নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের বাসন থানা এলাকায় অপমৃত্যু থেকে হত্যা মামলা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিলকৃত মামলার অধিকতর তদন্তে হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও আসামি আসামি খোকন (৪৫) গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর।
ভিকটিম আছমা আক্তার @ তাহমিনা (২০) স্বামী-নবী হোসেন,সাং-কুষ্টিবাড়ী,থানা-ধর্মপাশা,জেলা-সুনামগঞ্জ,বর্তমানে-মোগরখাল (সিরাজ মৃধার বাড়ীর ভাড়াটিয়া) থানা-বাসন,গাজীপুর মহানগর গাজীপুর ঠিাকানায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
গত ১৭/০৭/২০২১, রাত ১১ টার সময় প্রতিবেশী অন্যান্য ভাড়াটেগণ তাহমিনার ঘরে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে টিনের চালের আড়ার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে আছমা আক্তার @ তাহমিনা (২০) এর মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে মতিয়ার রহমান থানায় সংবাদ দেন। সংবাদের ভিত্তিতে বাসন থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থা হতে নীচে নামিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে ভিকটিম আছমা আক্তার@ তাহমিনা এর বড় বোন শরিফা আক্তার (২৭) এর লিখিত সংবাদের প্রেক্ষিতে বাসন থানার অপমৃত্যু মামলা নং ২২/২০২১, তারিখঃ ১৮/০৭/২০২১, রুজু করা হয়। ময়না তদন্ত রিপোর্টে ভিকটিম আছমা আক্তার @ তাহমিনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে মতামত পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে বাসন থানার এসআই নাহিদ আল রেজা এর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বাসন থানার মামলা নং ৩০, তারিখঃ ২৪/০৯/২০২১ ,ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা রুজু করা হয়।
মামলা রুজু হওয়ার পর বাসন থানা পুলিশ গত ২৪/০৯/২০২১, হতে ২৬/০৫/২০২২, পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে চুড়ান্ত রিপোর্ট সত্য নং ১৫, তারিখঃ ২৬/০৫/২০২২ ,ধারা ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। আদালত স্ব-প্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, বিপিএম এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান মামলার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে
আসামি খোকন (৪৫),পিতা-মৃত আলতু মিয়া,সাং- হারুলিয়া নোয়াপাড়া, থানা- বারহাট্রা, জেলা- নেত্রকোনা,বর্তমানে-মালেকের বাড়ী সাকিনস্থ শাফির বাড়ীর ভাড়াটে, থানা-বাসন,জিএমপি, গাজীপুরকে গ্রেফতার করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী জানায় যে, আসামি’র শ্যালক নবী হোসেন (৩০) পিতা মৃত- আব্দুল্লাহ, সাং-সুনই কুষ্টিবাড়ী, থানা-ধর্মপাশা,জেলা- সোনামগঞ্জ প্রথমে ভিকটিম এর বড় বোন শরীফা আক্তার (২৭) ,পিতা- মোঃ রজব আলী,সাং-খালপাড়া, থানা-ধর্মপাশা,জেলা- সুনামগঞ্জ’কে বিবাহ করেন। উক্ত বিবাহের কাজে সহযোগিতা করেন গ্রেফতারকৃত আসামি খোকন।
পরবর্তীতে নবী হোসেন তার শ্বশুর বাড়ীতে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করাকালিন নবী হোসেনের শালিকা অর্থাৎ ভিকটিম আছমা আক্তার @ তাহমিনা (২০ )-কে ভালবেসে বিবাহ করেন। অতঃপর গ্রেফতারকৃত আসামি খোকনের পরামর্শে গাজীপুর জেলার বাসন থানাধীন মোগরখাল সাকিনস্থ এলাকায় বসবাস করতেন।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর নবী হোসেনের প্রথম স্ত্রী শরীফা গ্রেফতারকৃত আসামি খোকনকে বিষয়টি জানালে খোকনের পরামর্শে নবী হোসেনের প্রথম স্ত্রী শরিফা আক্তার বাসন থানাধীন মালেকের বাড়ী এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। বিষয়টি নবী হোসেন জানার পর শরীফা আক্তারের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামি খোকন শরীফা আক্তারকে বিভিন্ন বাসায় ঝি এর কাজে নিয়োজিত করেন।
এরপর নবী হোসেনের দুই স্ত্রী নবী হোসেনকে যে কোনো একজনের সাথে সংসার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তাঁদের সংসারে মনোমালিন্য সুষ্টি হয়। ঘটনার দিন নবী হোসেন ভিকটিম আছমা আক্তার @ তাহমিনার বাসায় আসলে গ্রেফতারকৃত আসামি খোকনের উপস্থিতিতে স্বামী স্ত্রী’র মধ্যে ঝগড়া হয়।
ঝগড়াকালে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতিসহ শারীরিক নির্যাতন শুরু হলে ভিকটিম তাহমিনা নবী হোসেনের গোপন অঙ্গে আঘাত করে। তখন গ্রেফতারকৃত আসামি খোকন ভিকটিম তাহমিনার হাত চেপে ধরে এবং নবী হোসেন ভিকটিম এর গলা টিপে ধরলে ভিকটিম তাহমিনার শরীর নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামি খোকন তাহমিনা মারা গেছে বুঝতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর আসামি নবী হোসেন ভিকটিম তাহমিনাকে ঘরের টিনের চালের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম বলেন এটি একটি হত্যা মামলা, থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে । পরবর্তীতে আদালত কর্তৃক অধিকতর তদন্ত করার জন্য পিবিআই গাজীপুরে প্রেরণ করলে পিবিআই গাজীপুর সকল তথ্য প্রমাণ বিচার বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আসামি খোকন (৪৫) কে গ্রেফতার করলে মামলার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয় এবং আসামি আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।