নিষেধাজ্ঞার পরদিনই সচিবালয় এলাকায় অসহনীয় মাত্রায় হর্ন!

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় রাজধানী স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : শব্দের সহনীয় মাত্রা যেখানে ৫০ ডেসিবল, সেখানে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত সচিবালয়ের আশপাশে ১২৪ ডেসিবল মাত্রার শব্দ শোনা যাচ্ছে। যা শব্দদূষণের গ্রহণযোগ্য মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। নিষেধাজ্ঞা শুরুর দিনেই সরেজমিনে দেখা যায় এ চিত্র।
শব্দদূষণ রোধে গত মঙ্গলবার থেকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং রোভার স্কাউটস সদস্যরাও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার পরদিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ে সামনের আব্দুল গণি রোড এবং পাশেই জিরো পয়েন্ট এলাকায় ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার স্বপক্ষে প্রচার-প্রচারণার মধ্যেই শোনা গেছে হর্নের তীব্রতা। সিগন্যাল ছাড়া মাত্রই মোটরসাইকেল, বাস, প্রাইভেটকারসহ অন্য যানবাহনগুলো কে কার আগে যাবে সেজন্য হর্ন বাজিয়ে দেখাচ্ছে দাপট।
জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড় ও সচিবালয় লিংক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ থাকলেও সব রুটেই প্রচার-প্রচারণার মধ্যে হর্ন বাজানো হচ্ছে।
সচিবালয়ের আশপাশে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার পর এসব এলাকায় শব্দের মাত্রা কেমন তা নিয়ে কাজ করছেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক।
একাডেমিক কাজের অংশ হিসেবে ‘সাউন্ড প্রেসার লেভেল মিটার’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র মিলে শব্দের মাত্রা রেকর্ড করছিলেন।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, নির্দেশনা জারির পর শব্দদূষণ কতটুকু বাড়লো বা কমলে তা জানার চেষ্টা করছি। আমরা ১২টি লোকেশনে দেখছি।
‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করার পরে ৫০ ডেসিবল হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সাউন্ড মিটারের সঙ্গে সংযুক্ত হাতে থাকা মোবাইলের অ্যাপস দিয়ে শব্দের মাত্রা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০-৮০ ডেসিবল বা গড়ে ১০০ এর বেশি দেখা যাচ্ছে। অথচ দিনের বেলা শহর এলাকায় সহনীয় মাত্রা ৫০ ডেসিবল এবং রাতে ৪০ ডেসিবল।
নীরব এলাকায় সহনীয় মাত্রার থেকে বেশি শব্দ থাকলে সাধারণ মানুষ, উদ্ভিদ, পশু-পাখির ওপর খারাপ ফল দেবে বলে জানান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান।
গবেষণা সহকারী তৌফিকী এলাহী হোসেন ও হাসিব ইকবাল কানন বলেন, গত কয়েকদিন সকাল থেকে তারা শব্দের মাত্রা পরীক্ষা করছেন। প্রতি সেকেন্ড শব্দের মাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে, যাতে দেখা যাচ্ছে শব্দের মাত্রা অনেক বেশি।
রোভার স্কাউটস সদস্য নুরুজ্জামান সোহেল ও আমিন হোসেন জয় বলেন, বাইক চালক, প্রাইভেটকার চালক ও বাসচালকরা একে অপরকে দোষারোপ করছে। তবে আমরা লিফলেট বিলি করছি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করলে একদিন দূষণ বন্ধ হবে।
লিফলেট বিলির কাজ করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মী মোসলেম উদ্দিন বলেন। তিনি বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার লিফলেট বিলি করবো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, আগামী রোববার (২২ ডিসেম্বর) থেকে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা হবে। আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে।
তিনি বলেন, ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার পর থেকে হর্ন না বাজাতে সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট ও স্টিকার বিলি করছি। দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি, টেলিভিশনে স্ক্রল দিয়েছি। সবারই সচেতনতা বাড়াতে হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *