পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি।
বিশেষ প্রতিবেদক : শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ও চরআত্রা, ভেদরগঞ্জের সখিপুর থানার কাঁচিকাটা এবং জাজিরার কুণ্ডেরচর। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চারটি ইউনিয়ন। বছরের পর বছর পদ্মা-মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়ে আসছিলেন এখানকার বাসিন্দা। কিন্তু মাত্র চার বছরেই পাল্টে গেছে দুর্গম সেই চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান। ক্রমেই ঘুরছে অর্থনীতির চাকা।
জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসনে একেএম এনামুল হক শামীম নির্বাচিত হন এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপরই তার বিশেষ উদ্যোগে ওই জনপদে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায় নদীর তীরবর্তী লাখ লাখ পরিবার। সেই সঙ্গে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এর ফলে এক সময়ের নদী ভাঙনকবলিত এ জনপদ ক্রমেই রূপ নিচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রে।
সরেজমিন গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুরের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এসব চরে আগে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌপথ। আর পদ্মা-মেঘনার ভয়ালগ্রাসের শিকার হতো হাজার হাজার বাড়িঘর। কেউ কেউ ৩ থেকে ৪ বার ভাঙনের শিকার হয়ে বারবার পাল্টেছেন মাথার গোঁজার ঠাঁই। অনেকেই ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
তবে ২০১৯ সালের পরই পাল্টে যেতে শুরু করে এ জনপদের চিত্র। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায় এ জনপদের লাখ লাখ পরিবার। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আসে চরের এ চার ইউনিয়নে। শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। লাগে পরিবর্তনের ছোঁয়া। চারটি চরে
ছোট-বড় মিলে ১০টি হাটবাজার রয়েছে। বিদ্যুৎ পাওয়ায় বাজারগুলোও এখন বেশ জমজমাট। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধিও বেড়েছে। নদীর তীরেই স্থাপন করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মৎস্য সংরক্ষণে গড়ে উঠেছে কয়েকটি বরফকল। নদীর পাড়েই বড় বড় ডকইয়ার্ডে উন্নত মেশিনারিজ দিয়ে ট্রলার, বলগেড নির্মাণ হচ্ছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় সচ্ছলতা ফিরে তাদের সংসারে।
নদীর পাড় এখন পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিচ্ছে। বিকাল হলেই ভ্রমণপিপাসু হাজারো পর্যটক ভিড় জমায় নদীর পাড়ে। সেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন খাবারের বাহারি দোকান, বেকারি, রেস্টুরেন্ট। এ ছাড়া আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা হওয়ায় সহজেই অটোরিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল দিয়ে যাওয়া যায় চরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে।
মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল পদ্মার তলদেশ দিয়ে ১ কিলোমিটার পার হয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে তিনটি চরে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ করা হয় ১০ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র। বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে নদীর ওপর দিয়ে রিভার ক্রসিং টাওয়ার দিয়েও বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে।
নওপাড়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, আমাগো বাজারে অন্তত ২০০ ব্যবসায়ী আছেন। সবাই বিদ্যুৎ পাইছে, কেউ বাকি নাই। আগে সোলার জ্বালাইতাম। ঘরের মধ্যেই আলো ছিল। সন্ধ্যা হইলে মানুষ বেশিক্ষণ বাজারে থাকত না। এহন অনেক রাইত পর্যন্ত মানুষ বাজারে থাকে। আগে এই বাজারে ফ্রিজ ছিল না। এহন অনেক ব্যবসায়ী ফ্রিজ কেনছেন। ফটোকপি মেশিন, কম্পিউটারের দোকানও হইছে। সবদিক দিয়াই কেনাবেচা বাড়ছে।
এলাকার একাধিক প্রান্তিক চাষীরা বলেন , চার-বছর আগেও ভাবিনি আগামো চরে কোনদিন কারেন (বিদ্যুৎ) আইবো। কিন্তু আমরা কারেন পাইছি। এরপরই চরের কৃষি অনেক আউগ্যাইয়্যা গেছে। যেই জমিতে আগে এক ফসল হতো, অহন তাতে দুই-তিন ফসল চাষ করোন যায়।
এলাকার স্বনামধন্য ডকইয়ার্ড মালিক সুমন বেপারি জানান , এ চরের বাসিন্দারা আমার এখান থেকে ট্রলার, বলগেড বানান। বিদ্যুৎ পাইলাম, বেড়িবাঁধ পাইলাম। আমার আগের চেয়ে বেশি আয় হয়।
এলাকার জনসাধারণ ও একাধিক অটোরিকশা চালক বলেন, বিদ্যুৎ পাইছি। আমরা অটোরিকশা কিনছি। এগুলো রাতে চার্জ দেই। সারাদিন ভাড়ায় চালাই।