নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তরখান থানার মামলা নং-১৬, তারিখ-২১/০৩/২০১৯, ঘটনার সাথে জড়িত এজাহার ভুক্ত আসামী মোঃ আরমান হোসেন (১৯), পিতাঃ মোঃ অহিদ মিয়া,মাতাঃ হায়াতুন নেছা, স্থায়ী সাং- ভোলাকোট, পোঃ দোলখার বাজার,থানাঃ লাঙ্গলকোট,জেলাঃ কুমিল্লা,বর্তমান ঠিকানা- বাসা নং ১৪২/বি,উত্তরখান,বড়বাগ,থানাঃ উত্তরখান,ঢাকা, এবং মোঃ নজরুল ইসলাম (১৯), পিতাঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম, মাতাঃ তাসলিমা বেগম, সাং-শিয়ালউড়ী,পশ্চিমপাড়া, পোঃ হরষপুর,থানাঃ মাধবপুর, জেলাঃ হবিগঞ্জ,বর্তমান ঠিকানা-আটিপাড়া, মিয়া বাড়ীর মোড় (রব্বানী চৌধূরীর টিনসেট বাড়ীর ভাড়াটিয়া) থানাঃ উত্তরখান, ঢাকা, উল্লেখিত আসামিদের গত ৬ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০ টা ১৫ মিনিটের সময় উত্তরখান থানা, ডিএমপি ঢাকা এলাকা হতে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর), ঢাকা এর একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে আটক করে।
মামলার বাদী লাবনী বেগম (৩৫) তার ছোট ভাই মোঃ আল-আমিন (১৯), ছোট বোন মনি বেগম (২৬),সহ উত্তরখান থানায় হাজির হয়ে এজাহার দায়ের করেন যে, তার ছেলে ভিকটিম মোঃ কামরুল হাসান@ হৃদয় (১৬) ঢাকার দক্ষিনখান থানাধীন ফায়দাবাদ ‘‘ দি চাইল্ড ল্যাবরেটরী স্কুল’’এর অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। গত ২১/০৩/২০১৯ সালে তার ছেলে বিকাল অনুমান ৪ টার সময় স্কুল শেষে বাসায় আসে এবং খেলাধুলা করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
উল্লেখিত তারিখ বিকাল অনুমান ৫ টা ৪৫ মিনিটের সময় বাদীর ছেলের বন্ধু সাব্বির ও মেহেদী বাদীর স্বামীর মোবাইলে ফোন করে জানায় যে, বাদীর ছেলে মোঃ কামরুল হাসান@ হৃদয় (১৬) ছুরিকাহত হয়ে মুমুর্ষূ অবস্থায় উত্তরা-আইচি হাসপাতালে আছে। উক্ত সংবাদ পেয়ে বাদী ও তার স্বামী দ্রুত উক্ত আইচি হাসপাতালে গেলে কর্তৃপক্ষ জানান যে, বাদীর ছেলেকে অজ্ঞান অবস্থায় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়া গিয়াছে।
তারা উক্ত হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার বাদীর ছেলে মোঃ কামরুল হাসান@ হৃদয় (১৬)কে মৃত ঘোষনা করেন। বাদীর ছেলের বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, গত ২১/০৩/২০১৯ সালে বিকাল অনুমান ৫ টার সময় তারা উত্তরখান থানাধীন রাজাবাড়ীস্থ বহরেরটেক বাগানে ঘুরাফেরা করার সময় পূর্ব শক্রুতার জের ধরে বাদীর ছেলের পূর্ব পরিচিত আসামী- রাব্বী @ টেলি রাব্বি গ্রুপের ১০/১৫ জন এবং ছোটন @ বিগবস ছোটন গ্রুপের ১০/১২ জন সহ আরো অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন বাদীর ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে বুকের বাম পাশে নীচে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করলে বাদীর ছেলে কামরুল হাসান @ হৃদয় (১৬) ঘটনাস্থলেই গুরুত্বর রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে। পরে ভিকটিমের বন্ধু সাব্বির, মেহেদী, আবিস্কার রানা বাদীর ছেলেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।
উক্ত সংবাদ পেয়ে উত্তরখান থানা পুলিশ উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে বাদী ছেলে হৃদয় এর সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ ময়না তদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
অত্র মামলার এজাহার ভুক্ত আসামীগন গত ২১/৩/১৯ সালে বিকাল অনুমান ৫ টার সময় পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে দলবদ্ধ হয়ে বাদীর ছেলের মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে ধারালো ছুরি দিয়ে বুকের বাম পাশে আঘাত করতঃ মৃত্যু ঘটিয়েছে মর্মে বাদী থানায় ২৩ জন এজাহারনামীয় ও ১০/১২ জন অজ্ঞাত পলাতক আসামীর বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে অফিসার ইনচার্জ উত্তরখান থানা অত্র মামলা রুজু করে নিজেই তদন্তভার গ্রহন করেন।
তিনি নিজেই মামলাটি গত ২৪/০৩/২০১৯ সাল থেকে ২৯/১২/২০২০ সালে পর্যন্ত ১ বছর ৯ মাস তদন্ত করেন। তিনি মামলাটি তদন্তকালে এজাহার নামীয় ১০ জন আসামী এবং তদন্তে প্রাপ্ত ৮ জন আসামী গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোর্টে প্রেরন করেন। ঘটনার সময় ৩ জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ফৌঃ কাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মতে বিজ্ঞ আদালত জবানবন্দি প্রদান করেন।
তিনি তদন্তশেষে এজাহার ভুক্ত ১০ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত ৮ জনসহ মোট ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে উত্তরখান থানার অভিযোগপত্র এবং ৩ জনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন। বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে আদালত তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই, ঢাকাকে আদেশ প্রদান করেন।
পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসআই (নিঃ) মোঃ আশরাফুল আলমকে নিয়োগ করেন। মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী মোঃ আরমান হোসেন (১৯), এবং মোঃ নজরুল ইসলাম (১৯) দ্বয় ঘটনার পর হতে পলাতক হয়।
আসামী গ্রেফতারের জন্যে অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই , বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সার্বিক নির্দেশনায় এবং বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিপিএম-সেবা, পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর নিবিড় তদারকিতে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ ইন্তাজ আলী, এসআই (নিঃ) মোঃ আশরাফুল আলম, এসআই (নিঃ) আশরাফুল ইসলাম, এএসআই(নিঃ) মোঃ আলমগীর হোসেন, কং-১৩৭৩ মোঃ সুজন মিয়া’দের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ টিম উল্লেখিত এজাহার ভুক্ত আসামী মোঃ আরমান হোসেন (১৯), মোঃ নজরুল ইসলাম (১৯)দ্বয়কে গত ৬ আগস্ট রাতে অভিযান পরিচালনা করে ডিএমপি ঢাকার উত্তরখান থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ আরমান হোসেন (১৯), মোঃ নজরুল ইসলাম (১৯)দ্বয় জানান যে, উত্তরখান ও দক্ষিনখান থানা এলাকায় এজাহার ভুক্ত আসামী শাহীন @ ফরেন শাহীন (২৭) ও মুরাদ হোসেন @ রাব্বি @ টেলি রাব্বি (২৪) গং ১৫/২০ জন শিশু কিশোর নিয়ে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে আসছিল।
একই এলাকায় এজাহার ভুক্ত আসামী আক্তারুজ্জামান ছোটন @ বিগবস @ বড় ছোটন (২৬) গং ১০/১৫ জন শিশু কিশোর নিয়ে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের উপর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে ঘটনাস্থল ও আশাপাশ এলাকায় মহড়া দিত বলে জানায়।
উক্ত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অত্র মামলার ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে। মামলাটি পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এ তদন্তাধীন থাকাবস্থায় উক্ত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একাধিক আসামীদের সনাক্তকরণ, নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ সহ গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।