আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি——- গোলাম মোহাম্মদ কাদের

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি :  গতকাল  রবিবার, ১৮ জুন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, সরকার ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্ত করেছে। আওয়মী লীগ হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি মিলবে। আওয়ামী লীগ না হলে তাদের জন্য কিছুই নেই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ আর মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি নামেও বিভাজন চলছে। দেশের মানুষ হাজার বছর ধরে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। মুক্তির জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছে, সেই সংগ্রামে আমরা বিজয়ী হয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে।


বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতা পেলেও আমরা মুক্তি পাইনি। আবার স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি নামেও বিভাজন করা হচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপক্ষে কিছু মানুষ ছিলো, তাদের অনেই মারা গেছেন। অনেকের ফাঁসি হয়েছে। এখন নতুন প্রজন্মের মাঝে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ ধুয়া তুলে বিভাজন কেন? আবার মুক্তিযোদ্ধা আর অমুক্তিযোদ্ধা ইস্যুতেও বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন কয়েক লাখ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কেউ কেউ শিশু ছিলো তাদের আওয়ামী লীগ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দলে টানতে চাচ্ছে।

দেশের সাধারণ মানুষদের থেকে তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আলাদা করতে চাচ্ছে। এই বিভাজনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। বিভাজন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে বৈষম্য করেছে। তাই, আওয়ামী লীগ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি।
আজ দুপুরে মুন্সিগঞ্জের জুবিলী রোডের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেস চত্বরে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের একথা বলেন।

এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, গণতন্ত্রের নামে দেশে আওয়মী লীগ প্লাস তন্ত্র চলছে। যেখানে আওয়ামী লীগের সাথে পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, সংসদ ও কর্ম কমিশন সহ সবাই অন্তুর্ভক্ত। তাদের মধ্য থেকে বেছে বেছে দলীয় কর্মী বানিয়েছে। পুলিশ বলে আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কীভাবে পুলিশের প্রার্থী হয়? এইভাবে সবাই মিলে দেশে আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র চালু করেছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে জনগনের তন্ত্র আর রাজতন্ত্র মানে রাজার তন্ত্র।গণতন্ত্র হচ্ছে জনগনের জন্য জনগণ সরকার তৈরী করবে। যারা জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। এখন আওয়ামী লীগ প্লাস তন্ত্র চলছে। তারা আওয়ামী লীগ প্লাস তন্ত্রের জন্য সরকার তৈরী করে, আওয়ামী লীগ প্লাসের স্বার্থ রক্ষায় তারা কাজ করছে। আওয়ামী লীগ প্লাস তন্ত্র চালু করে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করছে। আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষের হতে পারে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি। হাজার বছর ধরে দেশের মানুষ বৈষম্য ও স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে মুক্তি সংগ্রাম করে আসছে। আমরা অত্যাচার ও নিপিড়ন থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই মুক্তি আমরা পাইনি। কোন ভালো কাজই সহজভাবে সম্পন্ন হয় না। ভালো কাজের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে আমরা যেকোন ত্যাগ স্বীকার করবো।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ দুরাবস্থার মধ্যে আছে। বাংলাদেশ এখন খাদের কিনারায়, যে কোন সময় ধংস হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। সরকারের কাছে রিজার্ভ নেই, রিজার্ভের যে হিসাব সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ করা হয়ছে। তার সুদ ও আসল পরিষোধ করলে বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে।

এখন ধার করে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার পূরণ করা হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ থেকে কিছু টাকা পাওয়া যাবে বলে সরকার এখনো বেঁচে আছে। সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে, দেশীয় মুদ্রাও সরকারের হাতে নেই। দেশের ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ব্যাক্তির হাতে দেয়া হয়েছে। তারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে লক্ষ-লক্ষ কোটি বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। দেশের বাংকে কোন টাকা নেই, সরকার সাধারণ মানুষের গলায় গামছা লাগিয়েও কর আদায় করতে পারছে না।

চাকরিজীবীরা বেতন দিয়ে আগের তুলনায় অর্ধেকের কম বাজার করতে পারছেন। দেশের মানুষ মাছ ও মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। দেশের মানুষ জীবন রক্ষাকারী অসুধ ও শিশু খাদ্যও কিনতে পারছে না। খরচ চালাতে না পেরে হাসপাতাল থেকে রুগী বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। তিনি বলেন, মানুষের গলায় গামছা লাগিয়ে যেটুকু ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে তাতে সরকারের সাজসজ্জা ও জাকজমকপূর্ন লাইফস্টাইল চলছে না।

তাই, সরকার নতুন করে টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছেড়েছে। এতে দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, ফলে সকল পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুত নেই, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ দোকানদার, রিক্সাওয়ালা ও স্কুটার চালকরা বাঁচতে পারছে না। বাজেট হয়েছে কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কিছুই নেই। সরকার কী রেশন কার্ড করে সাধারণ মানুষ বাঁচাতে কোন উদ্যোগ নিয়েছে?
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, সরকার ধার কর্য করে মেগা প্রকল্প করছে। সরকার বলে অনেক দিন ক্ষমতায় আছে তাই নাকি দেশের অবস্থা স্থিতিশীল। সেজন্য নাকি অনেক উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়নের নমুনা দেশের মানুষ জানে।

ঢাকা ওয়াসা বর্জ্য নিস্কাষনের জন্য ৩ হাজার ৭শো কোটি টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প করেছে। গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকার বজ্য পরিস্কার করে নদীতে ফেলবে। কাজ শুরু করতে গিয়ে দেখে বর্জ্য নিস্কাশনের পাইপ লাইনের ব্যবস্থা করা হয় নাই। দেশী ও বিদেশী ঋণের টাকায় প্রকল্প করা হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ৫ থেকে ৭ বছর লাগবে এই পাইপ লাইন ঠিক করতে, ততদিনে এই কারখানা নষ্ট হয়ে যাবে। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হলো কার স্বার্থে? এই বিশাল অংকের টাকা খরচ হয়েছে সরকারী দলের লোকজন যেনো লুটপাট করে বিদেশে পাচার করতে পারে।

শতভাগ বিদ্যুত উৎপাদনের কথা বলে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের স্থলে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছে। এজন্য উৎসব পালন করেছে, এখন আমরা বিদ্যুত পাইনা। বিদ্যুতের জন্য কয়লা ও তেল কেনার অর্থ নেই। তাহলে বিদ্যুত প্ল্যান্টগুলো তৈরী করা হয়েছে কেন? টাকা বানানোর জন্য? তিন থেকে চারগুন বেশি খরচে মেগা প্রকল্প তৈরী করা হচ্ছে। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা ব্রীজ করতে ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বাজেট হচ্ছে ঘাটতি বাজেট, ঋণ ছাড়া কোন উন্নয়ণ প্রকল্প হয় না।

অনেক বেশি সুদে ঋণের বাজেটের টাকায় পদ্মা ব্রীজ তৈরী হয়েছে। কিন্তু পদ্মা ব্রীজ বানাতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের স্বল্প সুদের টাকায় নেয়া হয়নি। ওয়াল্ড ব্যাংক বলেছে ঋণ নিলে দুর্নীতি করতে পারবে না। পদ্মা ব্রীজে দুর্নীতি না হলে জনগণের কোন ক্ষতি ছিলো না। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সুদ বছরে একশো টাকায় মাত্র পঞ্চাশ পয়সা ছিলো। কেন আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ঋণ নেইনি? জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আমরা বাহাদুরী করেছি। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা ব্রীজ তৈরীতে ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। গাছপালা কেটে উন্নয়নের নামে দলীয় নেতা-কর্মীদের টাকা বানানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। উন্নয়ণের নামে সকল পুকুর ভরাট করে ব্যবসা করা হচ্ছে। শত শত কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। সুজলা-সুফলা বাংলাদেশকে শশ্মান করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, সংসদে এক এমপি গান গেয়ে বলেছিলেন সাঝিতে নিয়ে নাকি বিদ্যুত বিক্রি করা হবে। এত বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে তা ব্যবহার করার জায়গা থাকবে না। তাহলে এখন দেশে বিদ্যুৎ নেই কেন? রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে ১২ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চায়। আবার ক্ষমতার বাইরে থাকলে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে। আসলে দুটি দলই মানুষের ভোটাধিকারে বিশ^াস করে না।

মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা আহ্বায়ক এডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে এবং জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজুর সঞ্চালনায় ও সদস্যসচিব জানে আলম এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন – জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ জামাল হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ নোমান মিয়া, জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন -মোঃ হান্নান খান, আব্দুল হাকিম,শেখ মুহাম্মদ মুজাহিদুল হক, ইসমাইল হোসেন রাহাত, দেলোয়ার হোসেন খান বাদল , মোঃ আসাদুজ্জামান বাবুল,আরিফ উজ্জামান দিদার।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন – প্রেসিডিয়াম সদস্য – মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এডভোকেট জহিরুল হক, মাসরেকুল আজম রবি, ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আরিফুর রহমান খান, সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, সম্পাদকমন্ডলীর মধ্যে মোঃ হুমায়ুন খান, এম এ, রাজ্জাক খান, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন দেওয়ান ,এম এ সোবহান, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ সামছুল হুদা মিয়া, জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন – আলহাজ্ব মোঃ জয়নাল আবেদীন,গোলাম কাদির, ফারুক আহমেদ, মোঃ রফিক উল্লাহ সেলিম, মোঃ নূর হোসেন, মোঃ মোনায়ম হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা মফিদুল ইসলাম, কাঁকন, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জান্নাতুল আসাদ ওনশি, হাজি মোহাম্মদ লিয়াকত খান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *