এডিস নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ সিটির ৯ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান; মশার লার্ভা পাওয়ায় ওয়াসার পাম্প হাউজসহ ১৪ স্থাপনাকে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ  ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে ৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ঢাদসিক)।


বিজ্ঞাপন

অভিযান পরিচালনা কালে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় বনগ্রাম রোডে অবস্থিত ওয়াসার পাম্প হাউজসহ মোট ১৪ স্থাপনাকে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৮ই জুলাই) করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা অঞ্চল-০৪ এর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম রোডে অবস্থিত ওয়াসার পাম্প হাউজে মশার লার্ভা পাওয়ায় পাম্প হাউজটির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আরএফএল এর প্রতিনিধি মো. শামীম হোসেনকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করেন। এ সময় ওয়াসার কেউ সেখানে স্বশরীরে উপস্থিত হননি। পরে বিকাশের মাধ্যমে আরোপিত জরিমানা পরিশোধ করেন।

এছাড়া আজ করপোরেশনের আওতাধীন এলিফ্যান্ট রোড, খিলগাঁও, মালিবাগ, লালবাগ, মানিকনগর, উত্তর মান্ডা, ডগাইর ও উত্তর কুতুবখালী এলাকায় আরও ৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এছাড়াও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার ৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ, কোয়ার্টার, হাসপাতাল, থানা ও মার্কেটসহ আরও ২৮টি স্থাপনা ও স্থানে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

আজকের অভিযানে এক নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী মঞ্জরুল হক ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় ৩০টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করেন। আদালত এ সময় ২টি স্থাপনায় মশার লার্ভা ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।

দুই নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শাহনেওয়াজ ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও এলাকায় ৩৫টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করেন। আদালত এ সময় কোনো স্থাপনায় মশার লার্ভা পায়নি।

এছাড়াও দুই নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহরিয়ার হক ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মালিবাগ এলাকায় ২০টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করেন। আদালত এ সময় ৩টি স্থাপনায় মশার লার্ভা পাওয়ায় ৩ মামলায় ১৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।

তিন নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তায়েব-উর-রহমান ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাগ এলাকায় ৬২টি বাসাবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করেন। আদালত এ সময় ৪টি বাসাবাড়িতে সামান্য পরিমাণে লার্ভা পাওয়ায় কোনো জরিমানা না করে সতর্ক করে দেন।

চার নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম এলাকায় ২৫টি স্থাপনা ও বাসাবাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। আদালত এ সময় ওয়াসার পাম্প হাউজসহ আরও ১টি স্থাপনায় মশার লার্ভা পায় এবং ২ মামলায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।

পাঁচ নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সফি উল্লাহ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকনগর এলাকায় ৩২টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং ৪টি স্থাপনায় মশার লার্ভা পাওয়ায় ৪ মামলায় ১৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।

সাত নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাওসীফ রহমান ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মান্ডা এলাকায় ২৫টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং এ সময় কোনো স্থাপনায় মশার লার্ভা পাননি।

আট নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের ডগাইর এলাকায় ৪৫টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং ১টি স্থাপনায় মশার লার্ভা পাওয়ায় ১ মামলায় ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।

নয় নম্বর অঞ্চলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের যাত্রাবাড়ীর উত্তর কুতুবখালী এলাকায় ৪০টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং ১টি স্থাপনায় মশার লার্ভা পাওয়ায় ১ মামলায় ১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।

আজকের অভিযানে সর্বমোট ৩১৪টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়েছে। এ সময় ১৪টি বাসাবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা পাওয়ায় ১৪ মামলায় সর্বমোট ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

৬৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২৮ স্থাপনায় বিশেষ চিরুনি অভিযান ঃ  কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সমন্বয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় অবস্থিত ৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২৯টি স্থান ও স্থাপনায় বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আজকের অভিযানে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্থান ও স্থাপনার আঙ্গিনা ও চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন বোধে সেখানে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হচ্ছে। এরপর সেসব প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও স্থানে লার্ভিসাইডিং এবং এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব অভিযানে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতীত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করছেন এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে লিফলেট বিতরণসহ নানাবিধ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন।

এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজ অঞ্চল-১ এ ৪টি, অঞ্চল-২ এ ১০টি, অঞ্চল-৩ এ ১৪টি, অঞ্চল-৪ এ ৫টি, অঞ্চল-৫ এ ১৪টি, অঞ্চল-৬ এ ৩টি, অঞ্চল-৭ এ ২টি, অঞ্চল-৮ এ ২টি, অঞ্চল-৯ এ ৫টি এবং অঞ্চল-১০ এ ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা, প্রয়োজন অনুযায়ী ব্লিচিং পাউডার ছিটানো এবং সবশেষে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়।

এছাড়াও আজ সার্কিট হাউজ রোডে সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টার, কাকরাইল মসজিদ শাহবাগ থানা, সোবহানবাগ এলাকায় সচিব কোয়ার্টার ও ডেন্টাল কোয়ার্টার, বাংলা মটর জামে মসজিদ, আল-হেরা জামে মসজিদ, পুকুরপাড় জামে মসজিদ, গ্রীন কর্নার জামে মসজিদ, মেরাদিয়া এলাকার ইয়ামাগাতা হাসপাতাল, আজমীরি জামে মসজিদ, নবাবগঞ্জ ক্লাব বাড়ী, পুরাতন লালবাগ থানা, ইমামগঞ্জ লেন, সিদ্দিক বাজার, গোয়ালনগর এলাকা, কৈলাস লেন, তাঁতী বাজার, বাংলাবাজার, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স, জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সারুলিয়া এলাকার করিম জুট মিলসহ মোট ২৮টি স্থাপনা ও স্থানে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *