আজকের দেশ রিপোর্ট : ভারতের অযোধ্যায় বিতর্কিত জায়গা নিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বিবিসি বাংলা অনলাইনে প্রকাশিত বেশ কিছু খবর সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বলে অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে পাঠকদের ভেতর ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে নতুন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উস্কে দিতে চাইছে গণমাধ্যমটি।
শনিবার ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে রায় ঘোষণা করেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জায়গাটিতে হিন্দুদের রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মুসলমানদের বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য আলাদা ৫ একর জায়গা বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অযোধ্যার ওই জায়গাটিতে এত দিন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা বাবরি মসজিদের ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা রামের জন্মস্থানের দাবি করে আসছিল। শনিবার দেয়া রায়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে।
এরপর বিবিসি বাংলায় ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময়কার ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে ‘বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর বাংলাদেশে উত্তেজনার দিনগুলো’ শিরোনামে বিতর্কিত সংবাদটি প্রকাশ করা হয়। দু’ঘণ্টা পরে শিরোনামটি পরিবর্তন করে দেয়া হয় – ‘ফিরে তাকানো: ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ নিয়ে ঢাকায় যা হয়েছিল’।
২৭ বছরের আগের পুরনো ক্ষতকে বিবিসি কেন নতুন করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে সামনে আনছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পাঠকদের মধ্যে। বিবিসির মতো পুরনো ও অভিজ্ঞ সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের উস্কানি ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট ও দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিৎ বলে মনে করছেন বিভিন্নজন।
সাধারণ পাঠকের পক্ষ থেকেও বিবিসির প্রকাশিত খবরটির তীব্র প্রতিবাদ করা হচ্ছে। সামাজিকমাধ্যমে বিবিসি তাদের খবরটি শেয়ার করার পর সেখানে নানা মন্তব্য করছেন সচেতন পাঠকরা।
তৌহিদুল আলম নামে একজন লিখেছেন, এটার মানে কি? এটাতো স্রেফ উস্কানি। … এটাকে সাংবাদিকতা বলেনা…
জয়ন্ত বিশ্বাস লিখেছেন, এটা সংবাদ পোর্টাল নাকি উস্কানির মাস্টার? আশা করি বাংলাদেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক এদের প্ররোচনায় পা দেবেন না! তবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত এদের গতিবিধির উপর নজর রাখা।
বিবর্ণ হালদার নামের একজন লিখেছেন, বিবিসিকে বলতে চাই শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে চান। হঠাৎ কেউ নিউজ দেখলে মনে হবে আজই ঘটেছে। কোন ক্ষতি হলে এর দায়ভার বিবিসির।
এমএস শাহীন নামে একজন লিখেছেন, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক নিউজ যা উত্তেজনা সৃষ্টিতেই সহায়তা করবে। বিবিসি বাংলার আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য লিখেছেন, বিবিসি বাংলার এত মাথা ব্যথা কেন? এর আগেও ভুয়া নিউজ পরিবেশন করে বুয়েটের আবরার হত্যার প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল এই বিবিসি বাংলা। কোন কিছু হলে এর দায়ভার কিন্তু বিবিসি বাংলাকেই নিতে হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কথায় আছে, যা ছিল না মনে, তাই আনলি সামনে। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভারতের অভ্যন্তরীণ। তাদের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে। এখানে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে, এ ধরনের খবর প্রকাশ একেবারেই অনুচিত।
তিনি বলেন, কোনোভাবেই শান্তি বিঘিœত হতে পারে এমন কোনো সংবাদই প্রকাশ করা উচিৎ নয়। ২৭ বছরের আগের বিষয় নিয়ে এভাবে খবর প্রকাশ একেবারেই গর্হিত। বিবিসি এর আগেও একটি এমন কাজ করে ক্ষমা চেয়েছে। তাদের মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের কাছে এটা অনাকাঙ্খিত। শুধু বিবিসি নয়, সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে বা সংঘাত সৃষ্টি হতে এমন যেকোনো তথ্য বা সূত্র কোনো গণমাধ্যমেরই প্রকাশ করা উচিৎ নয়।
মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী বলেন, ২৭ বছরের আগের সময় আর এখনকার সময় এক নয়। মানুষের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সবদিকেই পরিবর্তন হয়েছে। অনেক বাস্তবতার পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং এই সমস্ত উস্কানিমূলক কথাবার্তা কারোরই বলা উচিৎ নয়। সবারই শান্তিকামী হওয়া উচিৎ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. এজেএম শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, রায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে, এটি প্রত্যেকেরই মানতে হবে। যদিও রিভিউ করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কথা হচ্ছে, দেশের সম্প্রীতি বা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ঘিরে কোনো অপশক্তি যেন সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।