বিশেষ প্রতিনিধি (কাউখালী,ভান্ডারীয়া, নেছারাবাদ) পিরোজপুর থেকে ফিরে : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী- নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। নানা সভা- সমাবেশ, গনসংযোগ, দোয়া ও সমর্থন চেয়ে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন প্রচারণা চোখে পড়ছে। সেই সাথে প্রয়াত নেতাদের কবর জিয়ারত ও প্রবীণ নেতৃবৃন্দের খোঁজ খবর নেওয়া সহ সামাজিক এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করে এলাকায় সফর করে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন অনেকেই। অনেকেই দলের অবহেলিত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবরও নিচ্ছেন।
জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার নতুন আসন বিন্যাসের পর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বেশ তৎপর হয়ে ওঠেন। প্রার্থী হতে এলাকায় জানান দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। নির্বাচনী তৎপরতায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নেতৃবৃন্দও কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নানান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের শুভেচ্ছা বিনিয়ম ছাড়াও এলাকায় সফর বাড়িয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতা কর্মীরা। অন্য দিকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীও তাদের কৌশলী তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
পিরোজপুর জেলাধীন নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলা আছে সংসদীয় আসন অদলবদলের মধ্যে। ওই উপজেলাটি একসময় ছিল বরিশালের বানাড়ীপাড়া উপজেলার সাথে যুক্ত নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) ও বানারীপাড়া আসন হিসেবে। আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই জেলার যুক্ত থেকে মুক্ত করে নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী)কে পিরোজপুর জেলার ২ নং আসন নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী), কাউখালী, ভান্ডারীয়ার সাথে সংযুক্ত করেন নির্বাচন কমিশন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে আবারও পরিবর্তন হয়ে পিরোজপুর-১ আসন নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) পিরোজপুর, নাজিরপুরের সাথে সংযুক্ত হয়।ওইসময় প্রবল আপত্তির পরেও পিরোজপুর জেলার ৯ লাখ ৬৯ হাজার ১৩৮ ভোটারের মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫১১ জন ভোটার নিয়ে পিরোজপুর-১ আসন। বাকী অর্ধেক ভোটার নিয়ে পিরোজপুর-২ ও পিরোজপুর-৩ আসন গঠিত হয়। এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে ওই আসন পুনঃবিন্যাস করে চলতি ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছেন। এ আসন বিন্যাসে ভোটার সংখ্যার বৈসম্য কিছুটা কমেছে। এবারে স্বরূপকাঠি পিরোজপুর-২ আসনে।
ওই আসনে নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) কাউখালী ও ভান্ডারিয়া উপজেলায় মোট ভোট ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৯৫ জন। এ বিন্যাসে সন্তুষ্ট না হওয়ায় পিরোজপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। যার শুনানী তারিখ ধার্য্য আছে।
নতুন করে আসন বিন্যাসের পর পিরোজপুর -২ আসনের আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জেপি মঞ্জু) ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, জাতীয় পার্টি জে.পি চেয়ারম্যান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ইতিপূর্বে সুদীর্ঘ সময় ভাণ্ডারিয়া ও কাউখালীতে তার কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন।
এ আসনে ৯ম জাতীয় সংসদের সাবেক সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম এলাকায় শুভেচ্ছা ব্যানার দিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, এ্যাডঃ কানাই লাল বিশ্বাস, তিনি বলেন সুদীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আছি বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা আপা বলেছেন দুর্দিনের পরীক্ষীত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করবেন যার ধারাবাহিকতায় আমাকে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন আশাকরি পিরোজপুর -২ নং আসনে আমাকে মনোনয়ন দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে আরও সমৃদ্ধ করবেন। অপর প্রার্থী মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজ
তিনি বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। সবসময়ই নির্বাচন করি দলের পক্ষে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে বিগত দিনেও কাজ করেছি ভবিষ্যতেও করব। আমাদের অভিবাবক দলের প্রধান যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা মেনে নিয়ে স্থানীয় জনমানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছি।
জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রশাসক, মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজ গনসংযোগ করছেন। তিনি এলাকায় নানা মানবিক উন্নয়নে সহায়তাসহ এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। তিনি এবার এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এটা পরিষ্কার। এ বিষয়ে তিনি বলেন,দল যাকেই নৌকা মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষেই আমি কাজ করব। ইনশাল্লাহ!
এদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর সাবেক সাধারন সম্পাদক, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, ইসাহাক আলী খান পান্না এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এলকায় নানা কাজে যুক্ত থেকে জনমানুষের মাঝে নিজেকে তুলে ধরছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি দলের প্রতি পূর্ন আস্থা রেখেই পথ চলি। আমার বাড়ী কাউখালী হলেও আমি স্বরূপকাঠি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুবাদে অনেকেই জানেন। যেদিন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি সেদিন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করি, মনে প্রানে ধারন করি। এলাকাবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করি।
এছাড়া ও মাঠে জনসংযোগ করছেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক, সাজ্জাদ সাকীব বাদশা, আসন বিন্যাসের পর থেকে এলাকায় অবস্থান করছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু সংখ্যক নেতা কর্মী নিয়ে এলাকায় গনসংযোগ করছেন।
নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, সৈয়দ সহিদুল আহসান শুভেচ্ছা জানিয়ে পোষ্টার ব্যানার দিয়েছেন।
ভান্তারিয়ার থেকে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) নাঙল মার্কার পক্ষ থেকে মোঃ নাসির উদ্দীন তিনি জাতীয় পার্টি (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ কৃষক লীগ এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ এর কার্যনির্বাহী সদস্য, আলহাজ্ব একেএম আজম খান শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার দিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, আমিনুর রহমান সগির শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার দিয়েছেন।
এছাড়া কাউখালী উপজেলার ৩নং সদর ইউনিয়নের ছোট্ট বিড়ালজুড়ী বাসিন্দা, খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনাস্থ পিরোজপুর জেলা কল্যাণ সমিতির সভাপতি, খুলনার শ্রমিক নেতা, আলহাজ্ব খান মোঃ কবির হোসেন ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোষ্টার দিয়েছেন। এলাকার মানুষের মাঝে সরকারের উন্নয়ণ কর্মকান্ডের লিফলেট বিতরণ করেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন।
অপর দিকে বিএনপির নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার আহ্বায়ক, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম মঞ্জুর পুত্র আহম্মদ সোহেল মঞ্জুর, কাউখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক, এস এমআহসান কবীরের নাম আলোচনায় এসেছে।। জামায়াতের কোন প্রার্থীর নাম পাওয়া যায়নি। যুদ্ধাপরাধ মামলায় অভিযুক্ত আজীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর যেকোন সন্তান প্রার্থী হতে পারেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জামায়াত নেতা জানিয়েছেন।