নিজস্ব প্রতিবেদক : ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নিধনে স্কুলে স্কুলে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
বুধবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টায় বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করনীয় সম্পর্কে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
বক্তব্যের শুরুতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আইডিয়াল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশাত আজহারের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান ডিএনসিসির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঝুঁকি আছে৷ এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। জমা পানিতে এডিসের লার্ভা জন্মায়। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঘরবাড়ি, বারান্দা, ছাদ, বেজমেন্ট পরিষ্কার রাখতে হবে। কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবে না। ‘তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন’-সবাইকে এটি মানতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গুর কারণে আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র ইশাতের মতো আর কাউকে হারাতে চাইনা। তোমাদের বাবা, মা, চাচা, চাচী, দাদা, দাদী, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের একটি ম্যাসেজ জানাতে হবে যেন কোথাও পানি না জমে। গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হচ্ছে। তোমরা বাড়িতে থাকবে, অনেকে বেড়াতে যাবে কিন্তু সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। মশারী টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে।’
এসময় ডিএনসিসি মেয়র ট্রাকে উঠে এডিস মশার উৎসস্থল-গাড়ীর পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করেন। শিক্ষার্থীরা মেয়রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেল দেওয়ার ও প্রতি শনিবার সকালে দশটায় দশ মিনিট বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করার অঙ্গিকার করে।
উপস্থিত শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘আপনারা শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন করে তুলবেন। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষ, বারান্দা, ছাদ, মাঠসহ অন্যান্য সব জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। অভিভাবকদেরও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করনীয় সম্পর্কে জানাতে হবে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘শুধু সিটি কর্পোরেশন একা নয় বরং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবার সচেতনতা প্রয়োজন। সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সবাই সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘লার্ভা পেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বাসা বাড়িতে লার্ভা পাওয়ায় আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করছে। অভিযান বাড়াতে ডিএনসিসি’র দশটি অঞ্চলের জন্য আরও দশজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। ভবনের বেজমেন্টে যেখানে গাড়ি ধোয়া হয় সেখানে প্রচুর লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা ভবনের ভিতরে বেজমেন্ট, বারান্দা ও ছাদের দায়িত্ব নিবে না। যার যার ভবনের দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে।’
বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে প্রচারাভিযান শেষে ডিএনসিসি মেয়র রামপুরায় একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, একরামুন্নেছা বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং মধুবাগের শের-ই-বাংলা স্কুল এন্ড কলেজে প্রচারাভিযানে অংশ নেন।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রতিটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন।ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন এবং নিজে মাইকিং করে সচেতন করেন।
উল্লেখ্য, গতজাল বুধবার (১৯ জুলাই) ডিএনসিসির চলমান মাসব্যাপী বিশেষ মশক নিধন অভিযানের ১১তম দিনে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ৬টি মামলায় মোট ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
প্রচারাভিযানে অন্যান্যের সঙ্গে ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেঃ জেনাঃ এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহঃ আমিরুল ইসলাম, অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নায়ন, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ লিয়াকত আলী, ৩৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈমুর রেজা খোকন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মিতু আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।