নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ গত ২৫ এপ্রিল, রাত আনুমানিক সাড়ে ২১ টার সময় কতিপয় দূর্বৃত্তের গুলিতে লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান (৩৫) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম নিহত হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায় নোমান পোদ্দার বাজারে তার সঙ্গে থাকা কর্মীদেরকে বিদায় দিয়ে রাকিবকে সাথে নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে নাগেরহাটের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে নাগেরহাটের কাছাকাছি পৌঁছলে সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাদের গুলি করে পালিয়ে যায়।
গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নোমান ও রাকিবকে পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নোমান কে মৃত ঘোষনা করে এবং রাকিব কে মূমুর্ষু অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর কালে পথে মৃত্যুবরন করে। উক্ত ঘটনায় লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানায় নিহত নোমানের ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উক্ত ঘটনা দেশের সকল সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও নির্মম এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার ও অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবীতে এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। বর্ণিত ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার পরপরই র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের কে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী একটি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ৮ জনের একটি দল কে প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সাথে জড়িত হিসেবে সনাক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর একটি অভিযানিক দল রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে লক্ষ্মীপুর জেলার বশিকপুর ইউনিয়নের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুন মামলার ২নং, ৩নং, ১১নং এজাহার নামীয় আসামীসহ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট মোট ৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন মশিউর রহমান নিশান (৪৫), পিতা- সুজায়েত উল্ল্যাহ, সাং- রশিদপুর পাটোয়ারী বাড়ী, থানা- চন্দ্রগঞ্জ, দেওয়ান ফয়সাল (৩৮), পিতা- এটিএম ছালেহ, সাং- পূর্ব কাজিরখিল, পৌর ০৬নং ওয়ার্ড, থানা- রামগঞ্জ, রুবেল দেওয়ান (৩০), পিতা- হুমায়ুন দেওয়ান, সাং- পশ্চিম শেরপুর (দেওয়ান বাড়ী), এবং মোঃ নাজমুল হোসেন (৩৮), পিতা- মৃত আব্দুল লতিফ, সাং- পশ্চিম শেরপুর (পোদ্দার বাজার), উভয় থানা- চন্দ্রগঞ্জ, সর্ব জেলা- লক্ষ্মীপুর । গ্রেফতারকৃত আসামী মশিউর রহমান নিশান (৪৫) এর বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী রুবেল দেওয়ানের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মারামারি ও হত্যার চেষ্টাসহ ৩টি মামলা রয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনেই উক্ত হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়। অত্র মামলার ১নং আসামী আবুল কাশেম জিহাদী ২০২১ সালে বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান এর নিকট বিপুল ভোটে পরাজিত হয়।
ভিকটিম আবদুল্লাহ আল নোমান লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই। মূলত আব্দুল্লাহ আল নোমানের সাংগঠনিক দক্ষতার কারনেই তার ভাই মাহফুজুর রহমান চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করে।
উক্ত নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে আবুল কাশেম জিহাদী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ও তার ছোট ভাইয়ের উপর প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে উঠে। এরই পরিপেক্ষিতে আবুল কাশেম জিহাদীর মদদে কতিপয় সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আবদুল্লাহ আল নোমানকে হত্যা করে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায় যে, অত্র মামলার ১নং আসামী আবুল কাশেম জিহাদী (৫৭), পিতা- মৃত আব্দুল আজিব, সাং- রশিদপুর (চেয়ারম্যান বাড়ী), ০৭নং বশিকপুর ইউপি, থানা- চন্দ্রগঞ্জ, জেলা- লক্ষ্মীপুর ১৯৯৬ সালে জেহাদী বাহিনী গড়ে তোলে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। সে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে প্রভাব ও আধিপত্ব বিস্তার করে এলাকায় চাঁদাবাজী, টেন্ডার বাজী, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
সে ২০১৩, সালে দত্তপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন শামীম হত্যা মামলা, ২০০০ সালে লক্ষ্মীপুর আইনজীবী নুরল ইসলাম, দত্তপাড়া এলাকার আবু তাহের, বশিকপুর নন্দীগ্রামের মোরশেদ আলম, করপাড়ার মনির হোসেন, উত্তর জয়পুরের সেলিম ভ‚ইয়া ও কামাল হোসেন হত্যা মামলাসহ সাম্প্রতিক চাঞ্চল্যকর বশিকপুর ইউনিয়নের জোরা খুন মামলার প্রধান আসামী।
মামলার প্রধান আসামী আবুল কাশেম জিহাদীসহ বাকি আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে র্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।