পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে আপন ভাই কর্তৃক বোন খুনের ঘটনায় দীর্ঘ ৪ বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই

Uncategorized

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ৪ বছর পর গাজীপুরের কোনাবাড়ীর বাঘিয়া এলাকার আলোচিত স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সহ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী উচ্ছাস সরকার (৩০) গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর জেলা।


বিজ্ঞাপন

গত ১২ মার্চ, দিবাগত রাতে অনুমান সাড়ে ৩ টার সময় কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী উচ্ছাস সরকার ভিকটিম মমতাজ বেগম এর আপন ভাই আব্দুর রশিদ সরকারের ভাতিজা।


বিজ্ঞাপন

পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী উচ্ছাস সরকার সহ ভিকটিমের আপন ভাই আব্দুর রশিদ ও তার ছেলে নিলয় সরকার স্কুল শিক্ষিকা ভিকটিম মমতাজ বেগমকে মারধর করা সহ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভিকটিম মমতাজ বেগম (৫৫) স্বপরিবারে পূর্ব নাখালপাড়া, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ডিএমপি, ঢাকায় বসবাস করতেন। তিনি ঢাকার নাকালপাড়াস্থ হলি মডেল কিন্ডার গার্ডেন ইংলিশ বেইজড বাংলা মিডিয়াম স্কুলে সিনিয়র শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

গত ১ মার্চ ২০১৯ সালে বিকাল অনুমান সাড়ে ৪ টার সময় ভিকটিম মমতাজ বেগম বাসা থেকে বের হয়ে তার পিতার বাড়ীর (জিএমপি কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া সাকিনের) উদ্দেশ্যে রওনা হন।

পরের দিন ২ মার্চ ২০১৯ সালে সকাল অনুমান ৮ টায় ভিকটিমের ভিকটিমের চাচাতো বোন মোছাঃ আম্বিয়া (৪৫), স্বামী-মোঃ জহিরুল ইসলাম, সাং-বাঘিয়া, থানা-কোনাবাড়ী, জিএমপি, গাজীপুর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিকটিমের মেয়েদেরকে জানায় যে, কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া ডিসপুকুর পাড়স্থ মন্ডল বাড়ী রোডের পার্শ্বে ইটের দেয়াল বেষ্টিত জনৈক শফিউল্লাহ এর পরিত্যাক্ত বাড়ীর ফাঁকা জায়গায় মমতাজ বেগম এর মৃত দেহ পাওয়া গিয়েছে।

এই ঘটনায় ভিকটিমের বড় মেয়ে মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কোনাবাড়ী থানার মামলা নং-০৩ তারিখ-০৩/০৩/২০১৯ ইং ধারা-৩০২/২০১/ ৩৪ পেনাল কোড আইনে হত্যা মামলা দায়ের করে।

কোনাবাড়ী থানা পুলিশ গত ০৩ মার্চ ২০১৯ হতে ২৫ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত প্রায় ২৩ দিন তদন্ত করার পর তদন্তকালীন সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই গাজীপুর জেলার উপর ন্যস্ত হয়। পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ কাউছার উদ্দিন, পিবিআই গাজীপুর জেলা বিধি মোতাবেক মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যাক্রম শুরু করেন।

পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ কাউছার উদ্দিন এর বদলী হওয়ায় গত ১৫ মে ২০২২ সালে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান, পিপিএম-সেবা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান. বিপিএম-সেবা এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান, পিপিএম-সেবা গত ১২ মার্চ, দিবাগত রাত্রি অনুমান সাড়ে ৩ টার সময় কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিনা এলাকা থেকে আলোচিত স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী উচ্ছাস সরকার গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী উচ্ছাস সরকার জানায়, ঘটনার দিন ভিকটিম অনুমানিক সন্ধ্যার পর ঢাকা নাকালপাড়া হতে কোনাবাড়ী এলাকায় তার আপন ভাই আব্দুর রশিদ সরকারের বাড়ীতে আসে। এরপর ভিকটিম ও তার ভাই আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যগনসহ জমি জমা ও টাকা পয়সা নিয়ে আলোচনায় বসে। আলোচনার একপর্যায়ে ভাই আব্দুর রশিদ ভিকটিমকে টাকা না দিয়ে স্ট্যাম্পে জোর পূর্বক স্বাক্ষর করার জন্য বলপ্রয়োগ করে এবং শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে। এরপর ভিকটিমকে আব্দুর রশিদ এর ছেলে নিলয় সরকার উপস্থিত সবার সামনে ভিকটিমের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

এরপর গ্রেফতারকৃত আসামী আব্দুর রশিদ এর ভাতিজা উচ্ছাস সরকার, আব্দুর রশিদ ও আব্দুর রশিদ এর ছেলে নিলয় সরকারসহ অন্যান্য সহযোগী আসামীগন পরিকল্পনা করে যে, তাদের পার্শ্বর্বর্তী মন্ডল বাড়ীর এলাকায় লাশটি ফেলে রাখলে মন্ডল বাড়ীর লোকজনকে শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যা মামলায় ফাঁসানো সহজ হবে। কারণ মন্ডল বাড়ীর লোকজন ইতোপূর্বে মন্ডল বাড়ীর সাধু হত্যা মামলায় তাদেরকে (গ্রেফতারকৃত আসামী সহ আব্দুর রশিদ ও আব্দুর রশিদ এর ছেলে নিলয় সরকার দেরকে) এজাহার নামীয় আসামী করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত আসামী সহ অন্যান্য সহযোগী আসামীগন ভিকটিমের লাশটি মন্ডল বাড়ী গামী রাস্তা সংলগ্ন পরিত্যাক্ত বাড়ীর বাউন্ডারী মধ্যে ফেলে রেখে চলে যায়।

এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম-সেবা বলেন “ভিকটিমের সাথে আসামীদের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ছিল। ঘটনার দিন ভিকটিম তার আপন ভাই আব্দুর রশিদ এর বাড়ীতে আসে। জমি জমা ও টাকা পয়সার সংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য ভিকটিম এবং আসামীগণ আলোচনায় বসে। আলোচনার একপর্যায়ে টাকা না দিয়েই ভিকটিমকে স্ট্যাম্পে জোর পূর্বক স্বাক্ষর করতে বলে। ভিকটিম উক্ত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় তাকে মারধর করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে এলাকার মন্ডল বাড়ীর লোকজনকে ফাঁসানোর জন্য ভিকটিমের লাশটি মন্ডল বাড়ীর নিকট পরিত্যাক্ত বাড়ীর বাউন্ডারীর ভিতর ফেলে রাখে। গ্রেফতারকৃত আসামি উচ্ছাস সরকার এ মামলার ঘটনায় নিজেকে ও অন্যান্য জড়িতদের ভূমিকা বিস্তারিত বর্ণনা করে গত ১৩ মার্চ, আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *