রাষ্ট্রপতির জন্য রাস্তা বন্ধ মানলেন না নেপালিজরা

আন্তর্জাতিক

সন্ধ্যে বেলা। নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী নিজের মহারাজগঞ্জের বাসভবন ‘শীতল নিবাস’ থেকে ভদ্রকালিতে সেনা সদরদফতরে যাচ্ছিলেন। সেজন্য ভদ্রকালি থেকে লাইনচোর পর্যন্ত এলাকায় সব ধরনের যান ও জনচলাচল বন্ধ করে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। ১০, ২০ এবং ৩০ মিনিট ছাড়িয়ে এই অচলাবস্থা যখন ৪০ মিনিটে গড়ায়, তখনই জটে আটকে পড়া লোকজনের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। প্রথমে হৈ-হুল্লোড়, হর্ন বাজানো এরপর ট্রাফিক পুলিশের বাঁধা ভেঙেই রাস্তায় নেমে পড়ে লোকজন।


বিজ্ঞাপন

গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যে বেলার এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেদিন রাতে ফেসবুক-টুইটারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পোস্ট হওয়ার পর এটি হাজার হাজারবার শেয়ার হয়েছে। শেয়ারকারীরা প্রতিবাদের ওই ধরনটিকে সাধুবাদ জানিয়ে ‘ভিআইপি বহরের’ কারণে নিজেদের ভোগান্তির কথাও তুলে ধরেন।


বিজ্ঞাপন

ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন ‘ফারকধর.কম’ নামে একটি অনলাইন নিউজপোর্টালের কামাল বিস্তা। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ট্রাফিকের কর্মকর্তারা যানবাহন ও লোকজনকে ৪০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে আটকে রাখছিলেন। এমনকি রাষ্ট্রপতির বহর চলে যাওয়ার পরও সাধারণ যানবাহনকে চলতে দেওয়া হচ্ছিলো না।

ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে বিস্তা বলেন, প্রথমে একজন আরোহী বাইক থেকে নেমে দীর্ঘসময় আটকে রাখায় ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাফিক কর্মকর্তার সঙ্গে বচসায় জড়ান। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তিনি জনসাধারণের চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলতে থাকেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে এবার আশপাশের লোকজনও ট্রাফিক কর্মকর্তার সঙ্গে বাহাসে জড়ান। তারা চেঁচামেচি শুরু করেন। হর্ন বাজাতে থাকেন বাইকাররা। কেউ কেউ চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘এই রাস্তা জনগণের, রাষ্ট্রপতির নয়। আমরাই রাষ্ট্রপতি বানিয়েছি। এটা জনগণের চলাচলের রাস্তা, রাষ্ট্রপতি ‘সাবারী’ (বাহাদুর) আমাদের এতোক্ষণ ধরে আটকে রাখতে পারেন না।’ এক পর্যায়ে বাইকাররা বাধা ডিঙিয়ে চলতে থাকেন, তখন ট্রাফিক কর্মকর্তাদের অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না।

নিজের সংবাদমাধ্যমের জন্য ভিডিওটি গ্রহণ করলেও বিস্তা ভাবেননি এটি এভাবে ছড়িয়ে যাবে। তবে তিনি আশা করেন, এই প্রতিবাদ কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে এবং তাদের এসব ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠার তাগাদা দেবে।

নেপালের বেসরকারি সংস্থা ফ্রিডম ফোরামের ফটোগ্রাফার প্রমোদ ভট্টরায় বলেন, ভিডিওটিতে প্রতিবাদের ধরন আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। কারণ এ ধরনের ভিআইপি বহরের কবলে প্রায়ই পড়তে হয় আমাকে। নেপালে কোনো রাজতন্ত্র না থাকলেও এখানে এসব ঘটনা নিয়মিত হয়ে গেছে।

গ্রাম উন্নয়ন বিষয়ক পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি মিলন বাগালে বলেন, যখন কোনো ভিআইপি বহর সাইরেন বাজিয়ে যায় তখন নিজেকে বন্দি মনে হয়। কারণ আমি হাঁটতে পারি না, চলতে পারি না। এই প্রতিবাদটাকে সরকারের উচিত খোলা-চোখে দেখা এবং পরবর্তীতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতিতে লোকজনকে ভুগতে না হয়, তার ব্যবস্থা নেওয়া।

ভিডিওটি শেয়ার করে নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান দেম্বর চেমগঞ্জ বলেন, ‘বিশ্বে অল্প কিছু দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানই এভাবে রাস্তায় চলাচল করে থাকেন। আপনি নরওয়ে, সুইডেন, স্পেন বা অন্য উন্নত দেশগুলোর দিকে দেখুন, সেখানে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরা সাধারণ লোকজনের সঙ্গে রাস্তায় সাইকেল চালান, হাঁটাহাঁটি করেন। আমাদের দেশ নাকি প্রজাতন্ত্রী, কিন্তু তাদের আচরণ কি তাই বলে?’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *