নিজস্ব প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন খোড়ারগাঁতী গ্রামস্থ জনৈক মোঃ আমজাদ শেখ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। গত ১ জানুয়ারী ২০২৩ দিবাগত রাত্রি অর্থাৎ ইং-০২/০১/২০২৩ তারিখ রাত্রি অনুমান ১ টার সময় ৬ জন অজ্ঞাতনামা আসামী যাদের প্রত্যেকের মুখ মাফলার দিয়ে বাঁধা অবস্থায় বাদীর বাসায় অনধিকার প্রবেশ করে।
প্রবেশকৃতদের মধ্যে একজন এসআই মামুন পিবিআই, সিরাজগঞ্জ এবং অন্যরা এসআই মামুন এর লোক পরিচয় দিয়ে বাদীকে মাদক ব্যবসায়ী বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাদীর নিকট ২০,০০০ ( বিশ হাজার) টাকা দাবী করে। বাদী ভয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদেরকে ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা দিলে তারা টাকা নিয়া চলে যায়।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
পরে ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ সকাল অনুমান সাড়ে ১০ টার সময় উক্ত অজ্ঞাতনামা আসামীরা আবারও মাফলার পরা অবস্থায় বাদীর বাসায় গিয়ে গেট ভেঙ্গে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশের সময় বাদীর ছোট ভাই ও বড় ভাই মোঃ আক্তার শেখ এর স্ত্রী বাঁধা দিলে অজ্ঞাতনামা আসামীগন তাদেরকে পিবিআই এর লোক পরিচয় দিয়ে পিস্তল(খেলনা পিস্তল) দেখিয়ে ভয় দেখায়।
অজ্ঞাতনামা আসামীরা বাদীর বসত ঘরে অনধিকার প্রবেশ করে ঘরে থাকা দুইটি বড় স্টিলের বাক্সের তালা ভেঙ্গে বাক্সে থাকা নগদ ১১,০০০ (এগার হাজার) টাকা ও একজোড়া স্বর্ণের দুল, ওজন অনুমান ১০ আনা, মূল্য অনুমান ৫৫,০০০ টাকা ও একটি বিদেশী টর্চ লাইট, মূল্য অনুমান ৩,০০০ টাকা বের করে নিয়ে যায়। আসামীগন বাদীর বাসা থেকে চলে যাওয়ার সময় একটি খাম বাদীর ভাবীর হাতে দিয়ে যায়। উক্ত খামে থাকা মোবাইল নং-০১৭২৬-৮০৩৩৭৮ তে ফোন করে যোগাযোগ করতে বলে।
এছাড়াও খামের ভিতরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ পুলিশের মনোগ্রাম যুক্ত একটি কাগজ, যাতে “সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ পুলিশ পিবিআই সিরাজাগঞ্জ শাখা, ক্রাইম এন্ড অপরশন ও মোঃ আল-মামুন (এসআই), পি.বি.আই, সিরাজগঞ্জ ক্রাইম এন্ড অপরশন” লেখা ও স্বাক্ষর করা সহ আরো বেশ কিছু লেখা আছে এবং খামের উপরেও “সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ পুলিশ পি. বি. আই সিরাজগঞ্জ শাখা, ক্রাইম এন্ড অপরশন” লেখা আছে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে বাদী সিরাজগঞ্জ সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ থানার মামলা নং-১৪,তারিখ-০৪/০২/২০২৩খ্রিঃ,ধারা-১৪৩/৪৪৮/৩৮৫/৩৮৬/১৭০/৪০৬/৪২০/৩৮০ পেনাল কোড মামলা দায়ের করেন।
থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি পিবিআই, সিরাজগঞ্জ টিম ছায়া তদন্ত করতে থাকে। মামলাটি পিবিআই কর্তৃক গত ৫ ফেব্রুয়ারিতে মামলাটি অধিগ্রহন করে তদন্তভার এসআই (নিঃ) মোঃ ইমরান হোছাইন এর উপর অর্পন করা হয়।
মামলাটি তদন্তকালে পুলিশ সুপার, পিবিআই, সিরাজগঞ্জ এর দিক নির্দেশনায় মামলার সন্ধেহভাজন আসামি মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৯), পিতা-মোঃ আব্দুল মজিদ, মাতা-মোছাঃ জামিলা খাতুন, সাং-সাহেদ নগর বেপারীপাড়া, ইব্রাহীম @ মোন্নাফ (২৫), পিতা-মফিজ উদ্দিন, মাতা-মরিয়ম, সাং-টুকরা ছোনগাছা, ইকবাল চৌধুরী @ বাবু (৫২), পিতা-লুৎফর চৌধুরী, মাতা-শান্তি বেওয়া, সাং- ছোনগাছা দক্ষিণ, মোঃ সাগর আলী @ শহিদুল (৪০), পিতা-মৃত মোজাহার আলী, মাতা-মোছাঃ সুরুতজান, সাং-দত্তবাড়ী, মোঃ বাবু মিয়া (৩২), পিতা-মৃত নুরুল ইসলাম, মাতা-মোছাঃ-কামনা খাতুন, সাং-চিলগাছা, মোঃ রুহুল আমিন(৩৭), পিতা-মোঃ রফিকুল ইসলাম, মাতা-মোছাঃ কহিনুর, সাং-পশ্চিম দত্তবাড়ী, সর্ব থানা-সিরাজগঞ্জ ও জেলা-সিরাজগঞ্জ’দেরকে গ্রেফতার করা হয়।
অতিরিক্ত আইজিপি, পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই সিরাজগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করিম এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মোঃ ইমরান হোছাইন মামলাটি তদন্ত করেন।
এসআই (নিঃ) মোঃ ইমরান হোছাইন মামলাটি তদন্তকালে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৯), পিতা-মোঃ আব্দুল মজিদ, মাতা-মোছাঃ জামিলা খাতুন, সাং-সাহেদ নগর বেপারীপাড়া, ইব্রাহীম @ মোন্নাফ (২৫), পিতা-মফিজ উদ্দিন, মাতা-মরিয়ম, সাং-টুকরা ছোনগাছা, ইকবাল চৌধুরী @ বাবু (৫২), পিতা-লুৎফর চৌধুরী, মাতা-শান্তি বেওয়া, সাং- ছোনগাছা দক্ষিণ, মোঃ সাগর আলী @ শহিদুল (৪০), পিতা-মৃত মোজাহার আলী, মাতা-মোছাঃ সুরুতজান, সাং-দত্তবাড়ী এবং মোঃ বাবু মিয়া (৩২), পিতা-মৃত নুরুল ইসলাম, মাতা-মোছাঃ-কামনা খাতুন, সাং-চিলগাছা সর্ব থানা-সিরাজগঞ্জ ও জেলা-সিরাজগঞ্জ’দেরকে গ্রেফতার করেন।
আসামীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৮ জুন, রাতে মোঃ রুহুল আমিন (৩৭), পিতা-মোঃ রফিকুল ইসলাম, মাতা-মোছাঃ কহিনুর, সাং-পশ্চিম দত্তবাড়ী, থানা: সদর, সিরাজগঞ্জকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য তারা পুলিশ, পিবিআই পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এলাকার বিভিন্ন লোককে ভয়ভীতি দেখিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই করে টাকা আদায় করত।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা বাদীর বাড়ীর ঘটনা ছাড়াও পুলিশ, পিবিআই পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সদর থানাধীন বালিঘুঘরি গ্রামের জনৈক আনন্দ এর বাড়ি হতে নগদ টাকা ও চিলগাছা গ্রামের জনৈক ফরিদের কাছে থেকে নগদ ২৫,০০০ (পচিশ হাজার) টাকা এবং বাড়ীর আলমারি হতে স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল নিয়ে আসে বলে স্বীকারোক্তি দেয়।
পিবিআই কর্তৃক গ্রেফতারকৃত সন্ধেহভাজন আসামী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৯), পিতা-মোঃ আব্দুল মজিদ, মাতা-মোছাঃ জামিলা খাতুন, সাং-সাহেদ নগর বেপারীপাড়া, ইব্রাহীম @ মোন্নাফ (২৫), পিতা-মফিজ উদ্দিন, মাতা-মরিয়ম, সাং-টুকরা ছোনগাছা, ইকবাল চৌধুরী @ বাবু (৫২), পিতা-লুৎফর চৌধুরী, মাতা-শান্তি বেওয়া, সাং-ছোনগাছা দক্ষিণ, মোঃ সাগর আলী @ শহিদুল (৪০), পিতা-মৃত মোজাহার আলী, মাতা-মোছাঃ সুরুতজান, সাং-দত্তবাড়ী, সর্ব থানা-সিরাজগঞ্জ ও জেলা-সিরাজগঞ্জ, আসামিরা গত ৬ জুলাই, নিজেদের দোষ স্বীকার করে স্বেচ্ছায় আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়।