খুন করে অপমৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়ার নাটকীয় ঘটনার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার-৩

Uncategorized আইন ও আদালত


নিজস্ব প্রতিনিধি : মেয়েকে উত্যক্তর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস কর্মী হামিদুল ইসলাম @ রবিউল খুন করে অপমৃত্যু চালিয়ে দেওয়ার নাটকীয় ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই গাজীপুর জেলা। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গাজীপুর জেলার কাশেমপুর থানাধীন পূর্ব এনায়েতপুর এলাকা থেকে আসামী সোহেল হাওলাদার (২৭) মোঃ রতন মিয়া (২৫) এবং ইস্রাফিল (৪০) দেরকে গ্রেফতার করা হয়।

ভিকটিম হামিদুল ইসলাম @ রবিউল (২০) বগুড়া জেলার সোনাতলা থানার দিগদাইড় গ্রামে মোঃ ইমদাদুল হক এর ছেলে।

জীবিকার তাগিদে ভিকটিম এবং তার মা হামিদা কাশিমপুর থানাধীন এনায়েতপুর এলাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতো এবং এনায়েতপুর এলাকার জনৈক দুলাল এর বাড়ীতে ভাড়া বাড়ীতে বসবাস করতো। মাঝে মধ্যে ভিকটিম রবিউল তার ভাড়া বাসা সংলগ্ন পলাতক আসামী দুলাল এর অটো গ্যারেজে রাতে ইন্টারনেট/ওয়াইফাই চালাতো।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালের রাত্রি অনুমান ১০ টার সময় ভিকটিম ও তার মা প্রতিদিনের ন্যায় তাদের ভাড়া বাসার শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে।
রাত অনুমান সাড়ে ১১ টার সময় ভিকটিম প্রতিদিনের ন্যায় ইন্টারনেট চালাতে পলাতক আসামী দুলালে অটো গ্যারেজে যায়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০সালে রাত অনুমান সাড়ে ৩ টার সময় ভিকটিমের মায়ের ঘুম ভাঙ্গলে ভিকটিমকে রুমে দেখতে না পেয়ে তাদের বাসা উক্ত অটো গ্যারেজে যায়। সেখানে গিয়ে তার ছেলে ভিকটিম হামিদুল ইসলাম @ রবিউল গ্যারেজের বাঁশের আড়ার সাথে মোটা রঁশি দ্বারা ফাঁস লাগিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। ভিকটিমের মা ডাক, চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন এসে তার ছেলেকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নিচে নামায়।

ঐ ঘটনায় ভিকটিমের মা মোসাঃ হামিদা খাতুন এর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাশিমপুর থানার অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। কাশিমপুর থানা মামলাটি তদন্তকালে ভিকটিম রবিউল এর ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্ত হন। ময়না তদন্ত রিপোর্টে হত্যাকান্ড বলে ডাক্তার মতামত প্রদান করেন।

ভিকটিমের ময়না তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কাশিমপুর থানার এসআই মোশারফ হোসেন নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কাশিমপুর থানার মামলা নং-১৪ তারিখ-২১/০৬/২০২১, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করলে থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট ‘সত্য’ দালিখ করে।

আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করলে পিবিআই গাজীপুর জেলা মামলার তদন্ত শুরু করে।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মোঃ সজিবুল হাসান সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স সহ গত ২০ ফেব্রুয়ারী, দিবাগত রাত্রি অনুমান আড়াই টার সময় গাজীপুর জেলার কাশেমপুর থানাধীন পূর্ব এনায়েতপুর এলাকা থেকে তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আসামি সোহেল হাওলাদার (২৭), পিতা, আঃ বারেক হাওলাদার, মাতা, মোসাঃ জাকিয়া বেগম, সাং, চাকামহিয়া, থানা, কলাপাড়া, জেলা, পটুয়াখালী, বর্তমান ঠিকানা, পূর্ব এনায়েতপুর, সবুজ কানন বাজার সংলগ্ন (নশর মোল্লার বাসার ভাড়াটে), ৩নং ওয়ার্ড, থানা, কাশিমপুর, জিএমপি গাজীপুর, মোঃ রতন মিয়া (২৫), পিতা, মোঃ দুলাল মিয়া, মাতা, মোসাঃ পারভীন বেগম, সাং, পাঠানপাড়া, থানা, সোনাতলা, জেলা, বগুড়া, বর্তমান ঠিকানাঃ পূর্ব এনায়েতপুর, সবুজ কানন বাজার সংলগ্ন (আলালের বাসার ভাড়াটে), ৩ নং ওয়ার্ড, থানা, কাশিমপুর, জিএমপি গাজীপুর, এবং ইস্রাফিল (৪০), পিতা মৃত, ছামেদ আলী প্ররামানিক, মাতা, মৃত রোকেয়া বেগম, সাং, পাঠানপাড়া, থানা, সোনাতলা, জেলা— বগুড়া, বর্তমান ঠিকানাঃ পূর্ব এনায়েতপুর, সবুজ কানন বাজার সংলগ্ন (মাসুদের বাসার ভাড়াটে), ৩ নং ওয়ার্ড, থানা, কাশিমপুর, জিএমপি গাজীপুর দের গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা জানায়, আসামি ইস্রাফিল, রতন, সোহেল ও ভিকটিম রবিউল কাশিমপুরস্থ পূর্ব এনায়েতপুর এলাকায় একই বাড়িতে পাশাপাশি কক্ষে স্বপরিবারে বসবাস করতো। ভিকটিম রবিউল আসামি ইস্রাফিলের বিবাহিত কন্যা টিয়া’কে বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করতো।

বিষয়টি জানাজানি হলে দুই পরিবারের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। আসামি ইস্রাফিল নিষেধ করা সত্ত্বেও ভিকটিম রবিউল টিয়াকে উত্যক্ত করা থেকে নিবৃত না হওয়ায় কন্যার সংসারে অশান্তির কথা ভেবে ইস্রাফিল প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়।
এক পযার্য়ে আসামি সোহেল, ইস্রাফিল, রতন ও অন্যান্য সহযোগী আসামিরা মিলে ঘটনার দিনে আনুমানিক রাত সাড়ে ৯ টায় স্থানীয় দোকানের পাশে বসে পরিকল্পনা করে। রবিউলকে হত্যা না করলে টিয়া’র সংসার টিকবেনা বলে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবতীর্তে গ্রেফতারকৃত আসামিগণ ও তাদের সহযোগী আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলের নিকটে সবুজ কানন কাঁচা বাজারের একটি দোকান থেকে রশি কিনে নিয়ে নিয়ে আসে।

আসামিরা পরামর্শ করে যে, যেহেতু ভিকটিম রবিউল প্রতি রাত ১১/১২টার দিকে গ্যারেজের ভেতরে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে আসলে পূর্ব-পরিকল্পণা অনুযায়ী আসামীরা তাকে হত্যা করে অপমৃত্যুর নাটক সাজিয়ে গ্যারেজের বাঁশের আড়ার সাথে ভিকটিম ববিউলের গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রেখে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। গত ২১ ফেব্রুয়ারী, গ্রেফতারকৃত আসামীরদের আদালতে সোর্পদ করা হলে আসামীরা স্বেচ্ছায় আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পলাতক আসামী দুলালকে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *