নিজস্ব প্রতিবেদক : দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: (এমসিসিএইচএসএল) এ চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন,সেক্রেটারী ইমানুয়েল বাপ্পি মন্ডল,পরিচালক অর্থ ও প্রশাসন বাদল বি সিমস্যাং ও সদস্য কল্পনা মাারিয়া ফলিয়া চতুর্থ বারের মত(এক্সটেনশন বিবেচনা করলে পঞ্চম বারের মত) অবৈধভাবে পদ দখল করে আছেন।তাদের বেআইনীভাবে পদ দখলে রাখা চ্যালেঞ্জ করে এমসিসিএইচএসএল এর সদস্য অমুল্য লরেন্স পেরেরা এবং রিচার্ড কল্লোল প্যারিস কর্তৃক দায়েরকৃত রীট পিটিশনের (পিটিশন নং-৫৫৯১-৪/৬/২০২৩) প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট এই আইন বহির্ভূত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধকের প্রতি আদেশ প্রদান করেন।
হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ আগষ্ট সকাল ১১ ঘটিকায় শুনানীর আয়োজন করেছে সমবায় অধিদপ্তর। সমবায় অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক শেখ কামাল হোসেন স¦াক্ষরিত এক পত্রে(স¥ারক নং-৯৩১(৬)৩০/৭/২০২৩) উক্ত শুনানীতে বাদি-বিবাদিগণ-কে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
এদিকে সমবায় অধিদপ্তরের শুনানীতে পূর্বের মত পক্ষপাতিত্বের আশংকা করছেন সমিতির সদস্যগন।
বিবাদিগণ আর্থিকভাবে শক্তিশালী এবং শুনানী গ্রহনকারি কর্মকর্তার সাথে রয়েছে বিবাদিগণের ঘনিষ্ট যোগাযোগ। সম্প্রতি ঢাকা বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক শেখ কামাল হোসেন-কে বিবাদিগণ দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি’র অফিসে এনে বিনা কারনে সংবর্ধনা প্রদান করেছে।পূর্ববর্তি ঢাকা বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক রিয়াজুল কবিরও একই বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, সমবায় আইন ২০০১(সংশোধিত ২০১৩) এর ১৮(৮) ধারায় বলা হয়েছে”ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে একাধিক্রমে তিনটি মেয়াদ পূর্ণ করিয়াছেন এমন কোন সদস্য উক্ত মেয়াদের অব্যবহিত পরবর্তি একটি মেয়াদের নির্বাচনে প্রার্থী হইবার যোগ্য হইবেন না”। অথচ সমবায়ের মাফিয়া খ্যাত দর্জি আগষ্টিন পিউরিফিকেশন দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:(এমসিসিএইচএসএল) এ অবৈধভাবে চতুর্থ মেয়াদে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে আছেন।
তৃতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পর করোনার অজুহাত দেখিয়ে দুই দফায় লবিং করে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ৬ মাস ক্ষমতা এক্সটেনশন করেছেন। এক্সটেনশন বিবেচনায় নিলে তিনি পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতা দখল করে আছেন। এবিষয়ে সমবায় অধিদপ্তরের ২০২০-২১ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত দেখানো চেয়ারম্যান সহ ৪ জনকে অপসারনের নির্দেশনা দেয়া হয় এবং তাদের স্বাক্ষরে ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা বন্ধ করতে বলা হয়।কিন্ত আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে আগষ্টিন পিউরিফিকেশন দম্ভের সাথে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে রেখেছেন।
উল্লেখ্য সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টের পর্যবেক্ষণ বা মতামত ৪৯ অথবা ৮৩ ধারার তদন্তের সমান্তরাল।
সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক ও অডিট দল প্রধান মোছা: নূর-ই-জান্নাত এর নেতৃত্বে সম্পাদিত অডিট রিপোর্টের(২০২০-২০২১ অর্থবছর) ১৫ নং পৃষ্ঠায় পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- বর্তমান কমিটির পূর্বের কমিটির মেয়াদ ২৯/১০/২০২১ পর্যন্ত বলবৎ ছিল। কভিড মহামারির অজুহাত দেখিয়ে ব্যববস্থাপনা কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ৪ ধারা হতে অব্যাহতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে(আদেশ নং-৪৭.৬১.০০০০.০৩২.০৬.০৮৬.১৬-৩৬৮ তারিখ ১৪/৯/২০২১)৪ ধারাা হতে অব্যাহতি পেয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ ১২০ দিন বৃদ্ধি পায়। সে মোতাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ ২৮/২/২০২২ তারিখ পর্যন্ত বহাল থাকে।
পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়,গত ১৯/২/২০২২ তারিখের নির্বাচনে চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন,সেক্রেটারী ইমানুয়েল বাপ্পি মন্ডল,পরিচালক অর্থ ও প্রশাসন বাদল বি সিমস্যাং ও সদস্য কল্পনা মাারিয়া ফলিয়া চতুর্থ বারের মত নির্বাচিত হয়েছেন।
উক্ত চার ব্যক্তি সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ১৮(৮) ধারা এবং জারিকৃত সংশ্লিষ্ট তফসিলের নির্বাচনী জ্ঞাতব্য বিষয়ের ৬ নং শর্ত অনুযায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অযোগ্য।দ্রুত তাদের ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে অপসারন করার লক্ষ্যে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ধারা ২২(১) অথবা সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ এর ৩৮ ও ৩৯ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। পরবর্তিতে উক্ত চারটি শুন্য পদে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ধারা ২০(১) অনুসরন করে যোগ্য সদস্যকে কো-অপ্ট করা যেতে পারে।
আবার সমিতির উপ-আইন অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব সভাপতি,সেক্রেটাারি এবং ম্যােেনজারের যেকোন দুই জনের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়ে থাকে। যেহেতু সভাপতি এবং সেক্রেটারি দুই জনই সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ১৮(৮) ধারা মোতাবেক ব্যবসস্থাপনা কমিটির সদস্য হওয়ার অযোগ্য,সেহেতু তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও ব্যাংক হিসাব পরিচালনা নৈতিক ও আর্থিক বিধির পরিপন্থি।
পর্যবেক্ষণ অন্তে সুপারিশে বলা হয় – সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ১৮(৮) ধারা মোতাবেক অযোগ্য ব্যক্তিবর্গকে দ্রুত একই আইনের ধারা ২২(১) অথবা সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ এর ৩৮ ও ৩৯ বিধি মোতাবেক অপসারন করে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ধারা ২০(১) অনুসরন করে যোগ্য সদস্যকে কো-অপ্ট করার পরামর্শ দেয়া হলো। একই সাথে ব্যাংক হিসাব পরিচালনার স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে সহ-সভাপতিকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ দেয়া হল।
সমবায় বিশেষজ্ঞদের মতে বিদ্যমান সমবায় আইন ও বিধিমালা অনুসারে ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সদস্যই একটানা তিন মেয়াদ দায়িত্ব পালনের পর;এক মেয়াদ বিরতি দেয়া ব্যতিরেকে নির্বাচনে অংশগ্রহনে যোগ্য হবেন না। সমবায় আইন ২০১৩ সালে সংশোধনকালে চলমান ব্যবস্থাপনা কমিটি একটি মেয়াদ বিবেচিত হবে। ২০১৩ সালে সংশোধনের পূর্বে ১২ সালে ব্যবস্থাপনা
কমিটি গঠিত হলে;উক্ত মেয়াদ তিন মেয়াদের মধ্যে পরবে না-এই ধরনের যুক্তি ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। এধরনের অপযুক্তি আইন আদালতকে মিসগাইড করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখলে রাখার অপচেষ্টা মাত্র।
অথচ রহস্যজনক কারনে আজ পর্যন্ত দর্জি আগষ্টিন পিউরিফিকেশন সহ অবৈধ চার জনকে অপসারন করা হয়নি। অডিট রিপোর্টের সুপারিশ,আইন পদদলিত করে দম্ভের সাথে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে লুটপাট করে যাচ্ছেন। এই অবৈধ ক্ষমতা দখলে সহযোগিতা করেছে সমবায় অধিদপ্তরের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা।
গত ১৯/২/২০২২ তারিখের প্রহসনের নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান,সদস্য হিসেবে ছিলেন পরিদর্শক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন ও পরিদর্শক মো: শাকিলুজ্জামান। নেপথ্যে ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের তৎকালিন যুগ্ম নিবন্ধক রিয়াজুল কবির।