত্র থানাধীন ১৪ নং চতরা ইউনিয়ন এর কাটাদুয়ার সংলগ্ন হলদিবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযান পরিচালনা কালে ৩ জন ডাকাত গ্রেফতার সহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করে।
ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, মোঃ রেজাউল করিম (৩২), পিতা- মৃত জমিন সরদার, সাং- বিলকৃস্নপুর, থানা- রানীনগর, জেলা- নওগা, মোঃ খোরশেদ আলী (৪৫), পিতা- মোঃ চান মিয়া, সাং- বেরাডাংগা, থানা- ঘিউর, জেলা- মানিকগঞ্জ এবং মোঃ জহরুল সরকার (৩৫), পিতা- মৃত হবু সরকার, সাং- বড় শিমুলতলা, থানা- পলাশবাড়ী, জেলা- গাইবান্ধা। এবং তাদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৫ টি চাকু, লুন্ঠিত নগদ ১৯৫০ টাকা এবং ৪ টি মোবাইল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করে।
মোঃ রেজাউল করিম কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় প্রায় দুই বছর আগে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এর টংগী পূর্ব থানাধীন ঝিনুক মার্কেট এলাকায় গিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে থাকে। কিন্তু অধিক টাকা পাওয়ার আশায় সে ডাকাত দলের সাথে যোগ দেয়। সে এ পর্যন্ত মোট ৫/৬ টি ডাকাতির কাজে অংশগ্রহণ করেছে।
মোঃ খোরশেদ আলী কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে সেলফি গাড়ির স্টাফ হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে সে ডাকাতির কাজে জড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে মোট তিনটি মাদক এবং চুরি মামলা আছে।
মোঃ জহরুল ইসলাম কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এর টংগী এলাকায় মাথার চুল বিক্রি করে এবং পাশাপাশি ডাকাতির কাজে জড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪ টি ডাকাতি এবং চুরি মামলা আছে।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা আন্তঃ জেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের দলের সদস্য মোট ৬ জন। তারা গত ৮ নভেম্বর রাত ৯ টায় গাজীপুর জেলার চন্দ্রা থেকে জাহেদা পরিবহনের বাস টিতে যাত্রীবেশে ওঠে। তাদের মধ্যে চার জন ইঞ্জিন কাভারে বসে এবং দুই জন একেবারে পিছনের সিটে বসে। সৌখিন হোটেল, বগুড়াতে হোটেল বিরতিতে তারা তাদের কাজের পরিকল্পনা প্রস্তুত করে।
এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ পার হওয়ার পরে ডাকাত দলের সদস্যরা ড্রাইভার সুমন মিয়া কে ছুরিকাঘাত করে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং ডাকাত দলের একজন সদস্য গাড়ি চালাতে থাকে। একজন বাসের গেটে দাঁড়ায় এবং বাকী ০৪ জন দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখায়ে প্রথমে যাত্রীদের মোবাইল কেড়ে নেয় যাতে তারা কোথাও কল দিতে না পারে। এরপরে তারা যাত্রীদের নগদ টাকা কেড়ে নেয় এবং এক মহিলা যাত্রীর ৫ আনা ওজনের কানের স্বর্ণের দুল কেড়ে নেয়।
বাসটি পীরগঞ্জ থানাধীন বিটিসি মোড় সংলগ্ন শোলাগাড়ী আসলে ডাকাত রা বাস থামায়ে লুন্ঠিত মালামাল সহ বাস থেকে নেমে চলে যায়। যাবার সময় তারা বলে যে, তাদের কাছে বোমা আছে এবং যাত্রীরা চিৎকার করলে তাদের গাড়িতে বোমা মারা হবে।
গ্রেফতারকৃত ৩ জন আসামী কে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।