নিজস্ব প্রতিবেদক : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পাঁচ হাজার বছরের বাঙালির জাতিসত্তার ইতিহাসে বাঙালি কখনো স্বাধীন রাষ্ট্র পায়নি। এই ঘুমন্ত বাঙালিকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতার সংগ্রামের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন, বাঙালিকে স্লোগান শিখিয়েছিলেন । বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাঙালির জন্য জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল শনিবার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম-বার, পিপিএম; অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১), (প্রশাসন) মোঃ কামরুল আহসান, বিপিএম-বার ও অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১), স্পেশাল ব্রাঞ্চ মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম-বার, পিপিএম-বার। মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন সে সময় দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রিত, দেশের আরও ১ কোটির মত মানুষ বাস্তুচ্যুত, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত, দেশে কোন বৈদেশিক মুদ্রা নেই। যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করেছিল তারা তখন দেশের ভিতর বিশৃঙ্খলা শুরু করলো। বঙ্গবন্ধু যখন এসব অপশক্তি মোকাবেলা করে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯.৫৪ শতাংশ। যেটি আজ পর্যন্ত আমরা ছুঁতে পারিনি।
বিশেষ অতিথির বক্ত্যেব্য আইজিপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারাটা জীবন ধরে বাঙালির মুক্তি ও একটি স্বাধীন পতাকার জন্য সংগ্রাম করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতিকে চিরঋণী করে গেছেন।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য চরম লজ্জা ও বেদনার দিন। পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম, হৃদয় বিদারক ও বর্ববরতম এ হত্যাকাণ্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ছাড়াও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ শাহাদত বরণ করেন। জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের সাথে এদিন দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসআই সিদ্দিকুর রহমানও শাহাদত বরণ করেন। আমি তাদের সকলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
আইজিপি আরো বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করার একটা প্রক্রিয়া শুরু হলো। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে জাতির পিতাকে নিয়ে কোন আলোচনা নিষিদ্ধ ছিল। টিভি ও পাঠ্যবই থেকে তাকে উধাও করে দেয়া হলো। পরবর্তী প্রজন্ম যেন বঙ্গবন্ধু, মুক্তযুদ্ধ ও মক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে জানতে না পারে সে জন্য রেডিও/টিভিতে থেকে তার ভাষণ উঠিয়ে দেয়ার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ঘাতকদের সেই চক্রান্ত সফল হয়নি।
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। পৃথিবীতে যতদিন বাঙালি থাকবে, বঙ্গবন্ধু ততদিন থাকবেন। বঙ্গবন্ধু আজীবন যে দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন সেটা ছিল বাঙালির মুক্তি। বাংলার মাটি ও বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর দর্শন জুড়ে মিশে ছিল।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট আমরা বলি কিছু বিপথগামী সৈনিকের কাজ। সেনা আইনে স্পষ্ট লেখা আছে বিশৃংখল কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের কোর্ট মার্শাল হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর দায় মুক্তির অধ্যাদেশ বাতিল করে খুনিদের বিচার করা হয়েছে, কিন্তু ষড়যন্ত্রের বিচার আজও হয়নি।
তিনি আরো বলেন, অনতিবিলম্বে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করা দরকার। তদন্ত কমিশনে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। যাতে করে পৃথিবীর এই নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের পিছনে যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল সেই সম্পর্কে দেশের মানুষ জানতে পারে।
সভাপতির বক্তেব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আগস্ট মাস আমাদের জন্য শোকের মাস, শঙ্কার মাস। আগস্ট মাসেই আমরা আমাদের জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি। এ মাসেই আমরা বাঙালির অনেক গুণীজন হারিয়েছি। আগস্ট মাস এলেই মনে মনে শঙ্কা জাগে একাত্তর সালের পরাজিত পক্ষ আবার কোন অঘটন ঘটায় কিনা। তবে বাংলাদেশ পুলিশ যেকোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। জাতির পিতা আমাদের যে আদর্শ দিয়ে গেছেন সেই আদর্শ বুকে ধারণ করে যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি উন্নয়নের জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন এবং অনেক কিছু বাস্তবায়নও করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই পরিকল্পনা তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে চলেছেন এবং দেশকে উন্নয়নে এক রোল মডেলে পরিণত করেছেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (সদরদপ্তর ও প্রশাসন ) মোঃ তানভীর সালেহীন ইমন পিপিএম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর আগে প্রধান অতিথি শোক দিবস উপলক্ষে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর উদ্ধোধন করেন। অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।