কক্সবাজার প্রতিনিধি : শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এ সময় উপকূলীয় এলাকাগুলোয় ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। আর এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কে আছেন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড় ও বন কেটে ঝুঁকিতে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গারা।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রেডক্রস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দমকল বাহিনী বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মী বাহিনীসহ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত আছেন। পাশাপাশি পাহাড়ে অতি ঝুকিঁপূর্ণদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকে আজ সকালে ক্যাম্পে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে বৈঠক করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের মসজিদে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। পাহাড়ে ঝুকিঁপূর্ণ বসতিদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা সৈয়দুল আমিন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কার খবর ক্যাম্পে প্রচার করা হচ্ছে। তার ক্যাম্প পাহাড়ে তীর ও ঝুপড়ি ঘর হওয়ায় তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপদ স্থানে আশ্রয় না নিলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমাদের উপজেলা প্রশাসন পুরো উপজেলাকে নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলার ইউপি সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া আমরা ক্যাম্পকে ঘিরে বিশেষ কিছু উদ্যেগ নিয়েছি। এখানে আমরা সকাল থেকে প্রচারণা চালাচ্ছি। একাধিকবার বৈঠক করেছি। মাইক দিয়ে করণীয় সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় রোহিঙ্গাদের বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেককে আমরা আশপাশের স্কুল বা সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় দিতে পারব। কিন্তু আমাদের যায়গায় সংকটের কারণে হয়তো এসব যায়গায় অনেকে আশ্রয় পাবেনা। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারবেন না আমরা তাদের ক্যাম্পের ভেতর থাকা গোডাউনগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করব। তাছাড়া এ বিষয়ে তাদের আগে থেকেই নির্দেশনা দিয়ে রাখা হয়েছে।
তাছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে শক্ত রশি ও শক্ত খুঁটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশি বাতাসের সময় রোহিঙ্গারা এসব খুঁটি ধরে দাঁড়াতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থিত মসজিদ, স্কুল ও আশপাশের স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রলোতে অবস্থান নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগে অবহেলা না করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিংসহ নানাভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’ এর ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেরও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
উপকূলীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৩টি জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩টি জেলার প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সওজ, এলজিইডিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগ, এনজিও ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানার সময় করণীয় বিষয়গুলো জানিয়ে মাইকিং করে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।