নিজস্ব প্রতিবেদক : ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত টাপেন্টাডল ট্যাবলেটে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে বলে এক অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ মতে অবৈধভাবে কিছু অসাধু চক্র এখনো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত এই টাপেন্টাডল ট্যাবলেট এর উৎপাদন ও বাজারজাত অব্যাহত রেখেছে, যেকারণে যেন শেষ-ই হচ্ছে না নিষিদ্ধ ঘোষিত এই টাপেন্টাডল ট্যাবলেট সহ অন্যান্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ঔষধের মজুদ। যার প্রমাণ পাওয়া যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিয়ত রেকর্ড পরিমান নিষিদ্ধ ঘোষিত এই টাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধার অভিযানের খবরে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে থানা পুলিশ, ডিবি, কোস্ট গার্ড, এপিবিএন, বর্ডর গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি, সিআইডিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ঔষধের ফার্মেসি থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিষিদ্ধ ঘোষিত এই টাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে ।সম্প্রতি রংপুরে ডিবি পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে ৫০০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ ১ জন গ্রেফতার হয়েছে।
শুক্রবার ২৫ আগস্ট, রংপুর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি টিম গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা কালে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত ৫০০ (পাঁচশত) পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ ১ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানাধীন লক্ষীটারি ইউনিয়নের পূর্ব ইচলি সোলার অফিসের সামনে রংপুর-লালমনিরহাটগামী মহাসড়কের উপর দিয়ে যাবার সময় শুক্রবার দুপুর আনুমানিক ১ টা ১৫ মিনিটের সময় রংপুর জেলা ডিবি পুলিশের একটি টিম একটি মোটরসাইকেল তল্লাশি করে মোটরসাইকেলের সিটের নিচে পলিথিন ব্যাগের ভিতর থেকে ৫০০ পিচ ট্যাপেন্টডল উদ্ধার করে। এসময় ১ টি মোটরসাইকেল ও ১টি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যাবসায়ীর নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, মোঃ নাসির হোসেন, পিতা-মোঃ জালাল উদ্দিন, সাং-উত্তর দলোগাম, থানা-কালিগঞ্জ, জেলা-লালমনিরহাট।
রংপুরের ঔষধ ব্যাবসায়ীদের একটি সুত্রের জানায়, গ্রেফতার কৃত আসামি এই মর্মে শিকারোক্তি ও দিয়েছে যে, কথিত কিছু ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধিদের নিকট থেকে সে এই নিষিদ্ধ ঘোষিত টাপেন্টাডল ট্যাবলেট সংগ্রহ করেছে। গ্রেফতার কৃত আসামি আরও জানিয়েছে রাজধানীর মিটফোর্ডের ঔষধের পাইকারী বাজার থেকে এগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। মিটফোর্ডের পাইকারী ঔষধ ব্যাবসায়ীদের কেরানিগঞ্জ, শুভাড্যা এলাকায় মেয়াদ উত্তির্ন ঔষধ তৈরির কাঁচামাল ও ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত টাপেন্টাডল ট্যাবলেট এর বিশাল বিশাল মজুদ করে রেখেছেন মজুদদারেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিটফোর্ডের পাইকারী বাজারের ব্যাবসায়ীদের একটি সুত্রের দাবি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশেই এখনো বন্ধ হয়নি ব্যাথা নাশক এই টাপেন্টাডল ট্যাবলেট এর উৎপাদন ও বাজারজাত। ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত এই টাপেন্টাডল ট্যাবলেট এর অবৈধ একটি বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
ওই সিন্ডিকেটের চাহিদা মাফিক নিষিদ্ধ ঘোষিত টাপেন্টাডল ট্যাবলেট তৈরি করে দিচ্ছে অবৈধ অর্থ লোভী নাম সর্বস্ব কিছু ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক পক্ষ। রাতের বেলায় এসব ঔষধ তৈরি করে ভোর বেলায় ওবার ও পাঠাও রাইডারদের দিয়ে পৌঁছে দেয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। মিটফোর্ডের ওই সুত্রটি আরও জানান, বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাবেক ও বর্তমান কতিপয় নেতারা ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত টাপেন্টাডল ট্যাবলেট সহ অন্যান্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাতের সাথে জড়িত।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টাপেন্টাডল ট্যাবলেট অনেক আগেই মাদক দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে রেকর্ড পরিমান টাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধারও করা হয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে এদেশে লাগেজের মাধ্যমে টাপেন্টাডল ট্যাবলেট প্রবেশ করে। আবার দেশীয় কিছু ঔষধ কোম্পানির মালিক পক্ষ রাতের আঁধারে মাদকের শ্রেণিভুক্ত নামসর্বস্ব ঔষধ কোম্পানির মালিকেরা হুবহু নকল টাপেন্টাডল ট্যাবলেট তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে।এ বিষয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। অচিরেই এসব তথাকথিত ঔষধ কোম্পানি চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা হবে।