টার্গেট কিলিংয়ে জঙ্গিরা

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় যারা বাধা দেবে শাস্তি হিসেবে ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ মাধ্যমে তাদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। এজন্য সব সময় নিজেদের কাছে চাপাতি রাখত তারা। সোমবার ভোরে রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার থেকে চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা হলেন- মুফতি সাইফুল ইসলাম, সালিম মিয়া, আহম্মেদ সোহায়েল ও জুনায়েদ। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পরিকল্পনার কথা জানতে পারে র‌্যাব। দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। পূর্বে তারা হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। পরবর্তীতে হরকাতুল জিহাদ ভেঙে গেলে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, ভিডিও, কবিতা, বয়ান, লিফলেট, ল্যাপটপ ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। তারা একটি বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। যা গ্রেপ্তারের পর নস্যাৎ হয়ে গেছে। তবে কী ধরনের পরিকল্পনা ছিল সেটি তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা যাচ্ছে না বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা। জঙ্গিদের লক্ষ্য সম্পর্কে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় যারা বিরোধ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের শাস্তি হিসেবে টার্গেট কিলিং করায়ই ছিল জঙ্গিদের উদ্দেশ্য। এজন্য তারা নিজেদের কাছে চাপাতি রাখত। গ্রেপ্তারদের সূত্র ধরে আমরা সংগঠনের সঙ্গে আরও ২০-২৫ জন সদস্যের লিঙ্ক পেয়েছি। এছাড়া অভিযানের সময় তাদের বেশ কয়েকজন সদস্য পালিয়ে গিয়েছে। তাদের সবাইকে আটকের চেষ্টা চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে এবং যারা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে তাদের মধ্য থেকেই টার্গেট কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। তবে তদন্তের স্বার্থে টার্গেট কিলিং মিশনের তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। জঙ্গিরা দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে গোয়েন্দা সদস্যরা তৎপর থাকায় তারা সফল হতে পারবে না।
যেভাবে জঙ্গিবাদে আগমন : ভোরে যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের একজন মুফতি সাইফুল ইসলাম। তিনি আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গিদের মধ্যে একজন। রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় ‘নৈশ মাদ্রাসায়’ শিক্ষকতা করেন তিনি। ছাত্রজীবনে হরকাতুল জিহাদ করলেও তাদের সঙ্গে সক্রিয়তা কমিয়ে দেন। সব সময় সশস্ত্র জঙ্গিবাদে অংশগ্রহণে আগ্রহ থাকায় পুনরায় আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। সাইফুলের হাত ধরেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন গ্রেপ্তার সালিম মিয়া। রাজধানীতে একটি লিফট কোম্পানিতে সংগ্রাহকের কাজ করেন তিনি। ২০১৩ সালে নৈশ মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে সাইফুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানে উগ্রবাদের কথা শুনতে শুনতে আনসার আল-ইসলামে সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন। সংগঠনের বিভিন্ন ভিডিও, বইপত্র সংগ্রহ ছাড়াও সংগঠন পরিচালনায় চাঁদা দিত। ছাত্রজীবনে হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গ্রেপ্তার জুনায়েদ হোসেন। সাভারের হেমায়েতপুরে একটি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং শিক্ষক তিনি। সাইফুলের মাধ্যমে আনসার আল-ইসলামের জঙ্গে সম্পৃক্ত হন জুনায়েদ। তার মাদ্রাসায় প্রতিনিয়ত সংগঠনের মিটিং হতো। মাহাদি নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে অ্যাপসের মাধ্যমে পরিচয় হয় গ্রেপ্তার আহম্মেদ সোহায়েলের। তার মাধ্যমেই আনসার আল ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারেন। পরে তাদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই দলে যোগ দেন। দীর্ঘ তিনবছর ধরে তিনি এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *