পিবিআই এর হাতে গ্রেফতার ইজিবাইক চালক হত্যা মামলার প্রধান আসামি।
নিজস্ব প্রতিনিধি : যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানাধীন গদখালী সাকিনস্থ মোঃ জসিম উদ্দিন এর পুত্র রাশেদ উদ্দিন(২৫) পেশায় একজন ইজিবাইক চালক। রাশেদ উদ্দিন প্রতিদিনের মতো গত ২ মার্চ ২০২৩ সকাল অনুমান ৭ টার সময় নিজ বাড়ী থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়। সন্ধ্যায় সে বাড়ীতে না ফেরায় তার মা রেহেনা খাতুন রাশেদ উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে রাত ৮ টার সময় কথা বলে।
এরপর থেকে রাশেদ উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন ৩ মার্চ ২০২৩ অনুমান ১১ টার সময় রাশেদ উদ্দিনের পিতা জসিম উদ্দিন ঝিকরগাছা থানায় নিখোঁজ জিডি করার জন্য গিয়ে জানতে পারেন যে, অভয়নগর থানায় একটি অজ্ঞাত মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জসিম উদ্দিন রাশেদ ভুইয়াকে সনাক্ত করলে অভয়নগর থানা পুলিশ মৃত রাশেদ ভূইয়ার সুরতহাল প্রস্তুত করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য মৃত দেহের ময়নাতদন্তের উদ্দেশ্যে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। জসিম উদ্দিনের ধারনা অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা রাশেদ উদ্দিনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে হত্যা করে তার নিকট থাকা ইজিবাইক চুরি করে নিয়ে গেছে।
এ সংক্রান্তে নিহতের পিতা জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে যশোর জেলার অভয়নগর থানার মামলা নং-০২, তারিখ-০৩/০৩/২০২৩, ধারা-৩০২/৩৭৯/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। হত্যা মামলাটি পিবিআই, যশোর জেলা স্ব-উদ্দ্যোগে গ্রহণ করে মামলার তদন্তভার এসআই (নিঃ) ডিএম নুর জামাল হোসেন এর উপর অর্পণ করা হয়।
উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে পিবিআই, যশোর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম, অ্যাডিশনাল আইজি, বাংলাদেশ পুলিশ এর সঠিক তত্ত্ববধান ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্ত্বে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) ডিএম নুর জামাল হোসেন, এসআই (নিঃ) আসিস দাশসহ যশোর জেলার চৌকস দল অভিযান পরিচালনা করে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘটনার সাথে জড়িত আসামী জান্নাত আক্তার@ আয়েশা (২২) এবং মোঃ মেহেদী হাসান @ মিলন (২৩), ০৩। মোঃ রিমন বিশ্বাস @ বাবু (২২) কে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।
উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে অন্য পলাতক আসামী মোঃ আব্দুস সালাম@বিষু (৩২), পিতা- খোরশেদ আলম, সাং-বিরামপুর, থানা-কোতয়ালী, জেলা- যশোরকে র্যাব যশোরের সহায়তায় গতকাল রবিবার ৯ জুলাই রাত ১২ টা ৫ মিনিটের সময় মনিরামপুর থানাধীন রাজগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামী মোঃ আব্দুস সালাম@বিষু (৩২) সংঘবদ্ধ ইজিবাইক ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির সদস্য। তারা যশোর জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় ইজিবাইক ও ভ্যান ছিনতাই করে পরস্পর যোগসাজসে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। আসামী মেহেদী হাসান মিলন, মোঃ রিমন বিশ্বাস @ বাবু, মোঃ আব্দুস সালাম@বিষু একত্রে ভিকটিম রাশেদের ইজিবাইকটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
সেই পরিকল্পনানুযায়ী আসামী মেহেদী তার স্ত্রী জান্নাত আক্তার @ আয়েশাকে নিয়ে ভিকটিম রাশেদের ইজিবাইকটি রিজার্ভ ভাড়া করে যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন ধোপাদী সাকিনস্থ উলুর বটতলা হতে মশরহাটিগামী ইটের সলিং রাস্তার ডান পাশে পৌছালে আসামী মেহেদী হাসান মিলন ইজিবাইক থামিয়ে নিজের পরনে থাকা রাবারের বেল্ট খুলে ভিকটিম রাশেদের গলায় ফাঁস দিয়ে জোরে টেনে ধরে। আসামী জান্নাত আকতার @ আয়েশা ভিকটিমের দুই পা চেপে ধরে।
ভিকটিম রাশেদ উদ্দিনের শরীর নিস্তেজ হলে আসামী মেহেদী হাসান মিলন ও তার স্ত্রী আয়েশা একত্রে ভিকটিমের মৃতদেহ ঘটনাস্থলের পাশে থাকা জনৈক মোঃ আজিজুর রহমান সরদার এর মাছের ঘেরের পানির মধ্যে ফেলে দেয়। তারপর আসামীরা ভিকটিমের ইজিবাইক রাজারহাট এলাকায় এনে গ্রেফতারকৃত আসামী আব্দুস সালাম@বিষু নিকট বিক্রি করার জন্য দেয়।
পরবর্তীতে মোঃ আব্দুস সালাম@বিষু উক্ত ইজিবাইকটি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ বিল্লাল হোসেন এর নিকট রাখে। আসামী বিল্লাল হোসেনের গ্রেফতার পূর্বক জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে ভিকটিমের ব্যবহৃত ইজিবাইকটি গত ৫ মার্চ ২০২৩ উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।
আসামী মেহেদী হাসান@মিলন ও তার স্ত্রী আসামী জান্নাত আকতার@ আয়েশাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আসামী মোঃ আব্দুস সালাম@বিষু (৩২) গতকাল রবিবার ৯ জুলাই আমলী আদালত অভয়নগর, যশোর আদালতে সোপর্দ করা হয়। উল্লেখ্য যে উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি ও ছিনতায়ের একাধিক মামলা রয়েছে।