হাইকোর্টের আদেশ লংঘন করেছেন সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক শেখ কামাল :বাদিকে সমঝোতার প্রস্তাব !

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

সমবায় অধিদপ্তরের আলোচিত ও সমালোচিত যুগ্ম নিবন্ধক শেখ কামাল।


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক :এক রীট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এ বেআইনীভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখা তিন জনের বিষয়ে আইনের নিরিখে এক মাসের মধ্যে নিস্পত্তি করার জন্যে সমবায় অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন হাইকোর্ট। কিন্ত একমাস অতিক্রান্ত হলেও এবিষয়ে কোন নিস্পত্তি করেন নি সমবায় অধিদপ্তর। রীটের বাদি অমুল্য লরেন্স নিস্পত্তি না করার কারন জানতে চেয়ে ১৭/৮/২০২৩ তারিখে যুগ্ম নিবন্ধক বরাবর লিখিত আবেদন পেশ করতে গেলে তার দপ্তর তা গ্রহন করেন নি। তবে তিনি ইমেইল এবং রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন প্রেরন করেছেন।

এবিষয়ে অমুল্য লরেন্স বলেন,উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে একমাসের মধ্যে নিস্পত্তি করেন নি। শেখ কামাল হোসেন বিবাদিদের অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা দীর্ঘায়িত করার জন্যে গড়িমসি করছেন। বিবাদিগণ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন। আপিলের রায়ের জন্যে মূলত: শেখ কামাল হোসেন অপেক্ষা করছেন। এছাড়া ৭/৮/২০২৩ তারিখের শুনানীতে শেখ কামাল হোসেন বিচারক হওয়া সত্ত্বেও আমাকে বিবাদিগণের সাথে সমঝোতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

সূত্রমতে, দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:(এমসিসিএইচএসএল) এ চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন,সেক্রেটারী ইমানুয়েল বাপ্পি মন্ডল,পরিচালক অর্থ ও প্রশাসন বাদল বি সিমস্যাং ও সদস্য কল্পনা মাারিয়া ফলিয়া চতুর্থ বারের মত (এক্সটেনশন বিবেচনা করলে পঞ্চম বারের মত) অবৈধভাবে পদ দখল করে আছেন।তাদের বেআইনীভাবে পদ দখলে রাখা চ্যালেঞ্জ করে এমসিসিএইচএসএল এর সদস্য অমুল্য লরেন্স পেরেরা এবং রিচার্ড কল্লোল প্যারিস কর্তৃক দায়েরকৃত রীট পিটিশনের (পিটিশন নং-৫৫৯১-৪/৬/২০২৩) প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট এই আইন বহির্ভূত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধকের প্রতি আদেশ প্রদান করেন।

মাননীয় হাইকোর্টের আদেশ এর কপি যার কোন প্রকার সম্মান প্রদর্শন করেন নাই যুগ্ম নিবন্ধক শেখ কামাল।

জানাগেছে, সমবায় আইন ২০০১(সংশোধিত ২০১৩) এর ১৮(৮) ধারায় বলা হয়েছে”ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে একাধিক্রমে তিনটি মেয়াদ পূর্ণ করিয়াছেন এমন কোন সদস্য উক্ত মেয়াদের অব্যবহিত পরবর্তি একটি মেয়াদের নির্বাচনে প্রার্থী হইবার যোগ্য হইবেন না”। অথচ সমবায়ের মাফিয়া খ্যাত দর্জি আগষ্টিন পিউরিফিকেশন দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:(এমসিসিএইচএসএল) এ অবৈধভাবে চতুর্থ মেয়াদে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে আছেন। তৃতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পর করোনার অজুহাত দেখিয়ে দুই দফায় লবিং করে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ৬ মাস ক্ষমতা এক্সটেনশন করেছেন। এক্সটেনশন বিবেচনায় নিলে তিনি পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতা দখল করে আছেন। এবিষয়ে সমবায় অধিদপ্তরের ২০২০-২১ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত দেখানো চেয়ারম্যান সহ ৪ জনকে অপসারনের নির্দেশনা দেয়া হয় এবং তাদের স্বাক্ষরে ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা বন্ধ করতে বলা হয়।কিন্ত আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে আগষ্টিন পিউরিফিকেশন দম্ভের সাথে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে রেখেছেন।

উল্লেখ্য সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টের পর্যবেক্ষণ বা মতামত ৪৯ অথবা ৮৩ ধারার তদন্তের সমান্তরাল।
সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক ও অডিট দল প্রধান মোছা: নূর-ই-জান্নাত এর নেতৃত্বে সম্পাদিত অডিট রিপোর্টের(২০২০-২০২১ অর্থবছর) পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ১৯/২/২০২২ তারিখের নির্বাচনে চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন,সেক্রেটারী ইমানুয়েল বাপ্পি মন্ডল, পরিচালক অর্থ ও প্রশাসন বাদল বি সিমস্যাং ও সদস্য কল্পনা মাারিয়া ফলিয়া চতুর্থ বারের মত নির্বাচিত হয়েছেন। উক্ত চার ব্যক্তি সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (২০০২,২০১৩) এর ১৮ (৮) ধারা এবং জারিকৃত সংশ্লিষ্ট তফসিলের নির্বাচনী জ্ঞাতব্য বিষয়ের ৬ নং শর্ত অনুযায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অযোগ্য।দ্রুত তাদের ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে অপসারন করার লক্ষ্যে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ধারা ২২(১) অথবা সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ এর ৩৮ ও ৩৯ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। পরবর্তিতে উক্ত চারটি শুন্য পদে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ধারা ২০(১) অনুসরন করে যোগ্য সদস্যকে কো-অপ্ট করা যেতে পারে।
পর্যবেক্ষণ অন্তে সুপারিশে বলা হয় – সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (২০০২,২০১৩)এর ১৮(৮) ধারা মোতাবেক অযোগ্য ব্যক্তিবর্গকে দ্রুত একই আইনের ধারা ২২(১) অথবা সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ এর ৩৮ ও ৩৯ বিধি মোতাবেক অপসারন করে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ধারা ২০(১) অনুসরন করে যোগ্য সদস্যকে কো-অপ্ট করার পরামর্শ দেয়া হলো। একই সাথে ব্যাংক হিসাব পরিচালনার স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে সহ-সভাপতিকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ দেয়া হল।

জানাগেছে,শেখ কামাল হোসেন গংদের এরকম অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারনে দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:,দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:,ঢাকা এবং দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ(কালব) অনিয়ম দুর্নীতির দুর্গে পরিণত হয়েছে। দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এবং দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ(কালব) এ আইন আদালত লংঘন করে চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে রেখেছেন সমবায়ের মাফিয়া খ্যাত আগষ্টিন পিউরিফিকেশন কে।

শেখ কামালের বরাবর বাদী অমুল্য লরেন্স এর আবেদনের কপি, যা শেখ কামাল ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে গ্রহণ করেন নাই। ফলে বাদী অমুল্য লরেন্স ডাক যোগে শেখ কামাল সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন।

যুগ্ম নিবন্ধক শেখ কামাল হোসেন,অতিরিক্ত নিবন্ধক কাজী মেজবা উদ্দিন আহমেদ, উপ-নিবন্ধক মুহম্মদ মিজানুর রহমান এবং তাদের কালেক্টর বা ক্যাশিয়ার খ্যাত পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন,শাকিলুজ্জামান গং নিয়মিত অবৈধ সুযোগ সুবিধা ও উপহার সামগ্রী উপঢৌকন পাচ্ছেন উপরোক্ত সমিতিগুলো থেকে। যেকারনে সমিতিসমুহের সকল বেআইনী কাজকে আইনের আবহ দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা।প্রতিবাদি সদস্যদের যখন সদস্য পদ বাতিল করার উদ্যেগ নেয় মাফিয়া চক্র তখন সমবায় অধিদপ্তরের উক্ত কর্তাগণ সহায়তা করেন। ফলে খ্রীষ্টান সমাজের উপরোক্ত দু’টি সমিতির প্রতিবাদি,সৎ,সাহসী ও মেধাবীজনদের সদস্যপদ আর অবশিষ্ট নাই। অন্যদিকে উপনিবন্ধক মুহম্মদ মিজানুর রহমান এবং পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন ও শাকিলুজ্জামান দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর ফরমায়েশি অডিট রিপোর্ট তৈরি করে দেন। দুর্নীতির আখড়া উক্ত সমবায় সমিতির অডিট রিপোর্টে আতশ কাচ দিয়ে অনুসন্ধান করলেও দুর্নীতির ছিটেফোটাও পাওয়া যাবে না।ঘুষের ঘষায় অডিট রিপোর্ট পবিত্র হয়ে গেছে।
সমবায় বিশেষজ্ঞদের মতে বিদ্যমান সমবায় আইন ও বিধিমালা অনুসারে ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সদস্যই একটানা তিন মেয়াদ দায়িত্ব পালনের পর;এক মেয়াদ বিরতি দেয়া ব্যতিরেকে নির্বাচনে অংশগ্রহনে যোগ্য হবেন না। সমবায় আইন ২০১৩ সালে সংশোধনকালে চলমান ব্যবস্থাপনা কমিটিও একটি মেয়াদ বিবেচিত হবে। ২০১৩ সালে সংশোধনের পূর্বে ১২ সালে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলে;উক্ত মেয়াদ তিন মেয়াদের মধ্যে পরবে না-এই ধরনের যুক্তি ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। এধরনের অপযুক্তি আইন আদালতকে মিসগাইড করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখলে রাখার অপচেষ্টা মাত্র।
অথচ রহস্যজনক কারনে আজ পর্যন্ত দর্জি আগষ্টিন পিউরিফিকেশন সহ অবৈধ চার জনকে অপসারন করা হয়নি। অডিট রিপোর্টের সুপারিশ,আইন পদদলিত করে দম্ভের সাথে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে লুটপাট করে যাচ্ছেন। এই অবৈধ ক্ষমতা দখলে সহযোগিতা করেছে সমবায় অধিদপ্তরের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা। ১৯/২/২০২২ সালের  প্রহসনের নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন মাসোহারা গ্রহনকারি সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান,সদস্য হিসেবে ছিলেন পরিদর্শক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন ও পরিদর্শক মো: শাকিলুজ্জামান। নেপথ্যে ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের তৎকালিন যুগ্ম নিবন্ধক রিয়াজুল কবির।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *