নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা আঃ হালিম (৭২) হত্যার রহস্য উদঘাটন সহ ১ জন কে গ্রেফতার করলো পিবিআই

Uncategorized আইন ও আদালত



নিজস্ব প্রতিনিধি : নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা আঃ হালিম (৭২) হত্যা মামলার ঘটনার সহিত জড়িত আসামী রুবেল কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার তার বোনের বাসা হতে গ্রেফতার করা হয়।

অত্র মামলার বাদী মৃত ভিকটিম বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ হালিম এর মেয়ের জামাতা গত ১ জানুয়ারি এই মর্মে এজাহার দায়ের করেন যে, তার শশুর মৃত ভিকটিম বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ হালিমএর স্ত্রী মৃত্যুবরণ করায় তাহার একমাত্র ছেলে এইচএম মাসুদ (৪২) এবং তার ছেলের স্ত্রী সন্তানদের’কে নিয়ে ফতুল্লা থানার ধর্মগঞ্জ মাওলা বাজারস্থ তাহার নিজ বাড়ীর ২য় তলার ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি বয়ঃবৃদ্ধ হওয়ায় তেমন কোন কাজকর্ম করিত না।

গত ১ জানুয়ারি রাত্রি অনুমান ২টা ৩০ মিনিটের সময় লোক মারফত জানতে পারেন যে, তার শশুড় বাড়ীতে বড় ধরণের ডাকাতি হয়েছে। তৎক্ষনাত তিনি বাড়ীর ভাড়াটিয়াসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান যে, তাহার শশুড় তাহার শয়ন কক্ষের খাটের উপরে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

তখন তিনি তাহার একমাত্র শ্যালক এইচ এম মাসুদ হাসান’কে ঘটনা কি হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদ করলে মাসুদ জানায় গত ২(দুই) দিন পূর্বে তাহার স্ত্রী সন্তান তার শশুর বাড়ী বেড়াতে গেছে। গত ৩১ জানুয়ারি রাত্রি অনুমান ১০ টার সময় বাসার গেইট তালাবদ্ধ করে তার শ্যালক এইচ এম মাসুদ এবং তার বাবা মৃত ভিকটিম বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ হালিম খাওয়া দাওয়া শেষে তাদের নিজ বাড়ীর ২য় তলায় নিজ নিজ কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে।

গত ৩১ জানুয়ারি রাত্র অনুমান ১০ টার পর থেকে ১ জানুয়ারি রাত্র অনুমান ২ টা ১৫ মিনিটের সময় ৩(তিন) দুষ্কৃতিকারী তাহার শ্যালকের রুমে ঢুকে একই উদ্দেশ্যে তার শ্যালেক’কে ঘুম থেকে তুলে ভয়ভীতি দেখাইয়া পাটের দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে মুখ গামছা দিয়ে বেধে রাখে। এরপর তার শশুরের রুমে যায় এবং তার শশুর’কে ভয়ভীতি দেখাইয়া তাহার কক্ষে থাকা আলমারি ও ষ্টীলের কেবিনেটের ড্রয়ার চাবি দ্বারা খুলিয়া আলমারি ও ষ্টীলের কেবিনেটে রাখা অনুমান দেড়/দুই মাস পূর্বে আইএফআইসি ইসলামী ব্যাংক হতে উত্তোলন করা ৩০০০০০০ (ত্রিশ) লক্ষ টাকা এবং তাহার শ্যালকের কক্ষে থাকা ২০০০০০ (দুই) লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট ৩২০০০০০ (বত্রিশ) লক্ষ টাকা লুন্ঠন করিয়া নিয়া যায়।

চলে যাওয়ার সময় আলমারির উপরে থাকা সিসি ক্যামেরার হার্ডডিক্স নিয়া তাহার শশুড় আসামীদের বাধা দিলে করলে আসামীরা তাহার শশুড়’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যায়। আসামীরা চলে যাওয়ার পর তার শ্যালোক এইচ এম মাসুদ হাসান হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় দরজা ধাক্কা—ধাক্কি করে।

একপযার্য়ে তাহার শশুড় বাড়ীর ভাড়াটিয়া মাহিনুর (৪০) এবং তার স্বামী দেলোয়ার (৪৫) এসে তার শশুড়ের ফ্ল্যাটের দরজা খুলিয়া ঘরের ভিতর ঢুকে তার শ্যালোকের হাত ও মুখের বাধঁন খুলে দেয়। উক্ত ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার মামলা নং—০৪,তাং—০১/০২/২০২৩ ইং,ধারা—৩৯৪/৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।

লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি প্রিন্ট মিডিয়া,বিভিন্ন পত্র পত্রিকা,টিভি চ্যানেলে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পিবিআই নারায়নগঞ্জ জেলাও ব্যাপক গুরুত্বের সাথে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে।

পরবতীর্তে অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম(বার), পিিএম এর সঠিক তত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআই নারায়ণগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, পিপিএম, এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটি গত শুক্রবার ১০ ফেব্রুয়ারি স্ব-উদ্যোগে গ্রহন করে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই (নিঃ) মাজহারুল ইসলাম এবং প্রত্যক্ষভাবে সহযোগী এস.আই (নিঃ) শাকিল হোসেন এবং এসআই (নিঃ) কামরুল হাসান মামলাটি তদন্ত করেন।

হত্যাকান্ডের পর হতেই পিবিআই নারায়নগঞ্জ জেলার চৌকস টিম মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করা এবং ঘটনায় জড়িত আসামী গ্রেফতারের নিমিত্তে ব্যাপক তদন্ত কার্যক্রম গ্রহন করে।

তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মামলা গ্রহনের দিনেই পিবিআই নারায়ণগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, পিপিএম , মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মাজহারুল ইসলাম এবং সহযোগী এসআই (নিঃ) শাকিল হোসেন, এসআই (নিঃ) কামরুল হাসানসঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

তদন্তের অংশ হিসেবে মামলার বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ করে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারেন যে, ভিকটিমের পরিবারের পূর্ব পরিচিত অটো ড্রাইভার অত্র মামলার গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রুবেল (২৭) যিনি ঐ পরিবারের নিয়মিত বাজার করাসহ অন্যান্য কাজকর্ম করে দিতেন ঘটনার ২(দুই) দিন পর হতে তাকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। পরবতীর্তে তদন্তকারী টিম এই সংবাদ পাওয়া মাত্র তাকে নিয়ে তদন্ত করে তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় নিশ্চিত হন যে, উক্ত সন্ধিগ্ধ আসামী ঘটনাকালীন সময়ে ভিকটিমের বাড়ীর আশ পাশে অবস্থান করছিলেন।
ঘটনাকালীন সময়ে তার ভিকটিমের বাড়ীর আশপাশে অবস্থান থাকায় এবং ঘটনার পরপরই তিনি পলাতক হওয়ায় তদন্তকারী টিম নিশ্চিত হন যে, উক্ত আসামী ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে।

পরবতীর্তে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার চৌকস টিম তাৎক্ষনিক ভিত্তিতে আসামী রুবেলের অবস্থান সনাক্ত করে ডিএমপি, ঢাকার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গত মামলা অধিগ্রহনের ১(এক) দিন পরেই গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারি, যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার তার বোনের বাসা হতে গ্রেফতার করেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *