মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস- ২০২৩ জাতীয়ভাবে উদযাপিত

Uncategorized আইন ও আদালত আন্তর্জাতিক জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক :  রবিবার  ৩০ জুলাই, ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪৭ তম অধিবেশনে ২৬ জুনকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচার রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং মাদকাসক্তির চিকিৎসার বিষয়ে সর্বসাধারণকে অবহিত ও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতিবছর ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল আযহার ছুটির কারণে সরকার মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের অনুষ্ঠান আমাদরে দেশে ২৬ জুন এর পরিবর্তে ৩০ জুলাই, উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।মাদকের করাল ছোবল থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং মাদকের ভয়াবহতার মর্মস্পর্শী ও করুণচিত্র বিশ্বের সর্বস্তরের জনগণের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে মাদকবিরোধী ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাই এ দিবস পালনের মূললক্ষ্য। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছেঃ”People first: stop stigma and discrimination, strengthen prevention.”


বিজ্ঞাপন

যার বাংলা ভাবানুবাদ হচ্ছে : মানুষই মুখ্য। মাদককে না বলুন, শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলুন ।


বিজ্ঞাপন

দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে গৃহীত কর্মসূচিঃ

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে ৩০ জুলাই,  সকাল ৮ টায় রমনা পার্কের “দক্ষিণ” পূর্ব পার্শ্বে (স্টার গেট এর সামনে) মানববন্ধন কর্মসূচি পালিতহয়। সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হলে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রীবীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের স সম্মানিত সচিব জনাব মো: আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী এবং সভাপত্বি করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ আবদুল ওয়াহাব ভূঞা।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোন মাদক উৎপন্ন হয়না। কিন্তু ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের দুটি বৃহৎ মাদক বলয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এর মধ্যবর্তী স্থানে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় তাদের প্রভাবে বাংলাদেশে অবৈধ মাদকদ্রব্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসব মাদকদ্রব্য মাদক চোরাকারবারীদের মাধ্যমে দেশে অনুপ্রবেশ করছে এবং এর ফলে সমাজের একটি অংশ বিশেষ করে যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নজরদারি ও মাদকবিরোধী প্রচারণা কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বর্তমানে মাদক পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে যুগোপগোগী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনবল ও লজিস্টিক সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় ঢাকায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এবং বিভাগীয় শহরগুলোকে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি সকলকে মাদকের বিরুদ্ধে সমবেত হয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব  বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাঠ প্রশাসন সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সকল কারাগারে মাদক সংক্রান্ত অপরাধে আটক ও বন্দিদের মাঝে নিয়মিত মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কারা বন্দিদের মধ্যে যারা মাদকাসক্ত তাদেরকে কারাগারের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সভাপতি’র বক্তব্যে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের  মহাপরিচালক  বলেন, আমাদের দেশকে একটি আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রয়োজন সুস্থ, শিক্ষিত, মেধাবী ও কর্মক্ষম জনশক্তি। কিন্তু মাদকের হিংস্র থাবায় এই জনশক্তির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আজ মাদকাসক্ত। আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি মাদক নির্মূলে প্রয়োজন সচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। সকলের সমন্বিত প্রয়াসেই সম্ভব মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

দিবসটি উপলক্ষ্যে সারা দেশে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মাদকবিরোধী রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে এসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ২১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্বলিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং অধিদপ্তরের কাযক্রম নিয়ে স্যুভেনির প্রকাশ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্যুভেনির এর মোড়ক উম্মোচন করেন। দিবসের প্রতিপাদ্য বিটিআরসির সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের মেসেজের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে মাদক সচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ক স্ক্রল নিউজ, টিভিসি ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

অপরদিকে মাদকবিরোধী স্লোগান ও দিবসের প্রতিপাদ্য লেখা ফেস্টুন, বিলবোর্ড দিয়ে ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো সুসজ্জিত করা হয়েছে। দেশের সকল সরকারি ও লাইসেন্স প্রাপ্ত বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পালিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মাদকবিরোধী রলি, আলোচনা সভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন জনবহুল স্থানে মাদকবিরোধী লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ, মাদকবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গুরত্বপূর্ণ স্থানে মাদকবিরোধী শর্টফিল্ম প্রদর্শন ইত্যাদি।

আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস উপলক্ষে  বিশেষ র‍্যালী।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *